নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট করার দাবি জানাল বামফ্রন্ট। এবং তা খারিজ করল রাজ্য সরকার। বামেরা তিন দফায় ভোটের দাবি জানালেও সিপিএমের একাংশ কিন্তু মনে করে, পঞ্চায়েত ভোট এক দিনে হলে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে হিংসার আশঙ্কা কমবে।
সোমবার বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে রাজ্যে যে ক’টি ভোট হয়েছে, তা সবই তিন বা তার বেশি দফায়। এ বার রাজ্যের পঞ্চায়েতে ৫০ হাজারের বেশি আসনে ভোট হবে। বিমানবাবু বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে আমরা ন্যূনতম তিন দফায় ভোট করার দাবি জানাচ্ছি।” তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট করেও ২০০৮ সালে রাজ্যে হিংসার বলি হয়েছিলেন ৫৫ জন। তবে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে হিংসা অনেক কম হয়েছিল।
এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে সব শরিক দলই তিন দফায় ভোট করার প্রস্তাব দেয়। তার পরেই ঠিক হয়, ন্যূনতম তিন দফায় ভোট করার জন্য রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করার দাবি এখনই বামেরা তুলছে না বলেও বিমানবাবু জানান। তিনি বলেন, “সরকার কী চায়, আগে তা দেখি।” প্রসঙ্গত, আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বা মে মাসে পঞ্চায়েত ভোট হবে। বিরোধী বামফ্রন্টই শুধু নয়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনও তিন দফায় ভোট করার পক্ষে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিনেই পঞ্চায়েত ভোট করতে চান। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমও এ দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিমানবাবুর প্রস্তাবে রাজ্য সরকারের সায় নেই। মহাকরণে ববি বলেন, “ফ্রন্ট চেয়ারম্যান অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। সেটা সরকার জানে। ৩৪ বছর বামফ্রন্ট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন উনি এই পরামর্শ দিতে পারতেন!” মন্ত্রীর দাবি, “বাম আমলে কখনও তিন দফা, পাঁচ দফা বা ২৫ দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়নি।” বামেদের দাবিকে কটাক্ষ করে ববি বলেন, “নিজেরা কখনও তিন দফায় ভোট চাইলেন না! নিজের বেলায় আঁটিশুঁটি, পরের বেলায় দাঁত কপাটি!” দাঁত কপাটি বন্ধ করে নিজের চরকায় তেল দেওয়ার পরামর্শও ববি বিমানবাবুকে দেন।
আলিমুদ্দিনে বিমানবাবু বলেন, “২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল তিন দফায়। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোট হয়েছিল তিন দফায়। আর ২০১১ সালে বিধানসভা ভোট হয় ৫ দফায়। রাজ্যে ৫০ হাজারের বেশি বুথ। পঞ্চায়েত ভোটে ৫০ হাজারের বেশি প্রার্থী নির্বাচন করতে মানুষ ভোট দেবেন। সেই কারণেই অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অন্তত তিন দফায় ভোট করার দাবি জানাচ্ছি।” শাসকদলের সন্ত্রাসের জন্যই তাঁরা ওই দাবি তুলছেন জানিয়ে বিমানবাবু বলেন, “তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই বলছেন, বামপন্থীদের মনোনয়ন দিতে দেবেন না। বামপন্থী ছাড়া অন্য বিরোধীদেরও তাঁরা মনোনয়ন দিতে দেবেন না। তাঁরা এক তরফা ভোট করার চেষ্টা করছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এক দিনে ভোট করার বাস্তব পরিস্থিতি বিরাজ করছে না।”
বিমানবাবুর দাবি, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার কথা বুঝতে পরেছে বলেই তিন দফায় ভোট করতে চাইছে।” আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিমানবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে ববি বলেছেন, “সরকার সাফল্যের সঙ্গে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। ওঁরাই আইন-শৃঙ্খলা মানেননি। এখন অপ্রয়োজনীয় পরামর্শের দরকার নেই।”
|