স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত মহিলা কমিশনের
মহিলাদের সুরক্ষায় নেই নিরাপত্তা আধিকারিক
হিলাদের উপরে ঘরে-বাইরে হিংসার নজির বাড়ছে। কিন্তু অভিযোগ, তাতেও বিশেষ ভ্রূক্ষেপ নেই এ রাজ্যের সরকারের। এ কথা মেনে নিয়েই রাজ্যের প্রধানত চারটি জেলায় মহিলা সুরক্ষার প্রশ্নে নতুন পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য মহিলা কমিশন। কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্যের মোট পাঁচটি জেলায় নিরাপত্তা আধিকারিকের পদ ফাঁকা। তাই এই পাঁচটি জেলার চারটিতে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের নিয়োগ করতে চায় তারা। মহিলাদের উপর হিংসা প্রতিরোধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া বলে জানাল কমিশন।
কমিশন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে প্রধানত চারটি জেলার (নদিয়া, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ) প্রতিটি থানায় এক জন করে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী নিয়োগ করবে তারা। কমিশনের এক আধিকারিক জানান, কোনও মহিলা থানায় অভিযোগ জানাতে এলে তাঁকে সাহায্য করবেন ওই কর্মী। কী ভাবে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে, কোন ধারায় এফআইআর করতে হবেতা জানাবেন তিনিই। অভিযোগ জটিল বা গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে মহিলা কমিশনের দফতরে পাঠিয়ে দেবেন ওই কর্মী। ‘সংযোগ’ নামের অপর একটি দল কাজ করবে অভিযোগগুলি নেওয়ার জন্য। কমিশন গুরুত্ব বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। নদিয়ায় এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের কাজ প্রথম শুরু করা হবে বলে জানালেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়।
পারিবারিক হিংসা আইন অনুযায়ী মহিলাদের অভিযোগ নিতে সব জেলাশাসকের অধীনে এক জন করে নিরাপত্তা আধিকারিক থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু নদিয়া, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ ও দার্জিলিঙে নিরাপত্তা আধিকারিকের পদ ফাঁকা। মালদহে নিরাপত্তা আধিকারিক ইস্তফা দিয়েছেন।
২০০৫-এর ‘প্রোটেকশন অফ ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, নিরাপত্তা আধিকারিকদের কাজ ঘরোয়া হিংসার শিকার মহিলাদের আনা অভিযোগ জেলাশাসকের দফতরে জমা করা। সরকারি সূত্রের খবর, পারিবারিক জীবনে কোনও মহিলা নির্যাতিত হলে তিনি প্রথমে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যান। থানা অভিযোগগুলি নিজেরা না দেখে অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীকে নিরাপত্তা আধিকারিকের কাছে পাঠায়। ওই আধিকারিকের কাজ মহিলাকে আইনি পরামর্শ-সহ নানা ভাবে সাহায্য করা। থানা যাতে অভিযোগটি নথিভুক্ত করে ব্যবস্থা নেয়, সেই ব্যাপারে ওই আধিকারিকের বিশেষ দায়িত্ব নেওয়ার কথা। নিরাপত্তা আধিকারিকরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনুষ্ঠান করেন। এই সময়ও তাঁরা ঘরোয়া হিংসার শিকার হয়েছেন এমন মহিলাদের সংস্পর্শে আসেন। তখনও অভিযোগ জমা নেন তাঁরা। কিন্তু পাঁচ জেলায় সেই দায়িত্ব পালনের লোক নেই। তিন জেলায় ওই পদ এক বছরের বেশি ধরে খালি। সরকারি সূত্রের খবর, কলকাতা, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ জেলা আয়তনে অন্যদের তুলনায় বড়। তাই এই জেলাগুলিতে থানার সংখ্যাও বেশি। কোনও জেলায় থানার সংখ্যা ২৫-এর বেশি হলে দু’জন করে নিরাপত্তা আধিকারিক থাকার কথা। সেখানে বর্ধমানে মাত্র এক জন আছেন। মুর্শিদাবাদে কেউ নেই।
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, নিরাপত্তা আধিকারিক ও তার সহযোগী কর্মী পদে লোক না থাকায় সমস্যায় বেশি পড়ছেন গরিব ঘরের মহিলারা। অবস্থাপন্ন বাড়িতে মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নির্যাতিত হলে আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গরিব বাড়ির মহিলাদের সরকারি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পদাধিকারিক ছাড়া আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ দেওয়ার কেউ থাকে না। ফলে তাঁদের কোনও সুরাহা হয় না। মামলাগুলো আদালতে বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। পাঁচটি জেলায় নিরাপত্তা আধিকারিকের পদটি খালি কেন? রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ব্যাখ্যা, “নিরাপত্তা আধিকারিক নিয়োগ করা হয় চুক্তির ভিত্তিতে। তিনটি জেলায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় পদগুলি ফাঁকা পড়ে।” তাঁর সাফাই, “নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অনেক জেলায় নিরাপত্তা আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছে। বাম আমলে তো সমাজকল্যাণ দফতরটির অস্তিত্ব ছিল বলেই মনে হয় না।”
অথচ, পারিবারিক ক্ষেত্রে মহিলা-নির্যাতনের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে বলে দাবি রাজ্য মহিলা কমিশনের। তাদের দাবি, ২০১১ সালে কমিশনের কাছে ১০৭টি পারিবারিক হিংসার অভিযোগ জমা পড়ে। ২০১২ সালে সংখ্যাটা তিন গুণ বেড়ে ৩৩১। এই তথ্য গোটা রাজ্যের নয়। কমিশনের বক্তব্য, কলকাতা ও আশপাশের জেলা থেকেই মূলত অভিযোগগুলি এসেছে। নিরাপত্তা আধিকারিকদের তরফেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের একাংশের অভিমত, সহযোগী কর্মী না থাকায় একা পুরো কাজটা করা সম্ভব হয় না।
সরকারি কাঠামোর এই সব সমস্যা এড়াতেই এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, “নিরাপত্তা আধিকারিক যে জেলায় নেই সেখানে এই স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন। এদের অনেকেই সমাজকর্মী। তাই নিয়মিত বেতন দিতে হবে না। তাছাড়াও অনেকে মহিলাই নিরাপত্তা অধিকারিকদের অফিস চেনেন না। সে জন্যই প্রতি থানায় লোক নিয়োগ করছি আমরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.