নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিতর্ক অব্যাহত রেখেই পরিষদীয় সচিব (পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি) নিয়োগ করার কাজ শুরু করে দিল রাজ্য সরকার। প্রথম দফায় ১৩ জন তৃণমূল বিধায়ক বৃহস্পতিবার পরিষদীয় সচিব পদে শপথ নেবেন। তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করানোর কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত বিলে সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের সময় এমন সচিব নিয়োগের পিছনে খরচ করার যৌক্তিকতা এবং সাংবিধানিক জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছে না বিরোধী শিবির। এমনকী, প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থার কথাও ভাবছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার মহাকরণে বলেছেন, “১৩ জন বিধায়ককে পরিষদীয় সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা ২৪ জানুয়ারি বেলা দেড়টা নাগাদ শপথ নেবেন।” আপাতত যে ১৩ জন বিধায়ক পরিষদীয় সচিব হিসাবে নিযুক্ত হচ্ছেন, তাঁরা হলেন: ইটাহারের অমল আচার্য, হরিরামপুরের বিপ্লব মিত্র, নাটাবাড়ির রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, ওন্দার অরূপকুমার খান, বজবজের অশোক দেব, ডেবরার রাধাকান্ত মাইতি, ধনেখালির অসীমা পাত্র, কালিগঞ্জের নাসিরুদ্দিন আহমেদ, মানবাজারের সন্ধ্যারানি টুডু, রামপুরহাটের আশিস বন্দোপাধ্যায়, বসিরহাট (উত্তর)-এর এটিএম আবদুল্লা এবং কলকাতার শ্যামপুকুরের শশী পাঁজা ও বরাহনগরের তাপস রায়। এঁরা সকলেই তৃণমূল বিধায়ক। রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রী পিছু এক জন করে পরিষদীয় সচিব নিয়োগ করার সংস্থান রাজ্য সরকারের হাতে রয়েছে। ফলে, ভবিষ্যতে সচিবের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করা হচ্ছে না সরকারি সূত্রে।
|

খরচের বহর |
মাসিক বেতন*
৭৫০০ টাকা |
দৈনিক ভাতা
১ হাজার টাকা |
অন্য সুবিধা
গ্যাসের খরচ, ফোন-বিদ্যুৎ-খবরের কাগজ বিল, লালবাতি গাড়ি
ও জ্বালানি, এক জন সঙ্গী-সহ বিমান ও ট্রেন ভাড়া |
কত জন পরিষদীয় সচিব
এখন ১৩ জন |
সর্বোচ্চ নেওয়া যাবে
৪৪ জন |
কী কাজ
মুখ্যমন্ত্রী যা নির্দেশ দেবেন |
* প্রতিমন্ত্রী/ উপমন্ত্রীর সমান |
|
বিধানসভার গত অধিবেশনে পাশ-হওয়া ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, স্যালারি, অ্যালাওয়েন্সেস অ্যান্ড মিসলেনিয়াস প্রভিশনস) বিল’ অনুযায়ী, পরিষদীয় সচিবেরা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও বেতন পাবেন। পূর্ণমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পরিষদীয় সচিব যথাক্রমে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সমকক্ষ বলে বিবেচিত হবেন। রাজ্যপালের সইয়ের পরে ওই বিলই এখন আইনে পরিণত হয়েছে। তবে তাঁদের দফতর বিধানসভা না মহাকরণ কোথায় হবে, সরকারি ভাবে এই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য এখনও নবনিযুক্ত পরিষদীয় সচিব তথা বিধায়কদের হাতে পৌঁছয়নি।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের ফলে এক দিকে যেমন অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে, তেমনই রাজ্যের কোষাগারে অহেতুক বোঝা বাড়বে। বিলটিকে আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া আটকানোর দাবি জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বিরোধী বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল। তাদের অভিযোগ ছিল, ওই বিল আইন হিসাবে কার্যকর হলে সংবিধানের ১৬৪ (১এ) ধারাকে লঙ্ঘন করবে। একই যুক্তি দেখিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলও। রাজ্যপালের সম্মতি পেয়ে রাজ্য সরকার পরিষদীয় সচিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “আমরা মনে করি, এতে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।” তবে সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যপাল বিলে সম্মতি দিয়ে দেওয়ার পরে এ বার আইনি পদক্ষেপের কথাই বিবেচনা করতে হবে।
কংগ্রেস অবশ্য ফের রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে। জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির সেরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য আপাতত দিল্লিতে। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটা সভায় কেন্দ্রীয় সরকারের মুণ্ডপাত করে বলছেন, দিল্লি টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু এই অবস্থায় প্রথম দফায় ১৩ জন বিধায়ককে পরিষদীয় সচিব করার অর্থ, রাজ্যের হাতে যথেষ্ট টাকা আছে! তা হলে মুখ্যমন্ত্রী সর্বসমক্ষে বলুন, তিনি অর্থসঙ্কট নিয়ে মিথ্যা বলছেন! কলকাতায় ফিরে আবার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে আবেদন জানাব, এই অবস্থা ঠেকাতে তিনি হস্তক্ষেপ করুন।” রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে সাংবিধানিক জটিলতা হবে বলে প্রদীপবাবুরাও
মনে করছেন।
বিল পাশ করানোর সময়েই সরকার ব্যাখ্যা দিয়েছিল, রাজ্যে আইএএস-আইপিএস এবং আধিকারিকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই উন্নয়নমূলক কাজে গতি আনতে নতুন পরিষদীয় সচিবের পদ তৈরি করা হচ্ছে। পরিষদীয় মন্ত্রী তখনই দাবি করেছিলেন, এই ব্যবস্থা নতুন কিছু নয়। তবে বিধানসভা বিশেষজ্ঞ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ব্রিটিশ আমলে যখন মুখ্যমন্ত্রী-সহ ১১ জনের মন্ত্রিসভা ছিল, তখন কয়েক জন বিধায়ককে পরিষদীয় সচিব হিসাবে বিধানসভায় দায়িত্ব পালন করতে হত। কিন্তু স্বাধীনতার পরে কোনও রাজ্য সরকারের আমলেই এই ব্যবস্থা চালু ছিল না। |