সাড়ে তিন ঘণ্টার বক্তব্য
আয়লা নিয়ে শুধু বরাদ্দের উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
মি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা কাটেনি। ফলে, আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের নদীবাঁধ নির্মাণের কাজও সে ভাবে শুরু হয়নি।
অথচ, সোমবার ক্যানিংয়ে (সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার) একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেও ওই নদীবাঁধ নির্মাণের প্রসঙ্গ প্রায় ছুঁলেনই না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি অনুষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বক্তৃতায় তিনি আগামী ছ’মাসের মধ্যে ক্যানিংয়ে স্টেডিয়াম গড়ার আশ্বাস দিলেও আয়লা প্রসঙ্গে শুধু বরাদ্দের উল্লেখটুকু করে চলে গিয়েছেন অন্য প্রসঙ্গে। এ নিয়ে আয়লা-বিধ্বস্তদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। দীর্ঘ বক্তৃতায় ক্লান্ত দেখিয়েছে উপস্থিত শ্রোতাদের অনেককেও।
২০০৯ সালে আয়লার তাণ্ডবে সুন্দরবন এলাকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক লক্ষ মানুষ গৃহহীন হন। তাঁদের মধ্যে এখনও অনেককে রাত কাটাতে হয় পলিথিনের ছাউনির নীচে। পরিবেশবিদরা বারবার বলেছেন, ফের কোনও আয়লার মতো ঝড়ের হাত থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে স্থায়ী নদীবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। রাজ্য এ নিয়ে উদ্যোগী হলেও মিলছে না বাঁধের জমি। বেশির ভাগ জায়গাতেই জমির মালিক অতিরিক্ত দাম চাইছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ভেবেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সোমবার সুন্দরবনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট দিশা দেখাবেন। কিন্তু তিনি শুধু বলেন, “আয়লা বিধ্বস্তদের সাহায্য এবং উন্নয়নের জন্য ৬৭০ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছি।”
টাকা বরাদ্দ হলেও তা কি আদৌ সব ক্ষতিগ্রস্তের হাতে পৌঁছবে? সরকারি টাকা বিলি নিয়ে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরবন এলাকার ১১৮টি গ্রামে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কাজ করছে, এমন একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “আমাদের এলাকায় অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ কোনও সাহায্যই পাননি।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “দুর্নীতির নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সুন্দরবনের নদীবাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যার কথা রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে জানানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০ শতাংশ কাজ হয়েছে।”
ক্যানিংয়ে মমতা। —নিজস্ব চিত্র
ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে ‘সুন্দরবন কাপ’ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় সামিল হওয়া ৩১৪টি দলকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তা ছাড়াও ছিল নানা পুরস্কার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশ বসু, গৌতম সরকারের মতো প্রাক্তন ফুটবলাররা। তাঁদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
তাঁর বিভিন্ন জেলা সফরের রীতি মেনে এ দিন ক্যানিংয়েও একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, “কয়েক দিন আগে আমাদের নির্বাচনী ইস্তাহার উল্টে-পাল্টে দেখছিলাম। সেখানে পাঁচ বছরে যে কাজ করব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, দেখলাম দেড় বছরেই সব কিছু করে ফেলেছি।” রাজ্যের সব মানুষের মাথায় ছাদের (কংক্রিটের না হলেও টিন বা টালির) ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বক্তব্যে যথারীতি মমতার গলায় শোনা গিয়েছে সিপিএমের সমালোচনা। তিনি বলেন, “সিপিএমই রাজ্যকে দেউলিয়া করে গিয়েছে। এখন আমার এমন অবস্থা, মরব নাকি দড়ি-কলসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব বুঝতে পারছি না। এই রাজ্যে জন্মানোর জন্য নিজেকে ধিক্কার জানাই।” সরকারি মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ ভাবে রাজনৈতিক কথা বলার জন্য তিনি যে সমালোচিত হতে পারেন, তা আগেই আন্দাজ করে মমতা একই সঙ্গে বলেন, “আমি সাধারণত সরকারি মঞ্চে রাজনীতির কথা বলি না। কিন্তু রাজনৈতিক কথা হয়ে গেলেও না বলে পারছি না। কারণ, এই কথাগুলির সঙ্গে সরকারের যোগ রয়েছে।”
দুপুরে অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে পুলিশের হিসেবে মাঠে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ বক্তৃতার মধ্যেই ভিড় কমতে শুরু করে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজির খেলোয়াড়রা মাঝপথে খাবারের দাবিতে বিক্ষোভও দেখান। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করেন। সন্ধ্যায়, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে মাঠ প্রায় ফাঁকা হয়ে আসে। দ্রুত ফেরার তাড়ায় কুলতলির এক প্রৌঢ় বলেই ফেলেন, “বাড়ি বহু দূরে। যেতে অনেক সময় লাগবে। অনুষ্ঠানটা একটু ছোট হলে ভাল হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.