রঙিন পোশাক কিংবা মোবাইল ব্যবহারের উপরে আগেই ফতোয়া দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের গ্রামের মাতব্বরেরা।
এ রাজ্যের মাতব্বররেরা অবশ্য ততটা কঠোর হচ্ছেন না। ‘বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক’ রাখায় ‘নীতি পুলিশ’এর দায়িত্ব নিল নদিয়ার হুদাচাপড়া গ্রামের বাসিন্দারা। বাঁশ-পিটুনির সঙ্গে মাথার চুল কেটে এক মহিলাকে মারধরের পাশাপাশি ঝুলিয়ে দিল ফতোয়া, গ্রামের অন্য কোনও মহিলা এমন কাজ করলে তারও এ ‘শাস্তি’ বাঁধা।
গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে সর্ম্পক রাখায় সোমবার ওই মহিলাকে তাঁর কিশোর পুত্রের সামনেই বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে, মাথার চুল কেটে ‘শাস্তি’ দিল হুদাচাপরার একাংশ। সাত সকালেই গ্রামের জনবহুল তে-মাথায় ঘন্টা দেড়েক ধরে চলল জনতার শাসন। তাতে গ্রামের কেউই বাধা দেওয়ার সাহস দেখাননি।
ওই মহিলা বলেন, “বাড়ি থেকে মারধর করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের তে-মাথার মোড়ে। সেখানে চুল কেটে বাঁশ পেটা করার সময়ে আমার ছেলেটা বাধা দিতে গিয়েছিল। ওকেও পেটাল গ্রামের কয়েকজন।” এ ব্যাপারে পুলিশে নালিশ করলে ‘খুন’ করে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
কেন এই শাস্তি? |
বছর দেড়েক আগে জলে ডুবে মারা যান ওই মহিলার স্বামী। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। কিছু দিন ধরে তাঁর সঙ্গে গ্রামেরই এক বিবাহিত যুবকের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কাজের খোঁজে তিনি গুজরাত গেলে ওই মহিলাও তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন। ছেলেকে রেখে গিয়েছিলেন এক পড়শির বাড়িতে। রবিবার সেখানেই এসেছিলেন ছেলেকে নিয়ে যেতে।
ওই মহিলা গ্রামে ফিরেছেন, সোমবার সকালে এ খবর রটতেই ওই বিবাহিত যুবকের পরিবার এবং স্থানীয় মহিলারা চেপে ধরেন ওই মহিলাকে। তারপর টেনে হিঁচড়ে গ্রামের মোড়ে নিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময়ে গ্রামের মাতব্বরেরাও জুটে যান। মদত দিয়ে তাঁরা বলেন, “ছাড়াছাড়ি নয়, এর একটা বিহিত চাই। এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে গ্রামে অন্য কোনও মহিলা এমন কাজ করতে সাহস না পায়।” এরপরেই কেটে নেওয়া হয় তাঁর চুল।
ওই মহিলা অবশ্য বলেন, “ওই যুবকের সঙ্গে আমার পুরনো সম্পর্ক। সাত মাস আগে আমরা রেজিস্ট্রি করে বিয়েও করেছি। কিছুদিন হল গুজরাতে বসবাস শুরু করেছি। ছেলে এখানে একা থাকে। ওকেই নিতে এসেছিলাম। পুলিশে জানাতেও ভরসা পাচ্ছি না। বলছে, খুন করে ফেলবে।” নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র অবশ্য বলেন, “কি ঘটেছে না জেনে মন্তব্য করব না। তবে নিশ্চয় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
এ দিকে, বিবাহিত ওই যুবকের প্রথম-পরিবার এখনও হুদাচাপরা গ্রামেই থাকেন। প্রথম স্ত্রীর অভিযোগ, “স্বামী চলে যাওয়ায় লজ্জায় মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। সংসার আর টানতে পারছি না। ওই মহিলা ফিরেছে শুনে আমরা মাথা ঠিক রাখতে পারিনি।” ওই যুবকের ভাইও বলেন, “ওই মহিলা দাদার সংসার ভেঙেছে। ভাইপো-ভাইঝিকে নিয়ে বৌদি খুব কষ্টে আছেন। এত কিছুর পরেও মাথা ঠিক রাখা যায়?” তাঁরা অবশ্য মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। বেওলা-গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের জয়ন্ত সরকারের বাড়ির কাছেই এ দিনের ঘটনা। জয়ন্তবাবুর সাফাই, “আমি চাষের কাজে মাঠে ছিলাম। আমি থাকলে এ দিনের ঘটনা ঘটতে দিতাম না।” |