|
|
|
|
ধৃতকে সাংবাদিক বৈঠকে এনে বিপাকে পুলিশ সুপার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
কদিন আগে বেলপাহাড়ির সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীকে সার নিয়ে প্রশ্ন করায় স্থানীয় যুবক শিলাদিত্য চৌধুরীকে মাওবাদী সাজানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ বার পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীনই প্রতিবাদে সরব হলেন মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য সন্দেহে ধৃত এক ব্যক্তি। চেঁচিয়ে উঠে বললেন, “আমি মাওবাদী নই। আমি কোনও স্কোয়াডেও যুক্ত নই। আমি ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর দীর্ঘ দিনের কর্মী। আমি চাষাবাদ করি।”
আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে থাকা অভিজিৎ মাহাতো নামে ওই যুবককে সোমবার দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির করে অন্য বিতর্কেও জড়িয়েছেন ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ। কারণ নিয়মমাফিক পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনও অভিযুক্তকে এই ভাবে প্রকাশ্য বৈঠকে হাজির করানো যায় না। ঝাড়গ্রাম প্লিডার্স বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অশ্বিনী মণ্ডল বলেন, “কোনও অবস্থাতেই হেফাজতে থাকা কোনও অভিযুক্তকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক বা প্রকাশ্য বৈঠক করা যায় না। এতে মামলার স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। এ দিন এসপি আদালতের নির্দেশকেই কার্যত লঙ্ঘন করেছেন।” অভিজিৎবাবুর আইনজীবী সুমন সেনেরও বক্তব্য বলেন, “একমাত্র তদন্তের স্বার্থেই হেফাজতে থাকা অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় অথবা কোথাও নিয়ে যাওয়া যায়। বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।” |
|
এসপি অফিসে ধৃত অভিজিৎ মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র। |
ধৃত ব্যক্তি মুখ খোলায় তড়িঘড়ি সাংবাদিকদের উদ্দেশে ভারতীদেবী বলেন, “পুলিশি হেফাজতে থাকা অভিযুক্তের সঙ্গে এ ভাবে কথা বলা যায় না। আপনারা কিন্তু অভিযুক্তের বক্তব্যের অংশটি লিখবেন না, সম্প্রচারও করবেন না।” কিন্তু এ ভাবে পুলিশ হেফাজতে থাকা অভিযুক্তকে সাংবাদিক বৈঠকে আনাই তো বেআইনি? এ ক্ষেত্রে ভারতীদেবীর ব্যাখ্যা, “অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এসপি অফিসে আনা হয়েছিল। তখনই সাংবাদিকরা অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলেন। কোনও সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়নি।” যদিও ঘটনা হল এ দিন সকালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের এসএমএস করে ডেকেছিলেন এসপি নিজে।
পুলিশের দাবি, অভিজিৎ মাহাতো নামে বছর আটচল্লিশের ওই ব্যক্তি মাওবাদী স্কোয়াডের সক্রিয় সদস্য। ধৃতের বাড়ি বিনপুরের ভুরসাতোড়ায়। গত ১৮ জানুয়ারি বিনপুরের শিলদা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিজিৎবাবুকে। রাষ্ট্রদ্রোহ ও কেশপুরের দুই চাদর বিক্রেতাকে অপহরণ করে খুনের পুরনো দু’টি মামলায় অভিযুক্ত করে ১৯ জানুয়ারি তাঁকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। ধৃতকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সেই মেয়াদ ফুরনোর আগেই এ দিন এসপি অফিসে নিজের ঘরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিজিৎবাবুকে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির করেন ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার। ছিলেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুমিত কুমার ও বিনপুর থানার আইসি সুমন চট্টোপাধ্যায়। পুলিশকর্তাদের সামনেই ধৃত ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মাওবাদী নই। আমি ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর দীর্ঘ দিনের কর্মী।” ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদারও বক্তব্য, “অভিজিৎ আমার দলের দীর্ঘদিনের কর্মী। বিরোধী দল করার জন্যই তাঁকে মাওবাদী সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।” |
|
|
|
|
|