|
|
|
|
|
অবসরপ্রাপ্তদের নিয়ে এলে
অন্ধকার
কোনও দিন ঘুচবে না বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য |
|
শহরের ফুটবলপ্রেমীদের মিথ্যে আশ্বাস দিতে চাই না। শুরুতেই তাই একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই। বাংলার ফুটবল ধ্বংসের দোরগোড়ার নিঃশ্বাস ফেলছে।
কোনও ঐতিহ্যশালী পরম্পরার সর্বনাশ করতে হলে তাকে প্রাণে মারতে হয় না। তার চিন্তাভাবনার ডানা ছেঁটে ফেললেই খেলখতম। বাংলার এখন সেই পরিণতি হয়েছে। ভারতীয় ফুটবলের ‘মক্কা’ এখন অবসরপ্রাপ্তদের ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটবলজীবনের সেরা সময়টা অন্য ক্লাবে কাটিয়ে শুধু বৃদ্ধবয়সের জমাপুঞ্জি নিশ্চিত করতে ওডাফা, র্যান্টি কিংবা ইয়াকুবুর মতো ফুটবলাররা বাংলায় আসে। দুর্ভাগ্য হল, সেই ল্যাংড়া ঘোড়াকেই মাথায় তুলে নাচতে থাকি আমরা। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, যে বাংলা থেকে গোয়া, মুম্বই, পুণের মতো ক্লাবেরা একটা সময় ফুটবলার আমদানি করত, সেই বাংলাই এখন বাইরে থেকে ফুটবলার আনছে। ভাগ্যের খেলা কি একেই বলে!
বাংলা ফুটবলের আধমরা অবস্থার জন্য দায়ী কিছু ফুটবল-বোদ্ধা মস্তিষ্ক। যাঁরা কোনও দিন বল-এ পা না দিলেও, ফুটবলের জনক হয়ে মসনদে বসে আছেন। টিম গড়বেন তাঁরা। ফুটবলার তাঁদের পছন্দের। কে কোথায় খেলবে, তাও ঠিক করে দেবেন তাঁরা। এবং সব শেষে কোচ নির্বাচন। যাঁকে জোর-জার করে সেই দল চালানোর জন্য বাধ্য করা হয়। সবচেয়ে অবাক লাগে যে, কোটি কোটি টাকার দল বানাচ্ছে অথচ নিজেদের একটা মাঠ নেই। পেশাদার ডাক্তার, ফিজিও, ফিজিক্যাল ট্রেনার, মনোবিদ কিছুই নেই। ‘গ্রুমিং’ সিস্টেম শূন্য। একটা সময় অ্যাকাডেমি থেকে দীপেন্দু বিশ্বাস, নবি, মেহতাব, সুব্রত পালের মতো ফুটবলাররা বেরিয়েছে। কিন্তু এখন? অ্যাকাডেমিগুলো টাকা রোজগারের কারখানা হয়ে উঠেছে। নিটফল, ভাল ফুটবলারদের আকাল বাড়ছে। বেচারা কোচ রেজাল্ট দেবে কী করে?
ফুটবলকে বাঁচাতে হলে কিন্তু গোটা সিস্টেমটাই বদলাতে হবে। সবার আগে কোচ নির্বাচন। তারপর কোচ বাছবে তার পছন্দের টিম। কর্তাদের ভাবা উচিত, বাড়িতে ছেলেমেয়েদের জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখা হলেও বছরের শেষে তার মূল্যায়ন করা হয়। ফাইনাল রেজাল্টের পরে। তা হলে আই লিগে দু’তিনটে ম্যাচ হারলেই কোচের কাজে নাক গলানো শুরু হয়ে যায় কেন? আমাদের এখানকার কর্তাদের ধৈর্য কম। হাতেনাতে রেজাল্ট চাই। কিন্তু সেটা তো মোরিনহো, গুয়ার্দিওলার মতো কোচেরাও পারবেন না! মনে রাখতে হবে কোচকে পূর্ণ স্বাধীনতা না দিলে ছুটকা-ছাটকা ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আই লিগ জুটবে না।বাংলার ফুটবলকে আরও অন্ধকূপের দিকে ঠেলে দিল ফেডারেশন। ইদানীং কালে মোহনবাগানের শাস্তি নিয়ে যে নাটক করল ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা, তা বাংলা ফুটবলের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিল। ভাবতেই তো অসহ্য লাগছে, মোহনবাগানের মতো ক্লাব আই লিগে টিম তুলে নিল? কলকাতা লিগ খেলবে না হুমকি দিচ্ছে। মোহনবাগান ফুটবল খেলবে না তো কী করবে? ধীরেনদার আমলে এ সব কল্পনা করতে পারতাম না। অবাক হব না যদি টিম তুলে নেওয়ার ঘটনা ফের দেখা যায় বাংলার ক্লাব ফুটবলে। মোহনবাগানের শাস্তি মকুব... ওডাফাকে লোকদেখানো শাস্তি। সঙ্গে জরিমানা। মোহনবাগান মেতে আছে বাইরের জগতেই। ফুটবল খেলবে কখন? |
|
|
|
|
|