নিজস্ব সংবাদদাতা • ধনেখালি |
তৃণমূল কর্মী কাজি নাসিরুদ্দিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার ধনেখালিতে সভা করতে চায় সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় থানা থেকে সে ব্যাপারে অবশ্য অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও নিজেদের দাবিতে অনঢ় এই বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠনটি। প্রয়োজনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য নেতা সজল অধিকারী।
গত শনিবার জয়রামবাটির বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন ওরফে নাসুর সঙ্গে মদনমোহনতলা বাজার এলাকায় বচসা বাধে কয়েক জন পুলিশ কর্মীর। পুলিশের দাবি, ভিড়ে ঠাসা ওই রাস্তায় নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে নিজের সদ্য কেনা গাড়িটি রেখেছিলেন নাসু। পুলিশ গাড়ি সরাতে বলায় তাঁদের মারধর করেন তিনি। এরপরে থানা থেকে আরও পুলিশ এসে নাসুকে আটক করে নিয়ে যায় ধনেখালি থানায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও নাসিরুদ্দিনের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, পুলিশ বেদম পেটাতে পেটাতে নিয়ে যায় ওই তৃণমূল কর্মীকে। অভিযোগ, মারধরের জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই যুবক। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি। ওই ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের উপরে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বাসিন্দা ও তৃণমূলের একাংশ। ইটের ঘায়ে কয়েক জন পুলিশ কর্মী জখম হন। লাঠি, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় পুলিশকে। নামানো হয় র্যাফ।
এই ঘটনার পরে মৃত যুবকের স্ত্রী মনুজা দাবি করেন, ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের উসকানিতেই পুলিশ পিটিয়েছে নাসুকে। তাঁর স্বামী দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন মনুজা। আরও এক ধাপ এগিয়ে মারধরে জড়িত পুলিশ কর্মী-সহ অসীমাদেবীরও শাস্তির দাবি করেন মৃতের স্ত্রী। অসীমাদেবী স্বভাবতই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে কড়া মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি তথা সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তও। তাঁরই ঘনিষ্ঠ হিসাবে স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন নাসু। সিপিএমও ইতিমধ্যে দাবি করেছে, তৃণমূলের দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে ওই যুবককে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও কোথাও কোনও ভাবে মুখ না খোলায় তাঁকে কটাক্ষও করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
সোমবার মৃত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে আসে সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর একটি প্রতিনিধি দল। তাঁরা কথা বলেন মনুজা-সহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। মনুজার দাবি, পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে তাঁর স্বামীকে। পারলৌকিকের সময়ে দেহে আঘাতের চিহ্নও দেখা গিয়েছে।
সজলবাবুরা এ দিন থানাতেও যান। ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত বা সিবিআই তদন্ত দাবি করা হয় সংগঠনের তরফে। ধনেখালি থানার ওসি বরুণ ঘোষ জানিয়ে দেন, তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে অন্য কোনও মন্তব্য করবেন না তিনি। সজলবাবু তাঁকে জানান, আগামী শুক্রবার ধনেখালিতে সভা করতে চান তাঁরা। কিন্তু ওসির বক্তব্য, এলাকা এখনও উত্তপ্ত। এখনই সভা করা ঠিক হবে না। তাঁদের কর্মসূচি দিন কয়েকের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান ওসি। সজলবাবুরা অবশ্য তাতে সম্মত হননি। পরে লিবারেশনের ওই নেতা বলেন, “ওই দিন সভা আমরা করবই। প্রয়োজনে সভার অনুমতির জন্য পুলিশ-প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।” |