সাক্ষাত্কার...
পুরস্কারের জন্য যেন কেউ গবেষণায় না আসেন


পুরস্কার আমাকে দেওয়া হচ্ছে জেনেই খুব অবাক হয়েছিলাম। পুরস্কারদাতা ইউরি মিলনার নিজে ফোন করেছিলেন। অর্থমূল্য ওঁর মুখে শুনে তো আরও এক প্রস্থ বিস্ময়।


হ্যাঁ। পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠানের তরফে বলা হয়েছিল, ওদের ঘোষণার আগে আমি যেন কাউকে কিছু না জানাই। আমি চুপচাপ থাকলে কী হবে, দেখলাম ব্যাঙ্ক থেকে খবরটা রটল। অবশ্য সেটা মিডিয়া পর্যন্ত পৌঁছোয়নি।


হ্যাঁ, এটা নিয়ে আমাদের ইনস্টিটিউটেও বেশ মজা-মশকরা হয়েছিল। মানে, এটা ঠিক কী? অপেশাদারিত্ব, না-কি অতি-পেশাদারিত্ব? ম্যানেজার কিন্তু গোপনীয়তা ভেঙেছিলেন ব্যাঙ্কের লাভের কথা মাথায় রেখে।


নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয় বড় মাপের গবেষণার জন্য। মানে, আবিষ্কারের জন্য। আবিষ্কার দু’রকম। তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক। সাফল্য যদি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে হয়, তা হলে তা বার বার পরীক্ষা করে দেখা হয়। এটা বিচার করতে যে, সাফল্যের দাবি ঠিক না ভুল। যিনি প্রথম সাফল্যের দাবি জানাচ্ছেন, তিনি যা-ই বলুন না কেন, তাঁর দাবি অন্যদের পরীক্ষায় সত্যি প্রমাণিত না হলে তাঁকে কখনও নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয় না। তেমনই ব্যাপার তাত্ত্বিক গবেষণায় বিরাট সাফল্যের ক্ষেত্রেও। কেউ হয়তো দারুণ একটা থিয়োরি আবিষ্কার করলেন। কিন্তু, সে তত্ত্বটা কি নির্ভুল? পরীক্ষা করে দেখো। তত্ত্ব যা বলছে, বাস্তবে যদি তা ঘটে, তবে বোঝা যাবে তত্ত্ব নির্ভুল। এবং তখন নোবেল পুরস্কারের কথা ভাবা হয়। অন্য দিকে, ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স প্রাইজের ঘোষণাতেই বলা হয়েছিল, এ পুরস্কার গভীর তাৎপর্যপূর্ণ মৌলিক চিন্তাকে সম্মান জানাতে। সুতরাং, চরিত্রগত দিক থেকে এই প্রাইজ নোবেল থেকে আলাদা।


হ্যাঁ, আমি যাচ্ছিলাম ওঁর প্রসঙ্গে। তাত্ত্বিক গবেষণায় হকিং কী সব সাফল্য পেয়েছেন! এক-একটির কথা ভাবলে রীতিমতো বিস্ময় জাগে। অথচ সবই কিন্তু থিয়োরিতে। ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে একটা আস্ত নতুন ধারণা পেশ করেছেন হকিং। ব্ল্যাক হোল সব কিছু গিলে খায়, এমনকী তার রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পায় না আলোও, এই পুরনো চিন্তা মুছে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ব্ল্যাক হোল থেকে বেরোয় এক ধরনের বিকিরণ। ব্যাপারটা এত অভাবনীয় যে, হকিং-এর ওই আবিষ্কার স্মরণীয় করে রাখতে ওটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হকিং বিকিরণ’। এত বড় তাত্ত্বিক সাফল্য, কিন্তু তার পরীক্ষামূলক সমর্থন? তা কোথায়? ব্ল্যাক হোল থেকে হকিং বিকিরণ হচ্ছে কি না, তার প্রমাণ মিলতে পারে এক ভাবে। বিকিরণ মানে ক্ষয়। হকিং বিকিরণ বেরোলে, ক্ষয় পেতে পেতে ব্ল্যাক হোল এক সময় কর্পূরের মতো উবে যাবে। কত দিনে? ১-এর পর ৭০টা ০ বসালে যে সংখ্যা হয়, তত বছরে। হকিং ঠিক না ভুল, তা পরীক্ষায় জানতে হলে অত বছর বসে থাকতে হবে! হকিং বিকিরণের বাস্তব প্রমাণ না মেলা পর্যন্ত হকিং-এর সাফল্যকে স্বীকৃতি না জানানো ভুল।


পরীক্ষায় স্ট্রিং থিয়োরির প্রমাণ মিলছে না কথাটা একটু বিভ্রান্তিমূলক। এমন নয় যে পরীক্ষা করা হয়েছে, এবং ফল পাওয়া যাচ্ছে অন্য রকম। স্ট্রিং থিয়োরির মূল দাবিগুলি এ রকম যে, সেগুলি সরাসরি পরীক্ষা করে দেখার মতো পরিস্থিতিই ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা যাচ্ছে না। পরীক্ষা করা গেলে তো প্রমাণের প্রশ্ন ওঠে। পদার্থের ক্ষুদ্রতম উপাদান যে কণা নয়, তা দেখতে হলে যে অ্যাকসিলারেটর যন্ত্র বানাতে হবে, তা এখনকার প্রযুক্তি কল্পনাও করতে পারে না। আর এক দাবি ব্রহ্মাণ্ডে স্পেস-এর মাত্রা তিনটি নয়, দশটি তাও তো এই মুহূর্তে নেই। তা হলে পরীক্ষা করা হবে কী ভাবে? এ সব কথা মাথায় রেখে কাজ করছেন স্ট্রিং থিয়োরির গবেষকরা। চেষ্টা করছেন ওই তত্ত্বের সূত্র ধরে এমন সব উপসংহার খুঁজে বের করার, যেগুলো ব্রহ্মাণ্ডের আজকের পরিস্থিতিতে লুকিয়ে থাকতে পারে। যাতে সেই লুকোনো চিহ্ন শনাক্ত করা গেলে বলা যেতে পারে, স্ট্রিং থিয়োরি নির্ভুল।


উৎসাহের মূলে গবেষণার নানা প্রাপ্তি। গবেষকরা খুঁজে পাচ্ছেন নতুন নতুন ধারণা, যেগুলো পরস্পর দারুণ সঙ্গতিপূর্ণ। তত্ত্বটা ভুল হলে বিভিন্ন ধারণার মধ্যে এমন অন্তর্লীন সঙ্গতি থাকত না। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। স্ট্রিং থিয়োরি তো পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানের তত্ত্ব। তা যে আবার ব্যাখ্যা করতে পারছে ব্ল্যাক হোলের মতো একটা জিনিসের চরিত্র, এটা বিস্ময়ের নয় কি? শুধু পদার্থবিদ্যায় নয়, স্ট্রিং থিয়োরি এখন এমন সব যোগাযোগ আবিষ্কার করছে, যা মন কাড়ছে গণিতজ্ঞদেরও।

না। স্ট্রিং থিয়োরি নিছক গণিত নয়। বাস্তব ব্যাখ্যার দায় আছে এর।


সৌন্দর্য জিনিসটা আপেক্ষিক। কে কোনটাকে সুন্দর বলবেন, তা তাঁর রুচির ব্যাপার। তবে, একটু আগে আমি যে অন্তর্লীন সঙ্গতির কথা বলেছি, তা যদি সৌন্দর্য হয়, তা হলে আমার বিশ্বাস, স্ট্রিং থিয়োরি নির্ভুল।


সব তত্ত্বের মূল তত্ত্ব অন্বেষণ একটা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য সন্ধানই বিজ্ঞানের কাজ। আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন দুই ক্রিয়ার মূলে যে থাকতেই পারে একটি মাত্র নীতি, তা তো বিজ্ঞানই দেখিয়েছে। যেমন তড়িৎ আর চুম্বক। ও দুইয়ের কাজের মূলে একটি মাত্র নীতি। পরে দেখা গেছে, তেজস্ক্রিয়তার কাজও ব্যাখ্যা করা যায় ওই একটা নীতির সাহায্যে। তিনটে ঘটনার একটা মাত্র থিয়োরি। সুতরাং, প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, সব থিয়োরির মূল থিয়োরি থাকা সম্ভব। তা যদি থাকে, তবে তা খোঁজার চেষ্টা তো চলবেই।


গবেষণায় বরাদ্দ নির্ভর করে গবেষকদের পছন্দের ওপর। অনেক গবেষক ব্যস্তএর চর্চায়। তাই হয়তো বরাদ্দের পরিমাণএতে বেশি।


অন্য বিষয়ের কথা বলতে পারব না যে, তবে স্ট্রিং থিয়োরিতে কিন্তু ভারতে অনেকে ভাল কাজ করছেন।


আমাকে ওঁদের সঙ্গে তুলনা করছেন! আমি তো ও ভাবে ভাবি না কখনও। নিজের মতো করে গবেষণা করে যাই মাত্র। বলতে পারেন, তা করে বেশ মজা পাই।


পুরস্কারের কথা ভেবে যেন কেউ গবেষণায় না আসেন। রিসার্চ যদি মন থেকে টানে, যদি মনে হয় এটা দারুণ মজার, ভীষণ আকর্ষণীয় একটা কাজ, তা হলেই এতে আসা উচিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.