বনেদি উত্তরের ধারক-বাহক
লকাতা শহরে এমন কিছু কিছু পরিবার আছে যারা বংশানুক্রমে আইনি পেশার সঙ্গে যুক্ত। কমলদা এবং আমি দু’জনেই তেমন দু’টি পরিবারের সদস্য। আর সেই সূত্রেই আমাদের দুই পরিবারের যোগাযোগ। এখন আলাদা করে মনেই পড়ে না ঠিক কোন সময় থেকে আমি কমলদাকে চিনি।
তবে ওঁর পারিবারিক ধারা বজায় রেখে কমলদা-ও বরাবর আইনের জগতের বাইরেও সামাজিক বিভিন্ন প্রয়োজনে মন এবং সময় দিয়েছেন। আসলে উত্তর কলকাতার নাম করা বর্ধিষ্ণু পরিবারের মধ্যে একটি কমলদাদের পরিবার। ভূপেন বসুর নাতি ছিলেন তিনি। এমন সব পরিবার সব সময়েই নানা কাজ এবং সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থেকেছে। শুনেছি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন ওই পরিবারের অনেকে।
শেষ সময় পর্যন্ত নিজেদের পারিবারিক সলিসিটর ফার্ম বি. এন. বসু অ্যান্ড কোম্পানি সময় দিয়েছেন কমলদা। তেমনই জড়িত থেকেছেন মোহনবাগান ক্লাব থেকে সুতানুটি পরিষদ সবের সঙ্গেই। পাশাপাশি, রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ তো ছিলই। সামাজিক অনেক কাজ করেছেন।
নিজের বাড়ির সামনে কমল বসু। —ফাইল চিত্র
বলা যায়, কমলদা ছিলেন বনেদি উত্তর কলকাতার সংস্কৃতির ধারক-বাহক। স্বভাবে-ভাবনায় সবেতেই যেন ছিলেন খাঁটি বাঙালি। কারণ, ওঁর বড় হয়ে ওঠাই সে রকম।
এক সময়ে বহু বর্ধিষ্ণু পরিবারের ছেলেরাই বামপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছেন। যেমন জ্যোতি বসু, স্নেহাংশু আচার্যের মতো ব্যক্তি। কমলদাও সে পথে যান। পরবর্তীকালে সেই রাজনৈতির হাত ধরেই কলকাতার মেয়র এবং তার আগে সাংসদ হন তিনি।
ওই সময়ে উত্তর কলকাতায় এমন বহু পরিবার ছিল যারা মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে বংশানুক্রমে যুক্ত। কমলদাদের পরিবারও ছিল তেমনই। এই সব পরিবারের মধ্যে থেকেই অনেকে এগিয়ে আসতেন ক্লাব চালানোর জন্য নানা কাজে। এক-একটি আসনের জন্য ভোটে লড়াই যতই হত, সামাজিক সম্পর্কের জায়গায় কিন্তু ছেদ পড়েনি কখনও। এমনই ছিল সে সময়কার সংস্কৃতি।
একটি ঘটনা মনে পড়ছে। সালটা ১৯৫৯। মোহনবাগান ক্লাবের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি পদের জন্য লড়ছেন কমল বসু এবং ধীরেন দে। ধীরেনবাবুর জন্য সে বার প্রচারে নেমেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় স্বয়ং। জিতেও গেলেন তিনি। অথচ তার পরেও দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক তো খারাপ হয়ইনি, বরং সে আমলেই ক্লাবের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন কমলদা।
শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে যখন আমি ধীরেনদার শতবর্ষ পালনের আয়োজন করছি, তখন আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলাম কমলদার বাড়িতে। তখন তিনি খুব অসুস্থ। বলেছিলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারলেও স্মারকগ্রন্থে অবশ্যই একটি লেখা দেবেন। লেখাটি দিয়েওছিলেন কমলদা। এমনই মানুষ ছিলেন তিনি।
পরেও তেমনই দেখেছি তাঁকে। ইনকর্পোরেটেড ল’ সোসাইটির সহ-সম্পাদক ছিলেন এক সময়ে। তখন অনেক ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে মতের অমিল হয়েছে। তবু কখনও অনুজ বলে আমাদের মতামত শুনতে অস্বীকার করেননি তিনি। কাজের জন্য আসলে কখনও ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলিতে আঁচ পড়তে দিতেন না। কমলদার কথা বলতে গিয়ে আরও একটি কথা খুব মনে পড়ে। বিধান সরণির অবস্থা তখন খুব খারাপ। উত্তর কলকাতার সকলেরই যাতায়াতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। কমলদা সে সময়ে কলকাতার মেয়র। তাই ভাবলাম ওঁকে বললে এর সমাধান হতে পারে। সমস্যার কথা জানাতেই উল্টো অভিজ্ঞতা। বললেন, “ওই রাস্তাটায় আমি একেবারে শেষে হাত দেব। না হলে হঠাৎ বিধান সরণি সারানো হচ্ছে দেখলে লোকে বলবে, আমি রাস্তাটা ব্যবহার করি বলে আগে কাজ করাচ্ছি।” কমলদার দেওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোধহয় এটিই। যাঁর গায়ে কোনও দিন কোনও বিতর্কের তিল মাত্র ছোঁয়া লাগেনি। ব্যক্তিগত স্বচ্ছতা ও সততার তিনি ছিলেন জীবন্ত প্রতিমূর্তি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.