ফল কী হবে, তা জানতে ঢের দেরি। কিন্তু, প্রার্থী ঘোষণায় কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এক কদম পিছনে ফেলে দিল বামফ্রন্ট। রাজ্য রাজনীতিতে এটা অবশ্য নতুন নয়। তবু, নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস বা তৃণমূল ঠিক কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে যখন জেলার মানুষ ধন্দে, তখন সোমবার রাজ্যের অন্য দুই কেন্দ্রের (রেজিনগর ও ইংরেজবাজার) মতো এখানেও প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
প্রত্যাশিত ভাবেই বামেদের তরফে নলহাটির প্রার্থী হচ্ছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বীরভূম জেলা সম্পাদক, প্রাক্তন বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়। এমনকী বিজেপি-ও এ দিনই তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। সেখানে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল বা তাদের পুরনো জোটসঙ্গী কংগ্রেস কী করবে, সেই ছবিটা এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও ইতিমধ্যেই নলহাটি বিধানসভা এলাকায় প্রার্থীদের নাম ফাঁকা রেখেই দেওয়াল লিখনের কাজ শুরু করে দিয়েছে দু’টি দলই। তা নিয়ে খোঁচাও দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্যসভার সাংসদ বরুণ মুখোপাধ্যায়। শনিবার নলহাটিতে এসে তিনি কটাক্ষ বলেন, “এখানে এক দিকে দু’টি দল প্রার্থীদের নাম বাদ দিয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন শুরু করেছে। আবার রামপুরহাটের কলেজে একজোট হয়ে লড়ছে! ওই দেওয়াল লিখনগুলোর শূন্যস্থান আর পূরণ হবে না। ওঁদের সুতো তো অন্য জায়গায় বাঁধা!” |
জেলার রাজনৈতিক মহলে নলহাটির সম্ভাব্য কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে একটা নাম নিয়ে জল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছে। তিনি হলেন, কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ চিত্রলেখা মুখোপাধ্যায়। এই জল্পনার অবশ্য এখনও কোনও সমর্থন মেলেনি প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে। চিত্রলেখাদেবী প্রার্থী হলে তৃণমূল আদৌ কোনও প্রার্থী দেবে কি না, জল্পনা রয়েছে তা নিয়েও। সে ক্ষেত্রে কি ফের ‘জঙ্গিপুর-মডেল’ই দেখা যাবে? যেখানে প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হওয়ায় সৌজন্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি তৃণমূল। বস্তুত, অভিজিৎবাবু সাংসদ হয়ে যাওয়াতেই নলহাটিতে ফের অকাল ভোট।
নলহাটির ক্ষেত্রে অবশ্য ওই ধরনের জল্পনায় জল ঢালছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল নলহাটিতে প্রার্থী দেবে। খুব তাড়াতাড়িই প্রার্থী হিসাবে স্থানীয় স্তরের কোনও নেতার নামই ঘোষণা করা হবে।” তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব কী ভাবছেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে জেলা নেতৃত্ব যে স্থানীয় দাবি মেনেই নলহাটিতে প্রার্থী দিতে প্রস্তুত, তা অনুব্রতবাবুর মন্তব্যেই স্পষ্ট। আর এ ক্ষেত্রে তৃণমূলেরই অন্দরে যে নামটি বারবার ভেসে আসছে, তিনি নলহাটির প্রাক্তন পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা। গত পুরসভা নির্বাচনে নলহাটিতে তৃণমূল জিতলেও হেরে যান কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া বিপ্লববাবু। কিন্তু, ওই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন জোরদার করার ‘পুরস্কার’ হিসেবে তিনি বিধানসভা উপ-নির্বাচনে টিকিট পেতেই পারেন, এমন জল্পনা রয়েছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে।
|
নজরে নলহাটি |
• মোট ভোটার ১,৯৫,৩৭০।
• ভোট হবে ২৪৭টি বুথে। |
• বাম প্রার্থী: দীপক চট্টোপাধ্যায় (ফব)।
• বিজেপি প্রার্থী: অনিল সিংহ। |
কংগ্রেস বা তৃণমূল প্রার্থী ঠিক করেনি।
উল্লেখ থাকুক: ২০১১ সালে কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় (বর্তমানে সাংসদ)
নিকটতম প্রার্থী ফব-র দীপকবাবুকে ১৫,১৬০ ভোটে হারিয়েছিলেন। |
|
জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি অবশ্য উপ-নির্বাচনের প্রার্থিপদ নিয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ। তাঁর দাবি, “এ সপ্তাহের মধ্যেই কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা হবে। কে হবেন, তা প্রদেশ নেতৃত্বই ঠিক করবেন।” তবে চিত্রলেখাদেবী তাঁদের প্রার্থী হলে, তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কি না, তা তৃণমূলের ‘নিজস্ব ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
জঙ্গিপুরের মতোই নলহাটি কেন্দ্রেও বিজেপি-র ভোট একটি ‘ফ্যাক্টর’, তা মেনে নিচ্ছেন জেলার রাজনীতির কারবারিরা। নলহাটিতে এ বারও তাদের প্রার্থী হচ্ছেন অনিল সিংহ। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “জঙ্গিপুরের মতোই রাজ্যের তিনটি উপনির্বাচনেও ভাল ফল করবে বিজেপি।” অন্য দিকে, বামফ্রন্টের প্রার্থী দীপক চট্টোপাধ্যায়ের মত, “প্রায় ২০ মাস হল বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। মানুষ নিজের অনুভূতি দিয়ে বুঝছেন, কী উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের মনের এই পরিবতর্নই এ বার জবাব দেবে।” জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছেন ফব সাংসদ বরুণবাবুও। দলীয় সম্মেলনের বক্তৃতায় তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচন আসলে মানুষের জবাব দেওয়ার টেস্ট। আপনারা শ্রেণিশত্রুদের চিহ্নিত করে জবাব দিতে প্রস্তুত হন।”
|