ঢেলে বিকোচ্ছে নতুনগ্রামের কাঠমূর্তি
মেলা ময়দানে বসে কাঠ, বার্নিশ দিয়ে নানা রকম মূর্তি বানিয়ে চলেছেন ওঁরা। সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে তা। ১৪ তম বর্ধমান উৎসব এবার বড় সুযোগ এনে দিয়েছে জেলার নতুনগ্রামের কাঠখোদাই শিল্পীদের। কোনও স্টল ভাড়া দিতে হচ্ছে না তাদের। জিনিস বিক্রির সব টাকাই যাবে দুঃস্থ শিল্পীদের তহবিলে।
নতুনগ্রাম থেকে সাতজন শিল্পী এবার যোগ দিয়েছেন বর্ধমান উৎসবে। তাঁদের শিল্প-সম্ভার থেকে কাঠ, বাঁশ, বার্নিশ, রঙ, যন্ত্রপাতি-সহ সব কিছুই নিয়ে এসেছেন। একের পর এক গণেশ, প্যাঁচা, রাজা-রানির মূর্তি তৈরি করছেন তাঁরা। দাম, তিরিশ থেকে তিনশো অবধি। তৈরি হতে না হতেই বিকিয়ে যাচ্ছে জিনিস। মাঝেমাঝে ক্রেতাদের সঙ্গে দাম নিয়ে দরাদরিতে হেরেও যাচ্ছেন। রাজি হচ্ছেন না বিক্রি করতে। হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের বাটালি-ছেনির জগতে। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছে বৃন্দাবন সূত্রধর, দেবপ্রসাদ দত্তদের দিন।
কাজে মগ্ন । সোমবার ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।
মেলার মরসুম পড়তে না পড়তেই গ্রাম ছেড়ে জেলায় জেলায় ঘোরার পালা শুরু শিল্পীদের। শিল্পী অজয় ভাস্কর বলেন, “ইংরেজি বছর ঘুরতেই বেরিয়ে পড়েছি। অনেক মেলাতেই তো ঘুরলাম। বর্ধমানের কৃষ্ণসায়র ঘুরে এসেছি এই মেলায়। এরপর যাব জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায়। এর পরে রয়েছে কলকাতার সায়েন্সসিটির হস্তশিল্প মেলা।” গ্রামের সুনীল সূত্রধরের চোখ চকচক করে ওঠে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’-র কথায়। জানালেন, এই মেলাতেই নিজেদের শিল্পী বলে মনে হয়। মানুষ খুব বেশি দরাদরি করেন না। শিল্পীর কদর করতে জানেন। শিল্পীর ঘরেও দু’পয়সা আসে তাতে।” আর এক শিল্পী সনৎ সূত্রধরের কথায়, “সারা বছরই তো ঘুরে বেড়াই নানা মেলায়, উৎসবে। বর্ষায় যখন তিন মাস ঘরে বসে থাকতে হয়, সামান্য মুড়িটুকুও জোটে না তখন।”
পরের প্রজন্মের বেশিরভাগেরই উপায় নেই পুরনো পেশা ধরে রাখার। তাই যেন একটু ক্ষুব্ধ শোনাল শিল্পী পিন্টু সূত্রধরের গলা। বললেন, “আমাদের গ্রামে প্রায় ৪৫ ঘর শিল্পীর বাস। সবার বাড়িতেই একটি করে কারখানা রয়েছে। নতুন করে আর কারখানা করার জায়গা কোথায়? নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাই চলে যাচ্ছে বিভিন্ন রেল স্টেশনে। সেখানেই মূর্তি তৈরি, কেনা বেচা চলছে। তাতেও টুকটাক দিন চলে যায়।”
এমন অবস্থা, তবু ঋণ নেন না কেন শিল্পীরা? অন্য শিল্পের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথাই বা ভাবেন না কেন? বাঁশের ফুল তৈরি করতে করতে বললেন শিল্পী বুদ্ধদেব দাস, “আগে যে দু-একবার ঋণ নিইনি, তা নয়। কিন্তু যেটুকু আয় হয়, তার সবটাই সংসার চালাতে চলে যায়। পরে টাকা ফেরত দিতে সমস্যা হয়। আর বাপ ঠাকুর্দার পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা! ভাবতেই পারিনা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.