|
|
|
|
নিয়ামতপুর-ডাবর রুট |
চলতে গেলেই ভেঙে পড়ছে যন্ত্রাংশ,
রুটে বাস নামাতে গররাজি মালিকেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
রাস্তা দিয়ে চলতে গেলেই ভেঙে যাচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। তাই খরচ বাঁচাতে বেশিরভাগ গাড়িই বন্ধ করে দিচ্ছেন বাসমালিকেরা। অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানালেন বাসমালিকেরা। পূর্ত দফতর এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে না চায়নি। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।
আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জনের দুরত্ব প্রায় ৩৩ কিমি। এই রুটের নিয়ামতপুর থেকে রূপনারায়ণপুরের ডাবর মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিমি রাস্তার দশা বেহাল। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই রাস্তাটির কোনও সংস্কার করা হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানিও হচ্ছে। যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন বাসমালিকেরা। আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মালিকই এই রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। মহকুমা পরিবহন দফতর সূত্রে খবর, বড় বাস ও মিনিবাস মিলিয়ে এই রুটে প্রতিদিন প্রায় ৬০টি বাস চলার কথা। কিন্তু কয়েক মাস ধরে টেনে হিঁচড়েও দিনে ৩০টির বেশি বাস চলছে না।
আসানসোল চিত্তরঞ্জন রুটের এই রাস্তাটির দায়িত্বে রয়েছেন পূর্ত দফতরের আসানসোল ডিভিশনের কার্যকরী বাস্তুকার (২) প্রণব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এই দফতরের অপর এক আধিকারিক জানান, এই ১৪ কিমি রাস্তা সারানোর প্রথম পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু তা ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালে আবার একটি পরিকল্পনা করা হয়। খরচ ধরা হয় ১১ কোটি টাকা। সেবারেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১২ সালে ব্লক প্রশাসনের চাপে পূর্ত দফতর ফের একটি প্রকল্প বানায়। খরচ ধরা হয় কুড়ি কোটি টাকা। ঠিক হয়, রাস্তাটি ১৬ মিটার চওড়া হবে। ২৩ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই রাস্তা চওড়া করার জন্য রাস্তার দুপাশে দখলদার উচ্ছেদের নোটিশ করতেই বাধার মুখে পড়ে পূর্ত দফতর। রাজনৈতিক দলগুলিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দুপাশের দখলদারি উচ্ছেদে রাজি নয়। তাই থমকে রয়েছে রাস্তা সংস্কারও।
বাসমালিকদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দফতরের পদস্থ কর্তারাও রাস্তার অবস্থা ভাল ভাবে জানেন। অথচ এতদিনেও কোনএওরকম প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা যায়নি। আসানসোলের পূর্বতন অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়ন্তকুমার আইকতও রাস্তা সংস্কারের ব্যপারে কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তিনি না থাকায় তা জানা সম্ভব হয়নি। বড়বাসের মালিক ধনপতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিদিনই গাড়ি মেরামত করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছি। ভাবছি, এ বার বাস চালানোই বন্ধ করে দেব।” আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়েরও বক্তব্য। “এভাবে আর বাস চালানো যাবে না। আমরা লাগাতার বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”
বাস না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা। কাজের জায়গা ও স্কুল কলেজেও সময়মতো পৌঁছনো যাচ্ছে না। এমনই একজন রাজ্য সরকারি কর্মচারী মঞ্জুশ্রী গুহ বলেন, “হাতে বাড়তি সময় নিয়ে বেরিয়েও সময়মতো অফিসে ঢুকতে পারি না।” অফিস ফেরতা যাত্রীদেরও সারাদিন পর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্যেই এই দুর্ভোগ তাঁদের। সবকিছু জেনেও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কোনই হেলদোল নেই। আসানসোলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক সদ্য দায়িত্বে আসা অন্তরা আচার্য জানান, এই রাস্তাটির সংস্কারের জন্য বেশ কয়েক মাস আগে এডিডিএ উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ কেন শুরু হয়নি তা খোঁজ নিতে হবে। অন্তরাদেবী বলেন, “আমি এই রাস্তা নিয়ে ওয়াকিবহাল। এ’বিষয়ে খোঁজখবর করতে দিন কয়েক সময় লাগবে। অবশ্যই কিছু ব্যবস্থা নেব।” |
|
|
|
|
|