ওঁরা সবাই খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কেউ প্রতিবেশীকে খুন করার অপরাধে সাজা পাচ্ছেন। কেউবা শ্যালককে খুন করার অপরাধে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। ওঁদেরই গানে মেতে উঠল মালদহ জেলা ২৪তম বইমেলা। শুধু যে ক্রেতা বিক্রেতাদের মন কাড়লেন সেটাই নয়। দূর থেকে বন্দি ছেলের গান শুনে কেঁদে ভাসালেন মা।
শনিবার রাতে বইমেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চে কড়া পুলিশি ঘেরাটোপে সাজাপ্রাপ্ত অনন্ত মজুমদার নিজের লেখা গান গাইলেন-‘কারাবাসের যন্ত্রণা আর ভাল লাগে না’। ওই গান শুনে চোখ ছলছল করে অনেকের। আড়ালে চোখ মুছে নেন জেলা সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। পরে মঞ্চে উঠে তিনি বলেন, “যে চার জন গান করলেন, হারমোনিয়াম ও বাঁশি বাজালেন। কিছুদিন আগেও ওঁরা কিছু জানতেন না। সংশোধনাগারে এসে শিখেছেন। হারমোনিয়ামে হাত পাকিয়েছেন। বাঁশিতে সুর বেঁধেছেন। প্রার্থনা করুন ওঁরা যেন সুস্থ সমাজে ফিরে যেতে পারেন।” |
সংশোধনাগারে বন্দিদের প্রতিভার কথা বাইরে কেউ এতদিন জানত না। বইমেলা কমিটির অন্যতম সদস্য তথা সংশোধনাগার যে এলাকায় রয়েছে সেই এলাকার কাউন্সিলার সুমলা অগ্রবাল উদ্যোগী হয়ে তাঁদের অনুষ্ঠান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন। সুমলাদেবী বলেন, “কয়েকদিন আগে জেনেছি সংশোধনাগারে বন্দিদের কয়েকজন গানবাজনা শিখছেন। সুস্থ সমাজ জীবনের সংস্পর্শে আনতে ওদের বইমেলায় গান পরিবেশনের সুযোগ করে দিয়েছি।” ওই বন্দিদের বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান পরিবেশনের কথা ছিল। কিন্তু পুলিশি নিরাপত্তা না মেলায় জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বইমেলায় নিয়ে যেতে পারেননি। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় কড়া পাহারায় সাজাপ্রাপ্ত বন্দি অনন্ত মজুমদার, চিন্ময় বসু, নিতাই মন্ডল, সৌমেন মণ্ডল মেলা প্রাঙ্গনে পৌঁছতে ঘিরে ধরেন বইপ্রেমীরা। জীবনে প্রথম মঞ্চে ওঠা। হয়ত তাই শিল্পী বন্দিরাও কিছুটা বিব্রত বোধ করেন। একটিও কথা বললেন না কেউ। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ করে মঞ্চ থেকে নামতে পাল্টে গেলেন। বললেন, “জীবনে আমরা যে ভুল করেছি সেটা যেন অন্য কেউ না করে।” বইপ্রেমীদের ভিড়ে বন্দি চিন্ময় বসুর গান শুনতে ছুটে এসেছিলেন বৃদ্ধা মা সাবিত্রীদেবী। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ নিষেধ করায় ওই বন্দি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। মাও কথা বলতে পারেনি ছেলের সঙ্গে। দূরে দাঁড়িয়ে ছেলের গান শুনে কগান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। চিন্ময় বসু ছলছল চোখে বলেন, “অনেকদিন পরে মাকে দেখলাম। কথা হল না।” গাড়িতে উঠতেই রক্ষীরা দরজা বন্ধ করে দেন। |