পঞ্চায়েত ভোটে দলের জন্য টাকা তুলতে তাঁর নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী শুরু করে দিয়েছেন। তা এখনও চলছে। এ বার রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে ‘উন্নত মানুষ গড়ার কেন্দ্র’ নির্মাণে একই ভাবে ছবি এঁকে টাকা তুলে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধ-শতবর্ষ উদ্যাপনের সমাপ্তি-অনুষ্ঠানে সন্ন্যাসীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, “আপনারা উন্নত মানুষ গড়ার একটা প্রতিষ্ঠান করুন। এর জন্য যা বলবেন, করব। দরকার হলে, ৩৬৫ দিন একটা করে ছবি এঁকে দেব।” |
স্বামী আত্মস্থানন্দকে প্রণাম মুখ্যমন্ত্রীর। রবিবার। ছবি: দেবাশিস রায় |
প্রচারমাধ্যম তথা সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর মতামত প্রকাশের জন্যও স্বামী বিবেকানন্দকেই ‘ঢাল’ করেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি একটা কথা বলার জন্য অনেকে অনেক কথা বলেছেন। হাতি চলে বাজার/ কুত্তা ভোঁকে হাজার...এটা আমি স্বামীজির বইতেই পড়েছি!” কয়েক দিন আগে উত্তর কলকাতায় স্বামীজির পৈতৃকবাড়ির অনুষ্ঠানে বিবেকানন্দকেও মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বলে খেদোক্তি করেন মমতা। এবং প্রকারান্তরে স্বামীজির সঙ্গে নিজের তুলনা টেনে বলেন, “এখন ভাল কাজেরও সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কিছু করছে, তাকে টেনে নামাও।” একই সুরে এ দিনও বলেছেন, “আমরা বড্ড হিংসুটে হয়ে যাচ্ছি!” উন্নত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান গড়তে মঠের সন্ন্যাসীদের আহ্বান জানিয়েই চারপাশের মানুষের হিংসা নিয়ে এই আক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রীর।
এ দিন সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠান থাকার দরুণ বেলুড়ে কিছুটা তাড়া ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। মিশন কর্তৃপক্ষও দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করতে তৎপর হন। কিন্তু বক্তৃতার সময়ে আবেগতাড়িত হয়ে ওঠেন মমতা। “রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের সাবজেক্ট মহামানব-সাগর! অল্প কথায় স্বামীজিকে নিয়ে বলা যায় না!” তিনি এ দিনও বলেন, সমালোচকদের তিরে স্বামীজির বিদ্ধ হওয়ার কথা। “দুঃখ পেলেও স্বামীজি বলতেন, যে যা ইচ্ছে বলে যাক! শুধু একটু মুখটা বন্ধ রাখ!” স্বামীজির আদর্শ-মাফিক ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হওয়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, “স্বামীজি বলেছেন, তোমায় আক্রমণ করলে, তুমিও থাপ্পড় মারবে। আবার ভালবাসবে! একই সঙ্গে রাফ অ্যান্ড টাফ্, পদ্মের মত কোমল, বাঘের মতো শক্তিশালী হতে হবে।”
আট খণ্ডের একটি বই ও স্বামীজির শিক্ষা-সংক্রান্ত দু’টি ডিভিডি-সঙ্কলন এ দিন প্রকাশ করেন মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ। ১৫ হাজার দর্শক এসেছিলেন। মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনার চেষ্টা করছেন। উনি স্বামীজির জন্মদিনে অত বড় অনুষ্ঠান করবেন জানলে, আমরা হয়তো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম না।” |