রাজ্যকে সুপারিশ কমিশনের
নিহতের দেহ বহনে চাই মানুষের মর্যাদা
বাঁশে ঝুলিয়ে তো নয়ই। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ আদৌ দায়সারা ভাবে সরানো যাবে না। ‘উপযুক্ত মর্যাদা’র সঙ্গেই সেই মৃতদেহ বহন এবং তার শেষকৃত্য করতে হবে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এই সুপারিশ করেছে রাজ্য সরকারের কাছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, এই সুপারিশ রূপায়ণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, দু’মাসের মধ্যে রাজ্যের তরফে তা জানাতে হবে কমিশনকে।
‘উপযুক্ত মর্যাদা’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে?
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে:
• সংঘর্ষস্থল থেকে মৃতদেহ শববাহী গাড়ি, লরি বা ভ্যানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেটা করতে হবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ-কর্তৃপক্ষকেই। ঘটনাস্থলে গাড়িতে চলাচলের রাস্তা না-থাকলে লোকজন দিয়ে ভাল ভাবে মৃতদেহ আনতে হবে।
• শবদেহ ওয়াটারপ্রুফ কাপড় বা প্লাস্টিকে মুড়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
• সভ্য সমাজে মৃতকে যে-ভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেই ভাবেই প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে নিহতদের।
• যথাযথ ভাবে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
২০১০ সালে জঙ্গলমহলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত কয়েক জন মাওবাদীর দেহ বাঁশে ঝুলিয়ে বহন করা হয়েছিল। সংবাদপত্রে সেই ছবি দেখে সমাজের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী এবং অন্য কয়েক জন মানবাধিকার কর্মী এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন পেশ করেন। সেই আবেদন পড়ে হাইকোর্ট সেটি পাঠিয়ে দেয় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে। ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল, এ ব্যাপারে তারা যেন যথোচিত তদন্ত করে এবং সংঘর্ষে নিহতদের দেহ কী ভাবে বহন ও শেষকৃত্য করতে হবে, সেই সুপারিশ রাজ্যের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ পেয়ে মানবাধিকার কমিশন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ এখন কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই চিঠিতে তা জানতে চাওয়া হয়। ওই সব মৃতদেহ কী করে আরও ভাল ভাবে বহন করা যায়, সেই বিষয়ে ডিজি-র পরামর্শও চায় কমিশন। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ডিজি একটি চিঠি দেন কমিশনকে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ বর্তমানে যে-পদ্ধতিতে বহন করা হয়, চিঠিতে তা বিস্তারিত ভাবে জানান ডিজি।
মানবিকতার চতুরঙ্গ
• মৃতদেহ বহনে চাই গাড়ি
• শব মুড়তে হবে প্লাস্টিকে
• প্রাপ্য শ্রদ্ধা দেখাতে হবে
• যথাযথ ভাবে অন্ত্যেষ্টি
বাঁশে ঝুলিয়ে মাওবাদীদের দেহ বহনের যে-ছবিকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ছবি, ডিজি-র রিপোর্ট এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য খতিয়ে দেখে কমিশন। তার পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ কী ভাবে সরানো হবে, সেই বিষয়ে গত ২০ ডিসেম্বর রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে দেয় তারা।
রিট আবেদনকারীরা কিন্তু এই সুপারিশে খুশি নন। অন্যতম আবেদনকারী, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র বলেন, “মানবাধিকার কমিশন তো আমাদের ডাকেইনি। আমাদের বক্তব্যও শোনেনি। শুধু একতরফা বক্তব্য শুনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশে আমরা আদৌ সন্তুষ্ট নই।” সুজাতবাবু মনে করেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির দেহ ‘মর্যাদা’র সঙ্গে সরানোর বিষয়টি এই সুপারিশে অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে। তিনি বলেন, “উপদ্রুত অঞ্চলে কোনও সংঘর্ষে কারও মৃত্যু হলে তার দেহ কী ভাবে আনা হবে, কী ভাবে আত্মীয়পরিজনদের দিয়ে সেটি শনাক্ত করানো হবে, কী ভাবে শেষকৃত্য করা হবে সেই সব বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিধি রয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.