তখন ট্রেন চলছিল না। তাতে কি! আমোদপুর থেকে ন্যারো গেজের সেই ছোট্ট রেলপথ ধরে ট্রলিতে চেপেই লাভপুর হাজির হয়েছিলেন তিনি। উড়িয়েছিলেন ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিনের পতাকা। যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক রাঢ়বাংলার লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আমোদপুর-কাটোয়ার সেই ‘ছোট লাইনের ট্রেন’ (এলাকার মানুষের ভাষায়) বারবারই যাঁর সাহিত্যের নানা অনুষঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
লাইন পেতেছিল ব্রিটেনের ‘ম্যাকলিয়ড রাসেল’ সংস্থা। গত রবিবারই ৯৬ বছরের যাত্রা সাঙ্গ করেছে ন্যারো গেজ। কত মানুষের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে মরচে ধরা সেই ৫২ কিলোমিটার লাইনে। শেষ দিনে ট্রেনের একটি কামরায় স্থানীয় শিশু ও প্রবীণদের নিয়ে আনন্দ ও দুঃখের যাত্রায় মেতেছিল লাভপুরের ‘বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী’। সংস্থার উদ্যোগে লাভপুর থেকে আমোদপুর ও সেখান থেকে ফের লাভপুর পর্যন্ত ঢালাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেই কামরাতেই। যার মূল আশ্রয়ই ছিলেন আমাদের লাভপুরের তারাশঙ্কর।
কেন?
গানে বিদায়।
তারাশঙ্করের লেখক জীবনে বীরভূমের রুক্ষ পথে ছুটে চলা সেই ছোট ট্রেনের বিশেষ ভূমিকার কথা মনে পড়িয়ে দিলেন উদ্যোক্তারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে বসে থাকতেন তারাশঙ্কর। নানা চরিত্রের মানুষের যাওয়া-আসার খেয়াল রাখতেন। ট্রেন থেকে নামত ঝুমুরের দল। তাঁদের নিয়ে আড্ডায় বসতেন লেখক। সেই সব অভিজ্ঞতার চিহ্ন মেলে তাঁর বহু গল্প-উপন্যাসেই। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘যুগভ্রষ্ট’ বা ‘কবি’র মতো উপন্যাসই বলুন কিংবা ‘জগন্নাথের রথ’ বা ‘তমসা’র মতো ছোটগল্প সবেতেই জড়িয়ে আছে লেখকের ব্যক্তি অভিজ্ঞতার অনুষঙ্গ। ‘তমসা’ গল্পের নায়ক অন্ধ ভিখিরি পঙ্খে তো থাকতেন লাভপুর স্টেশনেই! লেখক তারাশঙ্কর ট্রেন থেকে নেমেই পঙ্খের সঙ্গে কথা বলতেন। পঙ্খের গলায় তখন মেঠো সুরে গান। সেই গান তারাশঙ্কর তমসা গল্পে ব্যবহারও করেছেন।
এমনই সব স্মৃতি মেদুরতায় কাতর ছিল আমোদপুর-কাটোয়া ছোট লাইনের ট্রেনের শেষযাত্রা। পুরনো ফেলে আসা গল্পগুলি শোনাচ্ছিলেন এলাকার প্রবীণ হরিপ্রসাদ সরকার, সুকুমার চন্দ্র-রা। প্রথম জন তারাশঙ্করের ‘কালিন্দী’ নাটকে লেখকের সঙ্গেই অভিনয় করেছিলেন। দ্বিতীয় জনকে অবলম্বন করেই আবার তারাশঙ্কর তৈরি করেছিলেন ‘জগন্নাথের রথ’ গল্পে বিশু ডাক্তারের চরিত্র। এলাকার এতদিনের অন্যতম গর্বের বিষয় ছোট রেল হারিয়ে যাওয়ার দিনে অনেকেই বিষণ্ণ। শেষযাত্রায় সেই বিষণ্ণতা ক্রমে মিলিয়ে যেতে থাকল ‘বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী’র শিল্পীদের গলায় পঙ্খের গানে ‘কালা তোর তরে কদম তলায় বসে থাকি...’
বীরভূম নিয়ে
প্রগতি-র নতুন সংখ্যা।
আর পাঁচটি পত্রিকার তুলনায় ‘প্রগতি’ একটু আলাদা। সাঁইথিয়া থেকে প্রকাশিত সেই লিটল ম্যাগাজিনটির সম্পাদক দেবাশিস সাহা। গত দু’ বছর ধরে ‘বীরভূম’ বিষয়ে নানা জরুরি লেখা বের করে পত্রিকাটি অচিরেই জেলার পাঠক মহলে বিশেষ পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার পনেরো বছর পূর্তি সংখ্যা। তাতে বীরভূম নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু লেখা। কয়েকটি প্রবন্ধের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে ‘ভাষার বৈচিত্রে, বীরভূমের বাংলা ভাষা’, ‘বীরভূমের কুটির শিল্প’, ‘বীরভূমের সুফিসমাজ’, ‘উপনিবেশক শিল্প পুঁজির প্রেক্ষাপটে বীরভূমের নীলকুঠি’, ‘বীরভূমের কবিগান ও কীর্তনের প্রবহমান ধারা’। প্রচ্ছদে প্রাচীন পুথি ও বাংলার অতি পরিচিত পেঁচার ব্যবহার সংখ্যাটিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.