আজ ক্যানিংয়ে মমতা
মার্চপাস্টে চাই ফুটবলার, খুঁজতে হন্যে পুলিশ
চোর-ডাকাত নয়, ফুটবলার খুঁজছে পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে মান রাখতে হবে। তাই রবিবার দিনভর হন্যে হয়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে মাইকে প্রচার করে, পঞ্চায়েত প্রধানদের সাহায্য নিয়ে বা বাড়ি বাড়ি ঢুকে ফুটবলার খুঁজতে দেখা গেল দুই ২৪ পরগনার অন্তত ২৮টি থানার বহু পুলিশকর্মীকে। দিনের শেষে যাঁদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, এর চেয়ে চোর-ডাকাত খোঁজা ঢের সহজ।
পুলিশের উদ্যোগে ১৫ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন-সহ দুই ২৪ পরগনার ৩১৪টি পুরুষ ও মহিলা ফুটবল দল নিয়ে আয়োজিত হয় ‘সুন্দরবন কাপ’। শনিবার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয় উত্তর ২৪ পরগনা। পুরস্কার প্রদান ও একটি জনসভার জন্য আজ ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে আসার কথা মমতার।
মুখ্যমন্ত্রীর সভা বা অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছিলই। কিন্তু শনিবার মহাকরণ থেকে দু’জেলার পুলিশ-কর্তাদের কাছে নির্দেশ আসে যে সব থানা এলাকার দলগুলি ‘সুন্দরবন কাপ’-এ সামিল হয়েছিল, সেই সব খেলোয়াড়দের খেলার পোশাকে হাজির করাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে। দলের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন হাতে খেলোয়াড়দের যোগ দিতে হবে মার্চপাস্টে। এই নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়েই রবিবার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার ছ’টি থানা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২২টি থানার। শুধু খেলোয়াড় জোগাড় হলেই চলবে না, রয়েছে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস এবং নৌকা জোগাড় করা, দলগুলিকে রবিবার রাতে শহরে এনে রাখা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা, প্ল্যাকার্ড ও তৈরির তদারকি, হাজারো কাজ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বসিরহাটের ছ’টি থানা এলাকা থেকে দু’টি মহিলা এবং ৪০টি পুরুষ দল এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২২টি থানা এলাকা থেকে ১২টি মহিলা ও ২৬০টি পুরুষ দল প্রতিযোগিতায় সামিল হয়। সেই সব দলের নাম থাকলেও, খেলোয়াড়দের ঠিকানা পুলিশের কাছে নেই। নদী-খালে ঘেরা সুন্দরবনে রাতারাতি খেলোয়াড়দের খোঁজ পাওয়া সহজ নয়। অন্য এলাকা থেকে খেলোয়াড় এনেও অনেক দল গড়া হয়েছিল। এক পুলিশ-কর্তার কথায়, “৩১৪টি দলের ১৪ জন করে মোট ৪,৩৯৬ জন খেলোয়াড়, প্রতি দলের এক জন করে প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাকে পাঠাতে হবে। তা ছাড়া, বিভিন্ন থানার ওসি-আইসি এবং এক জন করে পুলিশকর্মীকেও দলের সঙ্গে থাকতে হবে। এক দিনে এত ব্যবস্থা করা কি সহজ কাজ?”
রবিবারই হেমনগর কোস্টাল ও হিঙ্গলগঞ্জ থানা এলাকা থেকে দেড়শো খেলোয়াড়কে খুঁজে আনা হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত বাস জোগাড় না হওয়ায় উদভ্রান্তের মতো ছুটেছেন পুলিশরা। বসিরহাটবাসীর রসিকতা, “চোর-ডাকাতদের ভালই হল।”
বসিরহাট মহকুমায় চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-সহ অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে চলেছে। মানুষ পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমাতেও অপরাধ কম নয়। এই পরিস্থিতিতে দু’দিন ধরে পুলিশকে ‘অন্য কাজে’ লাগানোয় প্রশ্ন উঠছে। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “দলের ডাকে সাড়া মিলছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ দিয়ে লোক আনিয়ে সভায় ভিড় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।”
প্রশ্ন উঠেছে এই বিপুল উদ্যোগের খরচ নিয়েও। রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার মধ্যেও সম্প্রতি সওয়া কোটি টাকা খরচ করে আন্তর্জাতিক ছাত্র-যুব উৎসবে সামিল করতে কলকাতায় জঙ্গলমহলের প্রায় ২৭ হাজার জনকে এনে প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকার। ‘সুন্দরবন কাপ’-এর অনুষ্ঠানের খরচও কোটি টাকা ছাড়াবে বলে মনে করছেন পুলিশের কিছু কর্তা। কেননা, পুলিশ সূত্রের খবর, সরকারের পক্ষ থেকে ৩১৪টি দলকেই ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে খাওয়ার খরচ বাবদ ৭৫ টাকা দেবে পুলিশ। রয়েছে বাস-নৌকার ভাড়া, খেলোয়াড়দের উপহার বাবদ আরও কিছু খরচও। আসবে কোথা থেকে? পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সব খরচই থানায় পরে দিয়ে দেওয়া হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।”
খেলোয়াড় খুঁজতে নাজেহাল ‘বড়বাবু’র অবস্থা নিয়ে ফিসফাস করতে শোনা গেল বসিরহাট মহকুমার এক থানার দুই কনস্টেবলকে। “রাস্তা থেকে লোক এনে খেলোয়াড় বলে চালালেই হত। কে দেখতে যাচ্ছে!”

সহ প্রতিবেদন: সামসুল হুদা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.