সালগাওকর-২ (গ্যাব্রিয়েল, জোসিমার)
মোহনবাগান-০ |
দু’তিন দিন ধরে মোহনবাগান কোচের মন্তব্য শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল। তিনি না কি ক্লাবের বিয়াল্লিশ দিনের ডামাডোলের মধ্যে সব ফুটবলারকে চোট সারিয়ে ফিট করে তুলেছেন। আবাসিক শিবির করে ফল পেয়েছেন। রবিবার সালগাওকরের বিরুদ্ধে তাই অবনমন বাঁচানোর প্রথম লড়াইয়ে নবিরা সসম্মানে উতরে যাবে বলে আশায় ছিলেন সমর্থকরা।
আমি কিন্তু এই হারে মোটেও অবাক নই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, করিম কোনও কোচই নয়। এই সময় দরকার ছিল টোলগে-ডেনসনদের মনোবল তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। যেটা ভৌমিক বা আমি বলে বলে করতাম। তা হলে ওঁর ‘দল ছন্দে রয়েছে’ মার্কা মিথ্যে বলা কেন?
করিমকে যারা কোচের পদে বসিয়েছে, তারাও ধোয়া তুলসী পাতা নন। আমাদের সময় ফুটবলারদের তাতিয়ে দিতেন ধীরেনদা, মান্নাদা, চুনীদা। মাঠে নেমে জান লড়িয়ে দিতাম। এই মোহনবাগানে আবার প্রাক্তন ফুটবলাররা ব্রাত্য। জনা কয়েক পেটোয়া প্রাক্তন ফুটবলার অবশ্য আছে। কিন্তু তাদের সেই ব্যক্তিত্বই নেই। ফলে প্লেয়ারদের চাঙ্গা করার কাজটা করে দেবাশিস-অঞ্জন। যারা গত মরসুমেই আমার বিরুদ্ধে কিছু ফুটবলারকে রোজ প্রভাবিত করত মিথ্যে অভিযোগ করার জন্য। এই যাদের চরিত্র, তারা ফুটবলারদের মনোবল বাড়ানোর জন্য চোখে চোখ রেখে কথা বলবে কী ভাবে? নিজেদেরই বিশ্বাসযোগ্যতা আছে?
শনিবার ইস্টবেঙ্গল, প্রয়াগ হেরে গিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে এক রকম ছিটকেই গিয়েছে। রবিবার মোহনবাগান অবনমন বাঁচানোর রাস্তা কিছুটা হলেও কঠিন করল। চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে প্রথম যে দলটা রয়েছে সেই চার্চিলের কোচ কিন্তু একজন বাঙালি। আমাদের সুভাষ ভৌমিক। এগুলো দেখি আর ভাবি, গোয়া-পুণে সবাই আই লিগে তরতর করে এগোচ্ছে। আর আমাদের তাড়া করছে অন্ধকার। দশ-বারো বছর আগেও পালা করে আমি আর ভৌমিক কলকাতায় জাতীয় লিগ আনতাম।
প্রশ্ন হল ওরা কোথায় পারছে, আর আমরা কেন পারছি না? আসলে ওদের কর্তারা ময়দানের কর্তাদের মতো অদূরদর্শী, খামখেয়ালি, হঠকারী নয়। ফুটবলার এবং জনতার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়নি। যখন বাংলা এই তত্ত্বে চলত তখন সাফল্যও আসত। ব্যর্থতা সত্ত্বেও অরুণদা, অমলদাদের মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল কর্তারা সরাননি। আর এখন রাইডার-করিম-মর্গ্যান কত নাম বাংলার ফুটবলে। কিন্তু আই লিগ নেই। অথচ ভৌমিক বা আমি বাংলাতেই ব্রাত্য। বিদেশি ব্র্যান্ডের জামাকাপড়ের মতো কলকাতার কর্তারা বিদেশি কোচ চান নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে। কারণ ব্যর্থ হলে বিদেশি কোচকে সহজেই বলি দেওয়া যাবে। তিনি এই শহরে থাকবেনও না। তখন মিথ্যোর খই ফুটবে কর্তাদের মুখ দিয়ে। যা আমাদের বেলায় হবে না। গোয়া, পুণেতে কর্তারা সেটা না করায় ডেরেক, আর্মান্দোরা স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে। উপকৃত হচ্ছে ওদের ফুটবল।
ভৌমিকও ঠিক সেই সুবিধেই এখন পাচ্ছে চার্চিলে। ওখানে কোচ দল গড়ছে। আমাদের এখানে সেই কাজ করছেন কর্তারা। এ বার মরসুমের আগে পইপই করে দেবাশিস দত্তকে বলেছিলাম, বিশেষ দশ জন ফুটবলারকে দলে না রাখতে। ওরা আমাকে তাড়িয়ে সেই দশ জনকেই রেখেছে। সেই ফুটবলাররাই কিন্তু এখন মাঠে পারছে না, তা প্রমাণিত। ডেরেকদের সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা, সম্মান রয়েছে। আর আমাদের এখানে অঞ্জন-দেবাশিসের মতো কর্তারা তা ময়লা কাগজের মতো ডাস্টবিনে ছঁড়ে ফেলে বাংলার ফুটবলকেই অন্ধ গলিতে নিয়ে যাচ্ছে। লেনি, রোমিওদের মতো একের পর এক ভূমিপুত্র উঠছে গোয়ার ফুটবলে। আর আমাদের? মেয়ে-জামাইয়ের ফুটবল স্কুলের মতো ফুটবল-দর্শন সঙ্গী হলে আই লিগ আসবে কী ভাবে? |