বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
টাকা দেবে কে
ডেটিং-এর খরচেও কি ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার?
কী চাইছে জেন ওয়াই? শুনলেন শতরূপা চক্রবর্তী |
সেকেন্ড ডেট। বাড়ি ফেরার পথে গোমড়া মুখে বসে রইল মেয়েটি। চুপচাপ। জানলার দিকে মুখ করে। পাশে বসে থাকা ছেলেটির মুখ শুকিয়ে আমসি। তবে কি ও আর দেখা করবে না? এই শেষ! রেস্তোরাঁর বিলটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। পুরো বিল মেটানো চাপের হবে ভেবেই ওকে কিছুটা দিতে বলা। বড় ভুল হয়ে গেছে।
জেন ওয়াই এখন এই সমস্যায় জেরবার। অভিজাত কফিশপ কিংবা রেস্তোরাঁর আলো-আঁধারিতে প্রথম ডেট। কিংবা পছন্দের মুভি দেখার জন্য মন কেমন করা আহ্বান। সাজগোজের বহরে খামতি নেই এতটুকু। মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। বেশ ভালও লাগছে তার কথার ধরন, আচার-ব্যবহার। কিন্তু শেষমেশ বিল দিতে গিয়েই যত বিপত্তি। দু’জনের মনেই ইতস্তত ভাব।
সেল্ফ-ইগো যখন তুঙ্গে
গিরিশ পার্কের পৌলমীর সেল্ফ ইগোর জুড়ি মেলা ভার। ‘আমি মেয়ে’-এই অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকার পক্ষপাতী নন একেবারেই। তার পর যদি টেবিলের অন্য দিক থেকে কথা শুনতে হয়? তাই কথার ভাঁজে আগেভাগেই শুনিয়ে দেন হ্যাং আউটের জন্য দু’জনের সমান খরচ করাটাই বেস্ট। মুভি দেখতে গেলেও তাই। টিকিট যদি ছেলেটি কাটে, পপকর্ন কেনার ভার নেবেন তিনি। পৌলমীর মতো আরও অনেক মেয়েই এই পন্থায় আগ্রহী। |
|
ছেলেদের অহংবোধও নেহাত কম নয়। তার সঙ্গে মিশে আছে আবেগও। খ্যাতনামা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত চন্দ্রচূড় সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘ডেটে বেরোচ্ছি মানে মেয়েটিকে আমার ভাল লাগে। যাকে আমি পছন্দ করি তাকে হ্যাপি ফিল করাতে চাই।”
তাই কখনওই খরচ শেয়ার করতে চান না। সবটাই নিজে দিতে চান। কোনও মেয়েকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলার ঘোর বিরোধী তিনি। অন্য কেউ করুক তাও চান না।
সেভেন্টি-থার্টি, অবাধে পার্টি
অনেকে আবার খরচের ব্যাপারটা নিয়ে নিজেরাই বেশ সমঝোতা করে নিচ্ছেন। খরচ ভাগাভাগি করে নিয়ে। পার্টি-মৌজ-মস্তি চলছে রমরমিয়ে। টাকা কম নিয়ে ডেটে বেরিয়ে নো চিন্তা, নো টেনশন। ছেলেটি হয়তো খরচের সত্তর শতাংশ দিল। বাকিটা বর্তাল মেয়েটার উপরে। চাপ কমল। টাকার ইস্যু নিয়ে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হল না। প্রথম দিন ডেটে গিয়ে ভাল লাগলে দ্বিতীয় দিনের হাতছানি উপেক্ষা করার সাধ্য আছে কি?
তুমি থাকতে আমি কেন
তবে বেশির ভাগ মেয়েই মনে করে, ছেলেরাই সব সময় টাকা দিক। সে প্রথম ডেট হোক অথবা ভাল লাগা পরিণতি পাক ভালবাসায়...চিরাচরিত এই ধারণার বদল হয়নি এখনও। আগের মতোই এককাট্টা হয়ে ছেলেদের উপর নির্ভর করা। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। কলেজছাত্রী পিয়াস যেমন তাঁর হ্যাং আউটের খরচের ব্যাপারে মাথা ঘামান না। প্রথম দেখার পর প্রেম। তার পর থেকে পুরোটা বয়ফ্রেন্ডের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। “খরচাপাতির বিষয় ও-ই বোঝে। এ নিয়ে আমি ভাবি না,” বলছেন তিনি। |
টিপস |
• সৌজন্য বজায় রাখতে প্রথম ডেটে ছেলেরাই খরচ করুন।
• খরচ শেয়ার না করলেও অন্তত ভদ্রতার খাতিরে মেয়েরা মুখে টাকা দেওয়ার কথা বলুন।
• আয়ের পরিমাণ সমান হলে দু’জনই সমান ভাবে টাকা দিতে পারেন।
• পকেটে টান থাকলে কোনও সুলভ জায়গায় ডেটে যান।
• চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করুন। খরচ করতে গিয়ে সঙ্গীটি অস্বস্তিতে পড়ছে কি না লক্ষ রাখুন।
• সঙ্গী অস্বস্তিতে পড়লে তাকে চাপমুক্ত থাকতে বলুন। সাধ্যমতো সাহায্য করার আশ্বাস তাকে দিন। |
|
এ বেলায়ই মনবদল?
উত্তর কলকাতার এক কলেজছাত্র সুব্রত মল্লিকের স্বভাব একটু অন্য রকম। তাঁর মতে প্রথম সাক্ষাতে কোনও মেয়েকে তাঁর ভাল নাও লাগতে পারে। তাই একটা মেয়ের পিছনে অকারণ ব্যয় করতে একেবারেই নারাজ তিনি। সম্মানহানির ভয় নেই? বেশ রাশভারী গলায় বললেন, “এ বেলায় মেয়েদের সমান অধিকারের কথা মাথায় আসে না? আর সব ব্যাপারেই নিজেদের অধিকার নিয়ে যত লড়াই?”
টাকার প্রশ্ন এলে অস্বস্তিতে পড়তে হয় বইকী। তবে সামলে নেওয়ার দায় কিন্তু নিজেদেরই নিতে হবে। তুচ্ছ বিষয়ে মতবিরোধ না হওয়াই মঙ্গল। সমঝোতা করে গড়ে তুলুন নিবিড় সম্পর্কের বুনোট। এটাই কাম্য। |
|