থানায় ঢুকে পুলিশকে ‘শাস্তি’ তৃণমূল নেতার
তাবড় তৃণমূল নেতা ইংরাজিতে কিঞ্চিৎ গাল-মন্দ করায় মৃদু আপত্তি জানিয়েছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। ‘দাঁড়া আসছি’ বলে মিনিট পনেরোর মধ্যে জনা পনেরো দলীয় কর্মী নিয়ে থানায় চড়াও হয়ে সেই পুলিশ কর্মীকে ‘উচিত শাস্তি’ দিয়ে গিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা।
শুক্রবার রাতে কোচবিহারের হলদিবাড়ি থানার দ্বারিকা উপাধ্যায় নামে মধ্য-পঞ্চাশের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টরের গলা টিপে, কলার চেপে বুকে ঘুঁষি মেরে সুব্রত বসু নামে ওই নেতা শাসিয়ে যান, “আর যেন মুখে মুখে কথা বলতে না শুনি!”
হম্বিতম্বিটা যে মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে শনিবার সকালে তা উপলব্ধি করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা এ দিনে সকালেই থানায় এসে চাপ দিতে থাকেন। শুরু হয় বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ-উপরোধ। কিন্তু থানার অন্দরে পুলিশ কর্মীর কলার চেপে ধরে এমন মারধরের ঘটনাকে ‘মিটিয়ে’ নিলে উর্দির অপমান হবে। নীচু তলার পুলিশ
অভিযুক্ত সুব্রত বসু। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেবে। জেলা পুলিশ কর্তারা তাই আর ঝুঁকি নেননি।
বেলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুব্রত বসু-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “থানায় ঢুকে কর্তব্যরত অফিসারকে মারধরের অভিযোগে ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজও শুরু হয়ে গিয়েছে।”
সুব্রতবাবু অবশ্য মারধরের কথা মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “ওই অফিসার আমাকে ফোনে গালাগাল দেন। কেন গালি দিচ্ছেন তা জানতেই থানায় গিয়েছিলাম।” কিন্তু থানায় ফোন করেছিলেন কেন? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর অবশ্য ওই তৃণমূল নেতার কাছে মেলেনি। পালাবদলের পরে এ ঘটন্য অবশ্য নতুন নয়।
মন্ত্রী-পুত্রের বিয়ের জিনিসপত্র নিয়ে কলকাতার নিবেদিতা সেতুতে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই উঠে পড়েছিল একটি ম্যাটাডোর ভ্যান। নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ি আটকাতেই ছুটে এসেছিলেন তৃণমূলের এক শ্রমিকনেত্রী। তারপর সটান চড় কষিয়ে দিয়েছিলেন নিরাপত্তাকর্মীর গালে। কিছু দিন আগে চুঁচুড়া থানার ভিতরে স্থানীয় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের চড়ে চোখে আঘাত লেগেছিল এক সাব-ইন্সপেক্টরের। কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের অবমাননার সেই তালিকায় শেষ সংযোজন দ্বারিকাবাবু।
কী ঘটেছিল শুক্রবার রাতে?
পুলিশ জানায়, ওই দিন রাত ন-টা নাগাদ শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ধানহাটিতে একটি বিয়েবাড়ির সামনে মদ্যপ এক যুবক গোলমাল পাকায়। পুলিশ তাকে সরিয়ে দেয়। তৃণমূল নেতা সুব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ ওই যুবককে কোন পুলিশকর্মী এমন ‘অপমান’ করেছে, জানতে চেয়ে রাতে থানায় ফোন করেন ওই তৃণমূল নেতা। ডিউটি অফিসার সে সময় খেতে গিয়েছিলেন। ফোন ধরেন দ্বারিকাবাবু। তিনি বলেন, “ধানহাটিতে কে গিয়েছিল খোঁজ নিয়ে বলছি।” সেই খোঁজটা দিতে তাঁর একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। আর তখনই ক্ষুব্ধ সুব্রিতবাবু তাঁকে বলেন, “ইডিয়ট, এই খবরটা দিতে এতক্ষণ লাগে।’’ দ্বারিকাবাবু তার প্রতিবাদ করেন। পাল্টা শুনতে হয়, ‘‘দাঁড়া আসছি, থানায় গিয়ে মজা দেখাচ্ছি।’’
রাত এগারোটা নাগাদ সুব্রতবাবু অনুগামীদের নিয়ে থানায় ঢুকে দ্বারিকাবাবুর গলা টিপে ধরেন বলে অভিযোগ। তাঁর বুকে ঘুঁষিও মারা হয় বলে জানান পুলিশকর্মীরা। তারপর টেবিল বাজিয়ে শাসিয়ে ফিরে যান।
এ দিন বেলায় মাথাভাঙার এসডিপিও সীতারাম সিংহ ওই থানায় যান। হলদিবাড়ি ব্লক তৃণমুল সভাপতি গোপাল রায়, ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব সরকার ও টাউন তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বসুও (সুব্রতবাবুর ছেলে) আসেন। তাঁরা বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উর্দির ‘মান’ বাঁচাতে মিটিয়ে নেওয়ার পথে আর হাঁটেনি পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.