হৃদরোগী আরাবুলের ঘর নেতার ভিড়েই জমজমাট
তটাই অসুস্থ যে তাঁকে রাখতে হয়েছে আইসিসিইউ-এ। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আরাবুল ইসলামের ‘অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম’ দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ তিনি হৃদরোগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।
আইসিসিইউ বলে কথা! সংক্রমণের ভয়ে এমনিতেই সেখানে সাধারণের প্রবেশ অত্যন্ত বেশি মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত। এমনকী সকালে আরাবুলের পরিবারকে পর্যন্ত দেখা করতে দেননি এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিকেল গড়াতেই উল্টো ছবি। একের পর এক তৃণমূল নেতা আসছেন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে। আরাবুলের আইসিসিইউয়ে ঢুকেও পড়ছেন। এমনকী ভিজিটিং আওয়ার শেষ হওয়ারও অনেক পরে ঢুকলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আর যে রোগী হৃদরোগের দোরগোড়ায়, তিনি নেতা-মন্ত্রীদের কাছে অনর্গল বিলাপ করে গেলেন, দলের জন্য এত করেও তাঁকে হাজতে যেতে হল!
নিষেধ সত্ত্বেও কী করে আইসিসিইউয়ের মধ্যে এত লোক ঢুকল? সুপার তমাল ঘোষ বলেন, “আমাদের কড়া নিষেধ ছিল। বাইরে পুলিশ প্রহরাও ছিল। কিন্তু এখন পুলিশ বলছে, কিছু লোক নাকি ঠেলেঠুলে ঢুকে গিয়েছে।”
ফিরহাদ ছাড়াও শনিবার এসএসকেএমের আইসিসিইউ-৭-এ গিয়ে আরাবুলের সঙ্গে দেখা করেন রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূলের ক্যানিং-২-এর সভাপতি সওকত মোল্লা-সহ ভাঙড় ও ক্যানিং এলাকার বহু তৃণমূল নেতা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ফিরহাদ আসার পর আরাবুল তাঁকে বলেন, “দাদা, আমি তো সব জানিয়েছিলাম। দলকে না জানিয়ে তো কিছু করিনি।” হাজতে থাকার সময়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে আরাবুল অভিযোগ করেছিলেন, দলই তাঁকে ‘শেষ করে দিল’। মনে করা হচ্ছে, সেই ক্ষোভ সামাল দিতেই এ দিন আইসিসিইউয়ে নেতা-মন্ত্রীদের সদলবল হাজিরা।
হাসপাতালে আরাবুল। —নিজস্ব চিত্র
এক রাত হাজতবাসের পর বুকে ব্যথা ও অস্বস্তি হচ্ছে বলে জানানোয় শুক্রবার গভীর রাতে সোনারপুর থানার লকআপ থেকে আরাবুলকে এম আর বাঙুর হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে রেফার করা হয় এসএসকেএমে। রাতেই সেখানে আইসিসিইউ-এ ভর্তি করা হয় আরাবুলকে। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, আরাবুল ‘অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত।
কাকে বলে ‘অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম’? এসএসকেএমে আরাবুল যাঁর চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সইদুল ইসলামের ব্যাখ্যায়, “এটা হার্ট অ্যাটাকের বর্ডারলাইন। হৃদ্পিণ্ডের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে গিয়ে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়। তাই বুকে ব্যথা হয়।”
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম’ কোনও বিশেষ এক ধরনের সমস্যা নয়। এর নানা রকম রূপ হতে পারে। হার্ট অ্যাটাককেও ‘অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম’ বলা যায়। আবার এমনও হতে পারে, রোগীর বুকে ব্যথা করছে, কিন্তু ইসিজি বা ইকোকার্ডিওগ্রাম করে কোনও সমস্যাই পাওয়া গেল না। তখন শুধু বাহ্যিক লক্ষণ (ক্লিনিক্যাল সিম্পটমস)-এর ভিত্তিতে তাঁকে ভর্তি করা হল। সে ক্ষেত্রে পরে বলা যেতে পারে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলেই তিনি হয়তো হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে গেলেন।
ভর্তি করানোর আগে রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আরাবুলের হৃদযন্ত্রে কি কোনও সমস্যা ধরা পড়েছিল? বাঙুর হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যে চিকিৎসক আরাবুলের ইসিজি করেছিলেন, সেই মৃত্যুঞ্জয় সরকার তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, ‘কিছু’ সমস্যা পাওয়া গিয়েছে। তবে তা গুরুতর নয়। ইকোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি-তে এসএসকেএম কী পেয়েছে, তা জানতে চাওয়ায় সেখানকার  চিকিৎসক সইদুল ইসলাম বলেন, “সব কিছু অত ব্যাখ্যা করা যায় না। বুঝে নিন।” আরাবুল কেমন আছেন? তাঁর উত্তর, “ভাল আছেন। হুঁশে আছেন। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আমরা নজরে রেখেছি।”
এসএসকেএমে এখনও আরাবুলের অ্যাঞ্জিওগ্রাম হয়নি। যদিও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সত্যজিৎ বসু বললেন, “রোগী কষ্টের কথা জানালে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। হৃদ্পিণ্ডের অবস্থা জানার জন্য চিকিৎসক অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করার পরামর্শ দেন। ঠিক কতটা সমস্যা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়।” এসএসকেএমের সুপার তমাল ঘোষের বক্তব্য, এনজাইম পরীক্ষায় কিছু সমস্যা পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আরাবুলের হৃদযন্ত্রের মাংসপেশী পুরোপুরি ভাল নেই। সোমবার একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হবে। তারা ঠিক করবে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা দরকার কি না। কেন এই দেরি? সুপারের জবাব, “যে ডাক্তার চিকিৎসা করছেন, এটা
তাঁর সিদ্ধান্ত।”
সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, কুণাল সরকার বা সুনীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেক চিকিৎসকের মতে, শুধুমাত্র বাহ্যিক লক্ষণ দেখে অনেক সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, সে ক্ষেত্রে তো যে কেউ বুকে ব্যথা করছে বলে মৌখিক দাবি করেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। চিকিৎসকরা বলছেন, “এই ফাঁক অবশ্যই থেকে যায়। তবে সাধারণত এই সব ক্ষেত্রে রোগীর পূর্ব ইতিহাস, বয়স, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ বা মানসিক চাপ আছে কি না, পারিবারিক ইতিহাসে হৃদরোগ আছে কি না, সেই বিষয়গুলি গুরুত্ব পায়।”
যদিও একাধিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এ-ও বলেছেন, ভর্তি করানোর চাপ থাকলে অনেক সময় রোগী ‘অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত’ বলে ডাক্তার জানিয়ে থাকেন। কারণ শব্দবন্ধটার কোনও নির্দিষ্ট পরিধি নেই। এতে সরাসরি রোগের কোনও প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন থাকে না। আরাবুল ইসলামের বয়স, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও মানসিক চাপের ইতিহাসের জন্যই তিনি বুকে ব্যথার কথা বলায় আর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে বলে জানান এসএসকেএম ও বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
তবে আরাবুলের অবস্থা যথেষ্ট স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তিনি টুকটাক কথাও বলেছেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। দুপুরে তাঁকে সব্জি আর চিকেনের স্যুপ খেতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন আরাবুলকে কোনও জেরা করা হয়নি। ভাঙড়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা অবশ্য জানিয়েছেন, বুকের ব্যথাটা সামান্য হলেও রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.