সম্পাদকীয়...
জয়ং দেহি
লান্স আর্মস্ট্রং ক্যান্সারে আক্রান্ত হইয়াছিলেন, তাহা বহু প্রত্যঙ্গে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল, হৃদয়ে ইতিবাচকতা বজায় রাখিয়া ঘাতক অসুখটিকে জয় করিয়া স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়া আসাই এক প্রশংসার্হ কৃতিত্ব। আর্মস্ট্রং কেবল তাহাই করেন নাই, তিনি উহার পর ক্রমান্বয়ে সাত বার তুর দ্য ফ্রাঁস জিতিয়াছেন, যাহা এক অতীব কঠিন সাইকেল-রেস, যাহা এক বার জিতিতেও প্রবল শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন, আর সাত বৎসর ধরিয়া ওই পরিমাণ সক্ষমতা রক্ষা করা তো অতিমানুষিক কাণ্ড। তাহার পর হইতেই আর্মস্ট্রং হইয়া যান মনুষ্যের অসাধ্যসাধনের বিশ্বব্যাপী প্রতীক, কেবল ক্যানসার জয়ের নহে, যে কোনও প্রতিকূলতা অতিক্রম করিবার, নিজ সম্বলটুকু লইয়া অসম্ভবের সাগর পাড়ি দিবার প্রতীক। সাইকেল প্রতিযোগিতাটি যেন যে কোনও জটিল প্রতিবন্ধ, আর দ্বিচক্রযানের উপর ঝুঁকিয়া বসা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ব্যক্তিটি মনুষ্যজাতির অদম্য প্রয়াসের প্রতিভূ। দিকে দিকে অবসন্ন, হাল-ছাড়িয়া-দেওয়া ব্যক্তিগণ আর্মস্ট্রং-এর জীবনী পড়িয়া পুনরায় রণাঙ্গনে তাল ঠুকিয়া দাঁড়াইতেন। আর আজ যখন সেই আইকন সর্বসমক্ষে স্বীকার করিলেন যে, এই রূপকথা সম্ভব হইয়াছিল মাদকের সাহায্যে, অসৎ উপায়ে ও পরিকল্পিত অন্যায় কৌশলে, তাঁহার ভাবমূর্তিই কেবল কলুষিত হইল না, মানুষের এক বিশাল ভরসাস্থল চূর্ণ হইয়া গেল। তবে কি নিষ্ঠা অধ্যবসায় আত্মবিশ্বাসের পাথেয় লইয়া অমৃত আয়ত্ত করা সম্ভব নহে? তবে কি অপরাজিত মনুষ্যের তুঙ্গস্থ জয়কেতনটি আদতে সফেন স্তোক? ল্যান্সের উচ্চতা ছিল মহাকাব্যিক। আজ যদি আমরা শুনি ভীম ডোপ করিয়া জরাসন্ধকে চিরিয়াছিলেন বা হনুমান মাদক লইয়া গন্ধমাদন উৎপাটন করিয়াছিলেন, তাহা হইলে যেমন শ্রদ্ধেয় কাব্যগুলির যতেক মহিমা ও কৌলীন্য নিমেষে বাষ্পীভূত হইবে, তেমনই এই স্বীকারোক্তি আমাদিগের মিরাক্ল-প্রত্যয়কে ভূলুণ্ঠিত করিল।
ইহার ফল দুইটি। এক, যে কোনও প্রতিযোগিতার প্রতিই বিশ্বাস অন্তর্হিত হওয়া। আর্মস্ট্রং যে প্রক্রিয়ায় কয়েক জন সহচর লইয়া কর্তৃপক্ষকে ও আমাদের দিনের পর দিন ঠকাইয়াছেন, অন্যান্য প্রতিযোগিতাতেও তাহা ঘটিতেছে না তো? কোটি কোটি উত্তাল মানুষের প্রিয় খেলা ক্রিকেট, তাহাও অনেকাংশে নিখুঁত চলচ্চিত্রের ন্যায় ‘নির্মিত’ নহে তো? বেটিং-এর পান্ডাগণ তাহা নিয়ন্ত্রণ করিতেছেন না তো? রিয়েলিটি শো-তে উঠতি গায়ককে সমর্থন করিয়া সহস্র এসএমএস পাঠাইলাম, তাহা ‘গট আপ’ নহে তো? দ্বিতীয় ফল: নিষ্ঠুর দর্পণের ন্যায় ইহা আমাদিগকে আপনার মুখ আপনি দেখিতে সাহায্য করিল। আমর্স্ট্রং বলিয়াছেন, ক্যানসার হইতে ফিরিবার পর, যে কোনও মূল্যে তিনি জয় চাহিয়াছিলেন। এই বাক্য এই যুগকে অনবদ্য ব্যাখ্যা করে। যেন তেন প্রকারেণ জয়ী হইবার এই প্রবণতা বর্তমান যুগকে আচ্ছন্ন করিয়াছে। গর্বের সহিত উচ্চারিত হয়: রৌপ্যপদক কেহ জিতিতে পারে না, স্বর্ণপদক হারিতে পারে মাত্র। অর্থাৎ অংশ লইয়াছি, সৎ ও নিষ্ঠ হইয়া জিতিবার প্রয়াস চালাইয়াছি, আনন্দ পাইয়াছি, ইহা যথেষ্ট নহে, একমাত্র জিতিবার, অহংকে তুষ্ট করিবার লক্ষ্যটিই সম্মুখে উজ্জ্বল হইয়া রহিবে। এই আকাঙ্ক্ষা দুর্নীতির জননী। ছলে বলে কৌশলে, নীতিরহিত হইয়া বা যোগ্য ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে রুখিয়া, ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে পৌঁছাইবার রেস তো অসততায় ম-ম করিবেই। আমাদের বিবেকের টুঁটি টিপিয়া টাকা করিয়া লইবার দৌড়গুলিতেও তাই আর্মস্ট্রং-এর সাইকেল-টায়ারের ছাপ রহিয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.