আশ্বাসে ভরে না পেট, গ্রামবাসীরা সভা ছাড়লেন
মিটিঙে গেলে ‘ভাত মারা যাবে না’।
পেট চুক্তির ভাত-ডাল-তরকারির খিদে নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভাড়া করা বাসে ঠাসাঠাসি করে উঠে বসেছিলেন তাঁরা।
দীর্ঘ বাসযাত্রা। তার পর প্রায় খোলা মাঠে ঠা ঠা রোদ্দুরে অপেক্ষা। বেলা গড়িয়ে দুপুর। প্রতিশ্রুতিই সার। দিনভর উপার্জনের মূল্য ‘পুষিয়ে’ দেওয়ার আশ্বাসও ফাঁকা কথাই রয়ে গিয়েছে।
উপোসী এবং উপার্জনহীন নগর উখরা, দীঘলগ্রামের গীতা শীল, আলপনা হালদার রেহেনা মণ্ডলেরা তাই মুখ্যমন্ত্রী সভা শুরু করে সবেমাত্র জোড় হাতে নমস্কার জানাতেই উসখুস শুরু করেছিলেন। ফিসফাস শুরু হয়, ‘মমতাকে দেখার আশ মিটেছে বাবা, এ বার চল্!’
সভার সামনে বাঁশের ব্যারিকেড। তার পরে এক টুকরো ফাঁকা জায়গা। মাথা নীচু করে সে পথে বেরনোর চেষ্টা করতেই রে রে করে ছুটে এসেছিলেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এগিয়ে এসে তাঁদের পথ আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশও।, ‘এখন বেরোনো যাবে না’। রেহেনা মণ্ডল খিঁচিয়ে ওঠেন, “মজা নাকি! ভাত খাওয়াবে বলে সারাটা দিন বসিয়ে রাখলে, এখন ঘরে ফিরতেও দেবে না!” কাঁচুমাঁচু মুখে দলীয় স্বেচ্ছাসেবী কিছু বলার চেষ্টা করতেই মাঝ বয়সী গীতা মণ্ডল বলেন, “আমাদের কি খিদেও পেতে নেই বাবা, জোর করে সভায় আটকে রাখবে?”
মমতা বন্দোপাধ্যায় তখন সবেমাত্র মঞ্চে থাকা নেতা-আমলাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সামনের ব্যারিকেডের ওপারে উসখুস করতে থাকা ভিড়টা চোখে পড়ে যায় তাঁরও। মাটিতে বসে থাকা দর্শকেরা তখন একে একে উঠে দাঁড়াচ্ছেন। পিছন দিক থেকে একটু একটু করে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে জনতা। বাঁশের ব্যারিকেডের বাইরে সাদা পোশাকের পুলিশ আর স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মৃদু কথা কাটাকাটিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
মমতা এ বার নিজেই এগিয়ে আসেন। বলেন, “ভাইয়েরা ওঁদের যাওয়ার জন্য একটু রাস্তা করে দিন। আমি জানি, অনেকেই বাড়িতে অনেক অসুবিধা করে এসেছেন। অসুস্থ মানুষ, বাচ্চা ফেলে এসেছেন অনেকে। ওঁদের ফিরে যেতে দিন...।”
আবেগে: জমির পাট্টা পাওয়ার আনন্দে মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে
ধরলেন এক মহিলা। হরিণঘাটায় শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে ব্যারিকেডের বাঁধন একটু আলগা হতেই হুড়মুড়িয়ে বেরোতে শুরু করেন গায়েত্রী দাস, আলপনা হালদার, উমা বিশ্বাসেরা। ঘরমুখো সেই ভিড়ে যান দলের নগরউখড়া অঞ্চল কমিটির সদস্য উত্তম ঘোষও। আপনিও চললেন?
উত্তমবাবুর সাফাই, ‘‘ফিরতে হবে অনেক দূর। তা ছাড়া মহিলাদের এনেছি তো সন্ধের মধ্যে ঘরে ফিরিয়ে দিতে হবে। দিন-কাল ভাল নয়!” মুখ্যমন্ত্রী তবু একটা শেষ চেষ্টা করেন, “কিন্তু আমার কথাটা একটু শুনবেন না! আমি কিন্তু আপনাদের কথাই বলব। বেশি ক্ষণ নয়, মিনিট পনেরো-কুড়ি বলব। মানুষের জন্য কিন্তু মানুষই কথা বলে, টিভি কথা বলে না।’’ ভিড়টা তবু সভাস্থল ছেড়ে বেরোতে উন্মুখ। পিছন থেকেও ঘরের পথ ধরেছেন অনেকেই। মমতা আর চেষ্টা করেননি। প্রসঙ্গ পাল্টে জেলার উন্নয়নের ফিরিস্তিতে ফিরে যান।
পঞ্চায়েত নিবার্চনের মুখে ফাঁকা হতে থাকে মুখ্যমন্ত্রীর সভা। ফিরে যাওয়ার মুখে ভোমরা গ্রামের অসিত রায় বলেন, “কাল গ্রামে ঘুরে তৃণমূল নেতারা প্রচার করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় চলো, জানিয়েছিলেন কাজ না করলেও একশো দিনের মজুরি পুষিয়ে দেবেন ওঁরা। দিনভর সামান্য আয়ও তো হল না। মিটিঙে বসে থাকলে চলবে?” তৃণমূল নেতারা অবশ্য এমন আশ্বাসের কথা অস্বীকার করছেন। তবে দীঘলগ্রামের অন্তত জনা চারেক বাসিন্দাও জানিয়েছেন, দিন কয়েক ধরে তাঁদেরও ওই আশ্বাস দিচ্ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
শুক্রবার, সাত সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় রওনা হওয়ার সময়ে পেটে প্রায় কিছুই পড়েনি বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৪৪টি ভাড়া বাসে সভায় আসা গ্রামবাসীদের অধিকাংশেরই। বেলা গড়িয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতির ভাত তো দূরের কথা হরিণঘাটার খামার মাঠে চা, ঘুগনির দোকানও চোখে পড়েনি তাঁদের। বাসে সেই এক বার, হাতে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল সাকুল্যে দু-স্লাইস পাঁউরুটি আর একটা কলা। তাতে কি পেট ভরে? সভাস্থলের ত্রিসীমানায় কোনও দোকান নেই। এক ভাঁড় চা-ও জোটেনি। পানীয় জলের ট্যাঙ্কগুলোও ঠন ঠন করছে।
“তা বলে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে আর ওঁরা ফিরে যাবেন?” বেজায় চটেছেন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা।
ফিরতি পথে ভোমরা গ্রামের এক যুবক শুধু বলেন, “আশ্বাসে আর পেট ভরে না দাদা!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.