ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবাশিস বিশ্বাসের ইস্তফাপত্র পেশের জেরে নানা পক্ষের চাপান-উতোর শুরু হল রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে। প্রকাশ্যে এসেছে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর একাংশের বিরোধ। কলেজের দৈনন্দিন কাজে স্থানীয় বিধায়ক ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের হস্তক্ষেপ করার কথা প্রকাশ্যে আসায় তৃণমূলের অন্দরেও নানা প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতাদের কয়েক জন জানান, অতীতে রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনায় কার্যনির্বাহী সভাপতি তিলক চৌধুরীর নাম জড়িয়ে পড়ে। তাঁকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হয়। এ বার কার্যত জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কলেজের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠায় প্রদেশ নেতারা কী করেন দেখতে চাইছেন তৃণমূলের ওই অংশ।
গত বুধবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবাশিস বিশ্বাস উপাচার্যের কাছে ইস্তফাপত্র পেশ করেন। চিঠিতে পারিবারিক কারণ লিখলেও পরে তিনি বলেন, “কলেজ চালাতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের নাম না-করে তাঁর মন্তব্য, “কলেজ চালানোর ব্যাপারে উপাচার্য হস্তক্ষেপ করতে পারেন। তাঁর উপরে রাজ্যপাল তথা আচার্য রয়েছেন। আচার্যের উপরে কোনও আচার্য যদি কলেজ চালাতে চান সেটা মানা সম্ভব নয়।” যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি অমলবাবু বারেবারেই দাবি করেছেন, “রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।” দেবাশিসবাবু এ দিন জানান, কলেজের শিক্ষকরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেরাই ঠিকঠাক ক্লাস নিতেন। একইসঙ্গে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি। শিক্ষকদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশের মধ্যেই নানা প্রশ্ন, ক্ষোভ রয়েছে। এ দিন কলেজে টিচার্স কাউন্সিলে বৈঠক হয়। কাউন্সিল সম্পাদক অশোক দাসের অভিযোগ, “দেবাশিসবাবু মিথ্যা বলছেন। কলেজ পরিচালনায় বাইরে থেকে রাজনীতিকের হস্তক্ষেপ এবং চাপের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পরিচালনার ক্ষেত্রে দেবাশিসবাবুকে শিক্ষকেরা সবসময়ই সহযোগিতা করেছেন। তিনি কলেজ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাজে কথা বলছেন।” কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে টিচার্স কাউন্সিলের তরফে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে। কাউন্সিলের তরফে দাবি করা হয়, বিধায়ক অমল আচার্যের চেষ্টাতেই কলেজের ভর্তি সমস্যার সমাধান হয়। এ দিন বিকালে পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে কলেজ কর্মচারী সমিতির সহ সম্পাদক তপন নাগ দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তপনবাবুদের অভিযোগ, দেবাশিসবাবুর নির্দেশে তাঁরা কলেজে মধ্যে মিটিং করার অনুমতি পাননি। তাঁদের দাবি, দ্রুত দেবাশিসবাবুকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ না করলে কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক হবে না। |