তোলাবাজির রমরমা
রাজনীতির যোগ নেই, বলছেন পুলিশ সুপার
কোচবিহারে ফের তোলা আদায়ের অভিযোগ বেড়ে গিয়েছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির চাপানউতোরও বাড়ছে। বামেরা তো বটেই কংগ্রেস ও গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টির তরফেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় সব দলের নেতারা প্রায় একই সুরে তোলাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের মদতকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। একই সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য ওই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বামেদের বিরুদ্ধেই তোলাবাজির মত ঘটনায় মদত দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। সব মিলিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে বাসিন্দাদের। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল অবশ্য বলেন, “তোলাবাজি নিয়ে ওই ঘটনা বলে আমাদের কাছে অভিযোগ নেই। পুরানো রেকর্ডেও সেরকম কিছু দেখিনি। ঘটনার সঙ্গে রাজনীতিরও যোগসূত্র নেই।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোচবিহার জেলা জুড়েই তোলা আদায় চক্রের সদস্যরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জমি কেনাবেচা থেকে ইট তৈরির জন্য মাটি সরবরাহ, নদী থেকে বালি, পাথর তোলা, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারদের পাশাপাশি ভিন রাজ্যগামী ট্রাক থেকে বিভিন্ন চাঁদার মোড়কে তোলাবাজির কারবার চালানো হচ্ছে। ভয়ে কিংবা বাড়তি গোলমালের আশঙ্কায় ভুক্তভোগীরা অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
বহু ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনার কথা জানলেও অভিযোগ না থাকার অজুহাতে হাত গুটিয়ে থাকছে বলেও অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে ডাউয়াগুড়িতে যুবক খুনের ঘটনার সঠিক তদন্ত হলেও গোলমালের নেপথ্যে তোলাবাজির ঘটনা উঠে আসবে। যদিও তোলাবাজির অভিযোগ ঘিরে যুযুধান রাজনৈতিক নেতারা দায় নিয়ে চাপানউতোরেই দায় সারছেন। সেটা অবশ্য জেলার বিভিন্ন দলের নেতাদের কথাতেও স্পষ্ট হবে।
বাম শিবিরের সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “ডাউয়াগুড়িতে দুই পক্ষের সমাজবিরোধীদের মধ্যে গোলমাল হয়। সকলেই তৃণমূলের সমর্থক বলে অভিযোগ রয়েছে। তোলাবাজি থেকে পাওয়া টাকার বখরা নিয়ে গোলমাল বলে শুনেছি। পুলিশ-প্রশাসন কেন কঠোর হাতে ওই সব কারবার বন্ধ না করলে এমন ঘটনা বাড়বে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের বক্তব্য, “সরকার বদলের পর তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য যে বেড়েছে, তা তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাই বলেছেন। কোচবিহারেও ইটভাটা, ঠিকাদারদের কাছ থেকে তোলা নেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে।”
গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি, কংগ্রেসের মত দলের নেতারা অবশ্য মনে করছেন তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। সিতাইয়ের কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায় বলেন, “তোলাবাজি সহ যেসব ঘটনার জন্য মানুষ বামেদের প্রত্যাখান করেছে। এখন সেটাই হচ্ছে। আসলে শিবির বদলে ওই বামেরাই তো তৃণমূলে ভিড়েছে। জমি বিক্রি, ব্যবসা নানা ক্ষেত্র থেকে তোলাবাজি চলছে।” গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টির সম্পাদক বংশীবদন বর্মনের প্রতিক্রিয়া, “আগেও যা হয়েছে, এখনও সেটাই হচ্ছে। তা ছাড়া নতুন সরকার তোলাবাজির মত অসামাজিক কাজ বন্ধে ততটা আগ্রহী নয় বলেও আমাদের ধারণা।”
দায় নিয়ে ওই চাপানউতোরে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, ওসব কাজে দলের কেউ জড়িত নন। বামেরা এমন কারবার চালাচ্ছেন। কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “তোলাবাজির মত ঘটনায় বামেদের লোকেরাই জড়িত। আমরা প্রশাসনকে শক্ত হাতে সে সব দমন করতে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল আহমেদও স্বীকার করেছেন, জেলায় তোলাবাজি চলছে। তিনি বলেন, “কোনও তোলাবাজই দলের লোক নয়। ডাউয়াগুড়ি থেকে জেলার অন্যত্র এসব যারা করছে তারা বামেদের মদতে কারবার চালাচ্ছে। পুলিশের উচিত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।’” ওই প্রসঙ্গেই সিপিএম জেলা সম্পাদকের চ্যালেঞ্জ, “সে রকম কেউ থাকলে চিহ্নিত করে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। আমরা তো আর না বলিনি।” এদিকে ডাউয়াগুড়িতে খুন হওয়া যুবকের পরিবারের দাবি, মৃত শুভঙ্কর সরকার তৃণমূল সমর্থক। দলের জেলা সভাপতি অবশ্য তা মানতে চাননি। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার কথায়, “সম্প্রতি এলাকার একটি জমি কেনার পরে একটি পক্ষকে ‘ডোনেশন’ দেওয়া হয়। পরে অন্য পক্ষ ঝামেলা করে। তা নিয়ে বিবাদেই গোলমাল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.