এলাকায় তোলা আদায়ের কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টা কোচবিহারে
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে গুলি করে, কুপিয়ে খুন
লাকায় তোলা আদায়ের কর্তৃত্ব কায়েম করা নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর গোলমালের জেরে এক যুবককে গুলি করে কুপিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার
নিহত শুভঙ্কর সরকার।
ডাউয়াগুড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম শুভঙ্কর সরকার (৩০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। যুবকের পিঠে গুলির ক্ষত রয়েছে। মুখ ও মাথাতেও আঘাতের চিহ্ন আছে। ঘটনার সময় ডাউয়াগুড়ি বাজার এলাকায় এক ক্লাব কর্তার একটি ঘরেও ব্যাপক ভাঙচুর হয়। পরিবারের তরফে পুরানো শত্রুতার জেরে শুভঙ্করকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তোলাবাজি নিয়ে লড়াইয়ের জেরে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ যে অভিযোগ করেছেন, সেই ব্যাপারে শুভঙ্করের বাড়ির লোকের বক্তব্য, “পুলিশ সব অভিযোগই খতিয়ে দেখুক। তা হলেই প্রকৃত কারণ সামনে আসবে।”
পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়ালও তোলা আদায় নিয়ে গোলমালের অভিযোগ শুনেছেন। তিনি বলেন, “ওই রাতে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জখম যুবককে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খুন ও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪টি বোমা, ৫ রাউন্ড গুলি ও ফাঁকা কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে।” তিনি জানান, গোলমালের সময় চক্রশক্তি ক্লাব ভাঙচুর হয়। কাছে অন্য একটি ঘরেও হামলা হয়। ঘটনায় জড়িত বিবেকানন্দ কলোনি এলাকার কিছু যুবকের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান। পাশাপাশি, তোলা আদায়ের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ওই এলাকায় বহুদিন ধরেই দুটি গোষ্ঠী তোলাবাজি করছে। যাঁরা ওই কাজে অভিযুক্ত তাঁরা একদল একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। অন্য দল পাশের একটি ক্লাবে যাতায়াত করে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ গোলমাল শুরু হয়। ডাউয়াগুড়ি বাজার লাগোয়া একটি ক্লাবে বসেছিলেন স্থানীয় কিছু যুবক। ওই সময় অন্তত ৩০ জন যুবকের একটি দল আচমকা ট্রান্সফরমার অচল করে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হামলাকারীরা বিবেকানন্দ কলোনি এলাকার অন্য একটি ক্লাবের সদস্য বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই হামলার সময় পরপর বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। শুরু হয় গুলি বৃষ্টি। ক্লাবটিতে ভাঙচুর চালানোর পরে লাগোয়া আরও একটি টিনের ঘরে হামলা চলে। সেখানে টিভি দেখছিলেন খাপাইডাঙার বাসিন্দা শুভঙ্কর। তিনি সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে রাস্তায় টেনে এনে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এলাকায় পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শুভঙ্করকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে পাঠায়। বাজার এলাকার যে ক্লাবে ভাঙচুর হয়, সেই ক্লাবের সম্পাদকে শুক্রবার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর দাদা তৃণমূল শিক্ষা সেলের নেতা গিরিন সরকার বলেন, “ভাইয়ের ক্লাবে সদস্যদের বেশির ভাগ তৃণমূল সমর্থক। ওরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। এলাকার সিপিএম মদতপুষ্ট অন্য একটি ক্লাব কিছু দিন আগে এক ব্যক্তির জমি দখল করতে চেষ্টা করে। ভাইয়ের ক্লাবের ছেলেরা প্রতিবাদ করে। ওই ঘটনার জেরেই হামলা বলে মনে হচ্ছে।” সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের একাংশের দাবি, দুটি ক্লাবের সিংহভাগ সদস্যই বর্তমানে তৃণমূলের দিকে ঝুকে রয়েছেন। কিন্তু, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে হাল আমলে শাসক দলে নাম লেখানোর নানা সময়ে গোলমাল চলছে বলে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাও অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ-প্রশাসনের নথি বলছে
কোচবিহার লাগোয়া এলাকায় জমি লেনদেন, তোলা আদায়ের লিখিত,
মৌখিক অভিযোগ ৬ মাসে আগের তুলনায় বেড়েছে।
একনজরে
শহর সংলগ্ন ডাউয়াগুড়ি সমেত নানা এলাকায় জমির দাম ঊর্ধ্বমুখী।
জমি কেনাবেচা করলে ‘দাদা’দের কমিশন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
‘দাদা’দের একাংশ নানা ক্লাবের কর্তা।
খাগরাবাড়ি টাকাগছ- রাজারহাট গুড়িয়াহাটি ঘুঘুমারি বাইশগুড়ি
নিউ কোচবিহার চকচকায় জমির লেনদেন, অভিযোগ বেশি।
কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলি বলেন, “বিবদমান দুটি গোষ্ঠী তৃণমূলের সমর্থক। তোলাবাজি নিয়ে গোলমাল থেকে এত বড় ঘটনা।” নিহত যুবকের বাবা সজলবাবু পুলিশের কনস্টেবল। তিন ছেলের মধ্যে শুভঙ্কর বড় ছিলেন। সজলবাবু বলেন, “ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপুরে খেতে যায়নি শুভঙ্কর। গোলমালের খবর পেয়ে এসে শুনি ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা ওকে মৃত ঘোষণা করেছে। কে ওকে মারল বুঝতে পারছি না। যারাই করে থাক, শাস্তি চাই।” সজলবাবুর মন্তব্য, “এর আগে এমন অভিযোগ আমার ছেলের বিরুদ্ধে কখনও ওঠেনি। এর তদন্ত হোক।”
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় জমি বিক্রি, ইট ভাটায় মাটি সরবরাহ, ট্রাক থামিয়ে তোলা আদায়ে চক্র সক্রিয় আছে। ওই তোলা আদায় নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকে চাপানউতোর চলছে। পাশাপাশি, ঠিকাদারি কাজ নিয়ে গোলমাল ছিল বলে অভিযোগ। ওই সব গোলমালের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন বাসিন্দারা। এলাকার সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, বিবাদমান দুই গোষ্ঠীতে তৃণমূলের লোক রয়েছে। তৃণমূলের ডাউয়াগুড়ি অঞ্চল কমিটি নেতা মহিম রায় বলেন, “বাজারে ক্লাবের বেশির ভাগ সদস্য আমাদের সমর্থক। সিপিএম মদতপুষ্ট একটি গোষ্ঠী জমি কেনাবেচা সহ নানা অসামাজিক কাজ করছে। এর আগেও এ সব নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।”
জমি মাফিয়ারা বাম আমলেও ছিল। কিন্তু, কড়াকড়িতে একটু ঠাণ্ডা হয়। এখন তো চরমে। তা নিয়ে একই দলের মধ্যে চলছে চলছে অশুভ প্রতিযোগিতা।
তমসের আলি,

বামেদের আমলেই জমি মাফিয়াদের রমরমা শুরু। সবই সিপিএমের লোকজন। তৃণমূলের কেউ ও সব কারবারের সঙ্গে যুক্ত নন।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ,
বিবেকানন্দ কলোনি এলাকার যে ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলা, বোমাবাজি ও খুনের অভিযোগ উঠেছে সেই ক্লাবের কর্তাদের সকলে আপাতত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এদিন ঘটনাস্থলে যান। তবে তিনি নিহত যুবকের বাড়িতে যাননি। তিনি বলেন, “তোলাবাজির অভিযোগ নিয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত নেই। তদন্ত হলে সব স্পষ্ট হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.