অনেকের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু কেউ ফিরে তাকাননি। কেউ বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে কথা রাখেননি। শেষ পযর্ন্ত ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত মেধাবী এক ছাত্রকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। নিজেদের বেতন থেকে ১০ লক্ষাধিক টাকা তুলে ওই মেধাবী ছাত্রের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর আঞ্চলিক শাখার ১৬০ জন অফিসার।
শুধু তাই নয়, ওই মেধাবী ছাত্রের বিপুল পরিমানে চিকিৎসার খরচ তুলতে দুদিন ধরে জেলায় নাট্যোৎসবের আয়োজন করছেন ব্যাঙ্কের অফিসাররা। নাট্যোৎসবে যে টাকা উঠবে, তাও ক্যান্সারে আক্রান্ত ছাত্রের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এইভাবে ব্যাঙ্ক অফিসাররা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ওই ছাত্রের পরিবার আশায় বুক বেঁধেছেন। পেশায় স্কুল শিক্ষক ওই ছাত্রের বাবা ত্রিদিব মিত্র বলেন, একছর ধরে ছেলের চিকিত্সার খরচ জোগাড় করতে ৯-১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন আরও ১৪- ১৫ লক্ষ টাকা দরকার।. অনেকের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলাম। পাইনি। স্টেট ব্যাঙ্কের অফিসাররা এগিয়ে এসেছেন। তাই ভরসা পাচ্ছি। না হলে চিকিৎসার অভাবে ছেলে মারা যেত। স্টেট ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ আঞ্চলিক সম্পাদক দেবরঞ্জন দে বলেন, “একজন ছাত্রের মা বাবা তাঁদের ছেলেকে বাঁচাতে আমাদের কাছে যেভাবে আবেদন করেছিলেন। আমরা সেই আবেদন ফেরাতে পারিনি। আমাদের সংগঠনের সমস্ত সদস্য ওই ছাত্রের চিকিৎসার খরচ তুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন। আমাদের সামান্য সাহায্যে দিয়ে যদি ওই মেধাবী ছাত্রকে বাঁচাতে পারি তবে এই দান সার্থক হবে।”
মালদহ শহরের বিদ্যাসাগর পল্লীর ত্রিদিব মিত্রের ছোট ছেলে দেবজ্যোতি মিত্র। ২০১১ প্রায় ৮৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির থেকে পাশ করেছে। অক্রুরমণি করোনেশন ইন্সিটিটিউশনের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিল দেবজ্যোতি। কয়েক মাস ক্লাশ করার পর নভেম্বর মাসে তাঁর কাশি হয়। দুমাস চিকিৎসা করানোর পরেও কাশি সারেনি। পরিবারের লোকেরা তাঁকে চেন্নাই নিয়ে যান। সেখানে জানা যায়, তাঁর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।
এক বছর ধরে কলকাতা, চেন্নাইয়ে দেবজ্যোতির চিকিৎসা করাতে গিয়ে স্কুল শিক্ষক তাঁর সমস্ত সঞ্চয় খরচ করে ফেলেন। শেষে মুম্বইয়ের টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে দেবজ্যোতিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন অস্থি-মজ্জ্বা প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় নেই। খরচ হবে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যের ১০ লক্ষ টাকা জমা না দিলে অপারেশন হবে না। দুর্ভাবনায় পড়েন তাঁরা।
দেবজ্যোতি মুম্বইয়ে চিকিৎসাধীন। তাঁর কেমোথেরাপি চলছে। নিজেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েই থেমে থাকেননি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অফিসাররা। দেবজ্যোতির নামে সেভিংস অ্যকাউন্ট খুলে তাতে সাহায্য করার অনুরোধ করেছেন তারা। অক্রুরমণি করোনেশন ইন্সিটিটিউটের প্রধান শিক্ষক চঞ্চল ঝা এই প্রসঙ্গে বলেন, “দেবজ্যোতি স্কুলের মেধাবী ছাত্র। স্কুলের সমস্ত ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাককেরা দেবজ্যোতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনা করছে।” |