|
|
|
|
পুরকর বাড়ানোয় বামেদের বাধা |
সমীক্ষা হয় বাম-আমলেই, দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলছে তৃণমূল বোর্ড |
নিলয় দাস • ধূপগুড়ি |
ধূপগুড়ি পুর এলাকায় কোথায়, কতটা কর বাড়ানো হবে তা নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে বাম আমলে। সেই মতো সুপারিশও করেছে রাজ্যের কর মূল্যায়ণ পর্ষদ। বামেদের হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পরে সেই আমলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে তৃণমূল পরিচালিত ধূপগুড়ি পুরবোর্ড। তাঁদের আমলে নেওয়া কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে তৃণমূল বোর্ডকে বাধা দিচ্ছেন বামেরাই। অথচ পুরবোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, নয়া কর হার আগামী এপ্রিল মাস থেকে লাগু হবে। তৃণমূলের তরফে বামেদের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ধূপগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবাশিস দত্ত বলেন, “এলাকার মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে কর আদায় করা উচিত। পাশাপাশি, করের টাকায় যাতে এলাকার উন্নয়ন করা হয় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়াও দরকার।”
ধূপগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান শৈলেন চন্দ্র রায় বলেন, “পুর এলাকায় বসবাসকারীদের করের হার বাড়ানো হবে কি না তা নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমীক্ষা করে রাজ্য মূল্যায়ন পর্ষদ। এতদিন সিপিএম পরিচালিত পুরসভা পর্ষদের ধার্য করা করের হার মানেনি। অনেক ক্ষেত্রে বেশি কর আদায় করেছে। অনেক ক্ষেত্রে বামেরা নিজেদের দলের লোকজনের কাছ থেকে কম হারে কর নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা নিয়ম মেনে নিরপেক্ষ কর হার চালুর চেষ্টা করছি।” পাশাপাশি, চেয়ারম্যান জানান, যাঁদের কর বেশি হয়েছে মনে হচ্ছে, তাঁরা পুরসভায় আবেদন করলে সংশোধনের জন্য ফের সমীক্ষা করানো হবে।” এ ব্যাপারে তাঁর নিজের বাড়ির কর কতটা বেড়েছে, সেই হিসেবও দেন তিনি। তাঁর দাবি, “আমার নিজের ক্ষেত্রে ৩৭৫ টাকা কর ছিল। এখন বছরে ৪৫২ টাকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। মন্ত্রী বলেন, “নয়া করের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে কোন অসঙ্গতি থাকলে সেগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে সংশোধন করে নেবে পুরসভা।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে ধূপগুড়ি পুরসভার মর্যাদা পায় ২০০৫ সালে রাজ্য মূল্যায়ন পর্ষদকে দিয়ে নতুন কর কী হারে আদায় করা হবে তার একটি সমীক্ষা করানো হয়। দু’বছর পরে পর্ষদ এলাকার ১২ হাজার পরিবারের নতুন কর নির্ধারণ করে পুরসভার কাছে পাঠায়। তবে সেই তালিকা এতদিন প্রকাশ করেনি টানা ক্ষমতায় থাকা সিপিএম পরিচালিত পুরসভা।
পুরসভার পক্ষে ধার্য করা করের সঙ্গে পর্ষদের দেওয়া তালিকায় কোন মিল ছিল না। পর্ষদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, কর আদায় করলে পুরসভা সারা বছরে যেখানে ৩৯ লক্ষ টাকা আদায় করতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরসভার ধার্য করা করে বর্তমানে বছরে ৬ লক্ষ টাকা আদায় হচ্ছে। বর্ধিত ওই কর আদায় করা গেলে করের টাকায় পুরসভা নানা উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারে বলে এ মাসে পর্ষদের দেওয়া পুরনো তালিকা প্রকাশ করে। রাজ্য মূল্যায়ন নির্ধারণ পর্ষদের আধিকারিক মধূসুধন দত্ত বলেন, “সম্পত্তির পরিমাণ সহ করদাতার আয় সহ বিভিন্ন দিক দেখে আমরা কর কত হবে তা জানিয়ে দিই। যদি কিছু ভুল ভ্রান্তি যদি হয় তা হলে বিষয়টি আমরা দেখব।” পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কয়েকশো বাসিন্দা কর হার সংশোধন করার জন্য পুরসভায় আবেদন জানিয়েছেন। কাউন্সিলরদের বাড়িতেও রোজই উপচে পড়ছে ক্ষুব্ঝ বাসিন্দাদের ভিড়। পুরসভায় ক্ষমতাসীন হওয়ার সাত মাসের মধ্যে তৃণমূল পরিচালিত নতুন বোর্ড মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক হারে কর আদায় করার নির্দেশ জারি করার ঘটনা নিয়ে সিপিএম ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করেছে। তালিকা সংশোধন না করিয়ে কেন কর জমা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে সিপিএম। ধূপগুড়ি পুরসভার বিরোধী দল নেতা বাদল সরকার বলেন, “আট বছর আগের সমীক্ষা এখন অপ্রাসঙ্গিক। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত বহু নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছে। বহু পরিবার আলাদা হয়েছে। শহর ঘেঁষা কয়েকটি ওয়ার্ডে চাষাবাদ হয়। সেখানে কৃষকদের কাছে বেশি হারে কর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নতুন করে সমীক্ষা দরকার। পুরোটাই সংশোধন প্রয়োজন।” ধূপগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন সিপিএম দলের চেয়ারম্যান সত্যরঞ্জন ঘোষের দাবি, “মূল্যায়ন পর্ষদ যে তালিকা দিয়েছিল তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন সঠিক ছিল না। আমরা আপত্তি তুলেছিলাম। ফের সমীক্ষা করা হবে বলে পর্ষদ বলেছিল। তা না হলে মানুষ রুখে দাঁড়াবে।” বিজেপি নেতা তথা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার কৃষ্ণ দেব রায়ও চাষিদের ছাড়া না দিয়ে কর বাড়ানোর বিপক্ষে। |
|
|
|
|
|