|
|
|
|
পরীক্ষার খাতা মন্ত্রীর মাধ্যমে পাঠানোয় বিক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বিধি ভেঙে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার খাতা উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে জড়াল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের নাম। বৃহস্পতিবার নিউজলপাইগুড়ি (এনজেপি) থেকে শিয়ালদহগামী দার্জিলিং মেলে ওই কাণ্ড ঘটেছে দাবি করে শুক্রবার শিলিগুড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেসের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সদস্যেরা। ঘণ্টা তিনেক ঘেরাও করা হয় সংসদের এক অফিসার সিদ্ধান্ত মোক্তানকে। |
|
শিলিগুড়ি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আধিকারিককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন
কংগ্রেসের শাখা সংগঠনের সদস্যরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
অবশ্য সংসদের দাবি, খাতা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছেন তাদের কর্মীই। মন্ত্রী অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা নেতৃত্ব দাবি করেছেন, কে, কী মতলবে এমন অভিযোগ করছে, তা-ও দেখা দরকার।
২০০৯-এ জলপাইগুড়িতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দার্জিলিং জেলায় পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। গত ৯ ডিসেম্বর ওই পরীক্ষা দেন ১,১৪৬ জন। তাঁদের মধ্যে ১৭১ জনকে বাছা হবে। বিধি অনুযায়ী, পরীক্ষার দু’ঘণ্টার মধ্যে ওই খাতা দেখার কথা সংসদের। পরে বোর্ড মিটিং ডেকে প্যানেল তৈরি করার কথা। তার পরে কলকাতা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের রাজ্যের প্রতিনিধিরা শিলিগুড়িতে এসে সেই প্যানেল খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেবেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, খাতা না দেখেই ট্রেজারিতে জমা রেখেছিল সংসদ। সেই খাতাই কলকাতায় পাঠানো হয় বৃহস্পতিবার। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সংসদের অফিসার সিদ্ধান্ত মোক্তান খাতার বান্ডিল নিয়ে মন্ত্রী গৌতমবাবুর সঙ্গেই বৃহস্পতিবার দার্জিলিং মেলের এ-১ কামরায় ওঠেন। কামরায় খাতা রেখে নিজে নেমে যান।
সিদ্ধান্তবাবু অবশ্য বলেন, “সংসদের চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তীর নির্দেশে আমাদের দফতরের এক কর্মী অর্জুন বর্মনের হাতে আমি খাতা দিয়েছি।” শিক্ষা সংসদের একটি সূত্রের বক্তব্য, চেয়ারম্যান সমরবাবুর সঙ্গে ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় চলে যান অর্জুনবাবু। কবে কলকাতায় পৌঁছেছেন তা না ভাঙলেও অর্জুনবাবু বলেন, “কলকাতায় এসেছি, এটা ঠিক। কিন্তু ওই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।” আর সংসদ চেয়ারম্যানের দাবি, “অর্জুনবাবু আমার সঙ্গে আসেননি। পরে উনি খাতা নিয়ে কলকাতায় আসেন। ভিত্তিহীন ভাবে ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রীর নাম জড়ানো হচ্ছে।” বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক আব্দুস সালাম।
তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, এনজেপি স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হলে মন্ত্রীর কামরায় খাতা পৌঁছে দেওয়ার দৃশ্য দেখা যাবে। অর্জুনবাবু যদি ওই পরীক্ষার খাতা নিয়ে গিয়ে থাকেন, তা হলে তা রেলের সংরক্ষণ তালিকাতেই দেখা যাবে। পক্ষান্তরে, অর্জুনবাবু অসংরক্ষিত কামরায় যদি ওই খাতা নিয়ে গিয়ে থাকেন, তা হলেও পরীক্ষার খাতার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর রুমা নাথ বলেন, “আমরা স্বচ্ছতা রেখে নিয়োগ চাইছি। কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে, তা ভয়াবহ। নিয়ম ভেঙে মন্ত্রীর মাধ্যমে খাতা কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মানে, নিয়োগে দুর্নীতি হবে বলে আশঙ্কা করছি। প্রয়োজনে ওই বোর্ড থেকে সরে আসব।” ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেছেন, “আমাকে জড়িয়ে কে বা কারা এমন মিথ্যা বলছেন জানি না।” দলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেন, “অনেকেই প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। কে, কী মতলবে মন্ত্রীকে এই ঘটনায় জড়াতে চাইছে, সেটাও দেখা দরকার।” |
|
|
|
|
|