জোরে হাওয়া বইলে মোবাইলের কথা অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে লাইন কেটে যায়। এ ভাবেই খুঁড়িয়ে চলছিল বিএসএনএলের মোবাইল পরিষেবা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সেই পরিষেবাও আর দিতে পারল না বিএসএনএল। প্রায় ১২ ঘণ্টা মোবাইল পরিষেবা কার্যত বন্ধ থাকায় ভোগান্তি হয় গ্রাহকদের।
কিন্তু বিএসএনএলের এ রকম অবস্থা কেন?
কর্তৃপক্ষের দাবি, বৃহস্পতিবারের ঘটনার জন্য দায়ী একটি অগ্নিকাণ্ড। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ কলকাতা টেলিফোন ভবনের সাততলায় ইস্টার্ন টেলিকম রিজিওন (ইটিআর)-এর দফতরে আগুন লাগে। বিএসএনএল-কর্তারা জানান, তার পরেই মোবাইল পরিষেবা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। দমকল সূত্রে বলা হয়েছে, ওই ঘরের বাতানুকূল যন্ত্রে আগুন লেগে গিয়েছিল। ধোঁয়ায় ভরে যায় মেশিন ঘর। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে আগুন নেভান দমকলকর্মীরা।
বিএসএনএল সূত্রের খবর, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত তাদের মোবাইল পরিষেবা প্রায় বন্ধ ছিল। বিএসএনএলের ওয়েস্ট বেঙ্গল টেলিকম সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার (নোডাল) বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “আগুন ধরে যাওয়ায় দুপুর পর্যন্ত মিডিয়া নেটওয়ার্কের অসুবিধা হয়েছে ঠিকই। তবে দুপুরের মধ্যে ওই সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বুলবুল ইসলাম নামে কলেজ স্ট্রিটের এক বাসিন্দার অভিযোগ, “ফোন এলে কথা শোনা যাচ্ছে না। বারবার চেষ্টা করে তবে ফোন করা যাচ্ছে। কিন্তু চার্জ কেটে নেওয়া হচ্ছে প্রতিটি কলেই। এসএমএস চলে যাচ্ছে অন্য নম্বরে। অনেক বার পাঠাতে হচ্ছে এসএমএস।” একই ধরনের সমস্যার কথা বলেছেন শ্রীময়ী দাস নামে বেহালার এক বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, “কথা বলতে গেলে ফোনে টাওয়ার (নেটওয়ার্ক) থাকে না। ফলে কথা বলতে বলতে মাঝপথে নিশ্চুপ হয়ে যায় ফোন।”
বেসরকারি মোবাইল পরিষেবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে বিএসএনএল পরিষেবার মান উন্নত করতে পারছে না কেন?
সরাসরি জবাব মিলছে না। বিএসএনএল সূত্রের খবর, বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ বা মোবাইল টাওয়ার বেশির ভাগ সময়েই ঠিকঠাক কাজ করে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাটারি আছে ঠিকই। কিন্তু সেই সব ব্যাটারিও দীর্ঘদিন ধরে চলছে। পাল্টানো হচ্ছে না। কর্মী-সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে কোথাও কোনও যন্ত্রাংশ খারাপ হলে তা সময়মতো মেরামত করা হচ্ছে না।
বিএসএনএল-কর্তারা নেটওয়ার্ক চলে যাওয়ার সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন।
তাঁদের বক্তব্য, যন্ত্র খারাপ হতেই পারে। তবে টাওয়ার বসানো এখন বেশ কঠিন কাজ। উল্টে টাওয়ার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কেউ টাওয়ারের জন্য জায়গা দিতে চাইছেন না। এক দিকে পরিবেশ দফতরের নিষেধাজ্ঞা, অন্য দিকে দূষণের জন্য বাড়ি-মালিকেরা এখন আর নিজেদের বাড়ির ছাদে টাওয়ার বসাতে চাইছেন না। এই সব কারণে সমস্যা বাড়ছে। |