সমস্যাটা পুরনো। সমাধানের চেষ্টা নতুন। অপরাধের তদন্তে প্রশিক্ষিত কুকুরের অভাবে প্রত্যন্ত জেলাগুলিতে বারে বারেই সমস্যায় পড়ছে পুলিশ। তালিমপ্রাপ্ত কুকুর না-থাকায় তদন্ত মার খেয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। এই খামতি মেটাতে অবশেষে তৎপর হয়েছে রাজ্য পুলিশ। ছ’মাসের মধ্যে কিছু জেলায় ‘কেনেল’ বা কুকুরের ঘর তৈরি হবে এবং জেলার নিজস্ব ডগ স্কোয়াড তার পরেই কাজ শুরু করে দেবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
পুলিশ-কুকুরের কাজ কী?
সাধারণ ভাবে দু’ধরনের কুকুর নিয়ে পুলিশের কাজ-কারবার। i নাশকতা রুখতে ওস্তাদ ঘ্রাণবিশারদ ‘স্নিফার ডগ’। অপরাধীর গতিবিধি চিহ্নিত করতে দক্ষ ‘ট্র্যাকার ডগ’। জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্র ও রাজ্যের মন্ত্রী-আমলাদের সফরের প্রাক্কালে পুলিশ-কুকুরের দরকার হয়। আবার কোনও রহস্যজনক খুন বা লুঠের ঘটনার পরে অপরাধী কোথায় পালিয়েছে বা কোন এলাকায় গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে, তারই ফেলে যাওয়া কিছু সূত্রের সাহায্যে প্রশিক্ষিত কুকুর সেটা বোঝার চেষ্টা করে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাকে ধরিয়েও দেয়। |
রাজ্য পুলিশ এই কাজে ব্যারাকপুরের পুলিশ ট্রেনিং স্কুল, ইন্টেলিজেন্স বিভাগ এবং বিভিন্ন জেলায় রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি শাখার কুকুরের উপরেই নির্ভরশীল। এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী রেল পুলিশ, রেল সুরক্ষা বাহিনী এবং সিআরপি-র মতো আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যও নেয় তারা। জেলায় জেলায় হঠাৎ দরকারে স্থানীয় পুলিশকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্যই তালিমপ্রাপ্ত কুকুরের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে রাজ্য।
পরিকাঠামো মানে কুকুর কেনা এবং তাদের জন্য কেনেল গড়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে ডগ স্কোয়াড চালু করা। কেনেল তৈরি হচ্ছে বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ ও দার্জিলিং জেলায়। বাড়তি পরিকাঠামোর ব্যবস্থা হচ্ছে ব্যারাকপুর পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও। কেনা হচ্ছে ল্যাব্রাডর আর অ্যালসেশিয়ান। পরে আরও কয়েকটি জেলার জন্য কুকুর কেনা হবে।
এই প্রকল্পে টাকা দেবে কে?
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে পূর্ত বিভাগকে কেনেল তৈরির জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এক-একটি জেলায় ৬-৭টি কুকুরের থাকার মতো কেনেল তৈরি হচ্ছে। জেলা-পিছু খরচ হবে ২০ লক্ষ টাকা। প্রতিটি কুকুরের দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কুকুর যাতে ঘোরাফেরা করতে পারে, তার জন্য যথেষ্ট জায়গার ব্যবস্থা হচ্ছে। জেলায় জেলায় জমি-জটে কেনেল নির্মাণেও যে কিছুটা দেরি হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা। রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল আইজি (আধুনিকীকরণ) বরুণ মল্লিক বলেন, “আশা করছি, মাস ছয়েকের মধ্যেই নতুন কেনেলগুলি প্রস্তুত হয়ে যাবে।” নতুন কুকুরকে তালিম দেওয়ার জন্য বিএসএফ, সিআইএসএফ, সিআরপি-র মতো আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্য নেবে পুলিশ। সব সমস্যা মিটিয়ে জেলা পুলিশের ডগ স্কোয়াড চলতি বছরই কাজ শুরু করে দেবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। |