দেশের প্রথম নাগরিকের হেলিকপ্টার নামবে বলে প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে তৈরি হয়েছিল ঝকঝকে হেলিপ্যাড। কিন্তু বাদ সেধেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা। ফলে রাষ্ট্রপতির আকাশযানের স্পর্শের শিকে ছিঁড়ল না তার বরাতে।
আজ, শনিবার, শিবপুরে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (বেসু) সমাবর্তনে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি। দু’দিন আগেও ঠিক ছিল, কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে শিবপুরে যাবেন প্রণববাবু। ঠিক ছিল, রেসকোর্স থেকে উড়ে শিবপুরে বেসু-র ক্যাম্পাসেই নামবে রাষ্ট্রপতির কপ্টার। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদলে ফেলতে হয়েছে।
সমাবর্তন উপলক্ষে এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বর সাফসুতরো হচ্ছিল। যথেষ্ট আগে থাকতেই হেলিপ্যাডের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, জায়গাটি নিচু। হপ্তাখানেকের মধ্যে মাটি ফেলে তা পোক্ত করা অসম্ভব বলে মাথায় হাত পড়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। তখন ঠিক হয়, পাশেই মডেল স্কুলের মাঠটিতে নামবেন রাষ্ট্রপতি। |
তমলুকের নিমতৌড়িতে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। |
গত মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) মহাকরণে এই নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এক রাতের মধ্যে হেলিপ্যাড তৈরির লক্ষ্যে পূর্ত দফতরের টিম মাঠে নামে। জায়গাটি পরিষ্কার করে রাতভর রোলার চালিয়ে হেলিপ্যাড প্রস্তুত! বৃহস্পতিবার (রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানের দু’দিন আগে) হেলিপ্যাডের কার্যকারিতা পরখ করতে সেখানে কপ্টার নামানো হয়।
কপ্টার ঠিক মতোই নেমেছিল। কিন্তু পরে আপত্তি তোলেন নিরাপত্তা-বিশেষজ্ঞেরা। কেন? তা স্পষ্ট করে কেউ বলেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “আশপাশে অনেক ঝোপঝাড়, গাছগাছালি। যা শুনেছি, নিরাপত্তার দিক দিয়ে ব্যাপারটা ভাল ঠেকেনি কর্তাদের।” তাই ঠিক হয়েছে রেসকোর্স থেকে গাড়িতেই বেসু-তে যাবেন প্রণববাবু।
রাষ্ট্রপতি এ রাজ্যের ভূমিপুত্র হলেও পদে পদে বিধিনিষেধের ঘেরাটোপ তাঁকে ঘিরে থাকছে। এটা বুঝছেন, প্রণববাবুর ঘনিষ্ঠ ব্যারাকপুর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী নিত্যানন্দও। তাঁর কথায়, “কালামসাহেব রাষ্ট্রপতি থাকার সময়েও তাঁকে ডেকে এনেছিলাম। কিন্তু এমন কড়াকড়ি তখনও ছিল না।” শনিবারই ব্যারাকপুরের আশ্রমে স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধ শতবর্ষের অনুষ্ঠানে আসছেন রাষ্ট্রপতি। তার আগে দফায় দফায় জেলা পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, আইবি-র অন্তহীন প্রশ্ন প্রবীণ সন্ন্যাসীকে সামলাতে হয়েছে। |
কলকাতার প্রেস ক্লাবে রাজ্যপাল
এম কে নারায়ণনের সঙ্গে। |
বেসু-র পাশের মাঠে এই হেলিপ্যাডেই নামার
কথা ছিল রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টারের। শুক্রবার। |
|
পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় রহড়ায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্বামী নিত্যানন্দের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা প্রণববাবুর। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান বলে কথা! কী ভাবে, কোথায় মঞ্চ বাঁধা হবে থেকে শুরু করে যাবতীয় খুঁটিনাটি পই পই করে বুঝিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দা-কর্তারা। মঞ্চের পাট চুকলে আশ্রমে রাষ্ট্রপতিকে কফি-আপ্যায়নের কথা। গোয়েন্দাকর্তারা গম্ভীর মুখে কোথায় কী হবে, খতিয়ে দেখছেন।
শুক্রবারও উত্তর কলকাতার সিমলা পাড়ায় স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক বাড়ি বা তমলুকের নিমতৌড়িতে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুলিশের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। কলকাতায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ কিংবা পূর্ব মেদিনীপুরে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে অনুষ্ঠান শুরুর ঢের আগে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। বিকেলে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে রাষ্ট্রপতি গিয়েছিলেন কলকাতার প্রেস ক্লাবে। প্রশাসনের নির্দেশে ক্যান্টিন থেকে গ্যাস সিলিন্ডারগুলিও ঝটপট সরিয়ে ফেলতে হয়। লনের পাশে (অনুষ্ঠানস্থল) প্রধান অতিথির জন্য ‘এক্সক্লুসিভ’ অস্থায়ী শৌচালয় অবধি খাড়া করেছেন আয়োজকেরা।
রবিবারও কলকাতায়-জেলায় একাধিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোরে হাইকোর্টের অনুষ্ঠানের পরে টাউন হলে ন্যাশনাল টেস্ট হাউসের অনুষ্ঠানে যাবেন রাষ্ট্রপতি। টাউন হলের পাতালঘরেই চলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির প্রদর্শনী। আয়োজকেরা একটু চিন্তিত, কে জানে, রাজপথে পুলিশি কড়াকড়ির জেরে ছুটির দিনে ছবি দেখতে তেমন ভিড় হবে তো!
|