|
|
|
|
পুলিশের একাংশের দাবি |
শুধু থানায় নয়, অপরাধ ঠেকাতে
ক্যামেরা বসুক জনবহুল জায়গাতেও |
নির্মল বসু • বসিরহাট |
শীতের দুপুর। খাওয়ার পর চেয়ারে হেলান দিয়েই তন্দ্রা এসে গিয়েছিল চোখে। মনিটরে সেই ছবি দেখে বড়কর্তার চিৎকারে ধড়মড়িয়ে চেয়ার ঠেলে উছে পড়েন ডিউটি অফিসার।
সারারাত জেগে চোর ধরার পর ফের দুপুরে ডিউটি। লোকের অভাবে কাজের চাপও প্রচণ্ড। ছুটি পাওয়াটা লটারি পাওয়ার মতোই ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই চেয়ারে বসলেই দু’চোখের পাতা যে জুড়ে যাবে তাতে আর বিস্ময়ের কি আছে! কিন্তু না। তা হতে দেওয়া চলবে না। থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না। থানায় অভিযোগ জানাতে আসা ব্যক্তি বা মহিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মী কোনও দুর্ব্যবহার করছেন কি না, থানায় বিভিন্ন দরকারে যাঁরা আসছেন তাঁদের উপরে নজরদারি করতে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট বা সি সি টিভি। নিজের ঘরে বসেই চলছে ওসি-র নজরদারি।
বসিরহাট মহকুমা এলাকায় মোট তানা ৯টি। জল, জঙ্গল ও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এবং অপরাধমূলক কাজ ক্রমশ বাড়তে থাকায় মহকুমার বিভিন্ন থানায় বসানো হয়েছে সি সি টিভি। আর এই সিসি টিভির জন্য লাগানো ক্যামেরা নিয়েই ক্ষোভ পুলিশকর্মীদের। তাঁদের বক্তব্য, থানায় ক্যামেরা লাগিয়ে পুলিশকর্মীরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা সেটা দেখা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি যে ভাবে অপরাধ বাড়ছে তাতে দুষ্কৃতীদের উপরে নজর রাখতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ক্যামেরা বসানো। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিটি থানাতেই প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা বেশ কম। পরিকাঠামোর দিক থেকেও রয়েছে নানা ত্রুটি। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় গাড়ি নেই। এই অবস্থায় দুষ্কৃতীদের ধরতে তাঁদের কালঘাম ছুটে যাওয়ার জোগাড়। স্বাভাবিক ভাবেই রাতভর দুষ্কৃতীদের পিছনে ছোটার পরে কোনও পুলিশকর্মী ক্লান্তির কারণে চেয়ারে একটু এলিয়ে পড়েন। আর তাতেই কপালে জোটে বড়বাবুর তিরস্কার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্মী বলেন, “থানায় নজরদারিতে ক্যামেরা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু পাশাপাশি তা যদি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে, সেতুতে বসানো হয় তাহলে দুষ্কৃতী চিহ্নিত করার কাজ সহজ হবে। আমাদেরও কাজের সুবিধা হবে।”
বসিরহাট থানার কথাই ধরা যাক ধরুন। মাত্র ২৬৭ স্কোয়ার কিলোমিটার নিয়ে বসিরহাট থানা এলাকা। এক দিকে নদী, অন্য দিকে সীমান্ত। সাড়ে পাঁচ লাখের উপর জনসংখ্যা। ১৬টি পঞ্চায়েত এবং একটি পুরসভা ছাড়াও আছে বাংলাদেশ সীমান্ত। দিন দিন অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে এবং অপরাধীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি পুলিশকর্মী এবং গাড়ির সংখ্যা। প্রশাসনের হাতে নেই কোনও আধুনিক প্রযুক্তি। তিনটি মাত্র গাড়ি এবং জনা ২৫ পুলিশকর্মী নিয়ে থানা চালানোই দায়। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচার এবং অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা বেড়েই চলেছে বসিরহাটে।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, বাংলাদেশি একাধিক দুষ্কৃতী দেশে অপরাধমূলক কাজ করে এপারে পালিয়ে এসে মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁটি গাড়ছে। অন্যের নামে জমি কিনে বাড়ি বানাচ্ছে। মাঝে মধ্যে তারাই ডাকাতি-সহ ব্যবসায়ীদের অস্ত্রে ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা তোলা আদায় করছে। পুলিশের একাংশের দাবি, সি সি টিভির পরিবর্তে যদি কর্মীসংখ্যা এবং পরিকাঠামোর উন্নতিতে খরচ হত তা হলে হয়তো বাসিন্দাদের নিরাপত্তা আর একটু বাড়ত। কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা হত পুলিশকর্মীদেরও।
|
বসিরহাটের বিভিন্ন থানায় অপরাধ ও পুলিশি পদক্ষেপ |
• বসিরহাট থানায় ২০১১-১২ সালে ধর্ষণের ঘটনা ৩৩টি। ১৯টি মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। ধৃত ২০। অপহরণ এবং ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ৬৯টি। ৪৬টি ক্ষেত্রে অপহৃতকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃত ৭৯ জন। |
• হাসনাবাদে ১৯টি ধর্ষণের ঘটনায় ১২টির ক্ষেত্রে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অপহরণ বা ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ১৫টি। |
• হাড়োয়ায় ডাকাতির ঘটনা ১২টি। ১০টি ধর্ষণ-সহ অপহরণ, ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ৫০ ছাড়িয়েছে। |
• মিনাখাঁয় ১৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২৫টি অপহরণের মধ্যে ৬টির ক্ষেত্রে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা ২০টি। |
• সন্দেশখালিতে ধর্ষণের ঘটনা ৮টি। ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ৩৫টি। |
• হেমনগর উপকূল থানায় ৫টি ধর্ষণের ঘটনায় একটিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কাজের নামে ভিন রাজ্যে পাচারের ঘটনা ২২টি। |
• বাদুড়িয়ায় ৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অপহরণ অথবা ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ২৪টি। বধূ নির্যাতন, চুরি-ডাকাতির ঘটনা ১৮টি। |
• স্বরূপনগরে ৬টি ধর্ষণ-সহ ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ৪০ ছাড়িয়েছে। |
• হিঙ্গলগঞ্জে ৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। |
• এই সময়ে অনুপ্রবেশ-সহ অন্যান্য অভিযোগে আড়াইশোরও বেশি বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|
|