উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
আড়িয়াদহ
দুর্মূল্যের যাতায়াত
দিনে ৪০ টাকা। মাসে ২৬ দিন। বছরে ১২,৪৮০ টাকা!
না, কাক্কেশ্বর কুচকুচে নন, এই অঙ্ক কষেন আড়িয়াদহের বাসিন্দারা। এটাই তাঁদের বার্ষিক সর্বোচ্চ রিকশা ভাড়া। নিজস্ব গাড়ি না থাকলে রিকশা করে মূল রাস্তায় এসে বাস, ট্যাক্সি ধরা ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছনোর তাঁদের আর কোনও উপায় নেই। কারণ, এই অঞ্চলে আজও সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
অভিযোগ স্বীকার করে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সত্যিই, অনেক টাকা রিকশা ভাড়া গুনতে হয়। সড়কপথে এই পরিবহণ সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। তাই জলপথে ব্যবস্থার চেষ্টা করছি।” মদনবাবুর দাবি, আড়িয়াদহের রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়ায় সেখানে বাস চালানো সম্ভব নয়। অটো চালু করতেও কিছু সমস্যা রয়েছে। মেট্রোর কাজ চলায় বিটি রোডে নতুন বাস নামানো যাবে না। জলপথে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। কামারহাটি, আড়িয়াদহ থেকে হাওড়া, বাগবাজার, বেলুড়, শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর ঘাটে লঞ্চ চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
কামারহাটি পুরসভার ৮ থেকে ১৬ নম্বর এই ৯টি ওয়ার্ড আড়িয়াদহের অন্তর্গত। কয়েক হাজার মানুষের বাস। দ্রুত জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ঘাটতি থেকে যাচ্ছে পরিবহণ ব্যবস্থায়। বাসিন্দারা জানান, ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে নানা মহলে দরবার করেও কোনও ফল মেলেনি। মিলেছে শুধুই আশ্বাস। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা সরু হওয়ায় বাম আমলেও ছোট বাস ও গঙ্গায় লঞ্চ চালুর দাবি উঠেছিল। প্রশাসন ছোট বাসের জন্য স্ট্যান্ডও বানায়। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় তা চালু হয়নি। লঞ্চ পরিষেবার বিষয়টিও কিছুই এগোয়নি।
সমস্যা কোথায়?
পূর্বে বিটি রোড, পশ্চিমে গঙ্গা, উত্তরে কামারহাটি, দক্ষিণে দক্ষিণেশ্বর এই হল আড়িয়াদহের সীমানা। মাঝে রয়েছে কালাচাঁদ স্কুল মোড়, রেশন অফিস মোড়, বিন্ধ্যবাসিনীতলা, ফিডার রোড, মৌসুমী মোড়, রামগড়, দিল্লিপাড়ার মতো বেশ কয়েকটি অঞ্চল। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই সব এলাকা থেকে কলকাতা কিংবা অন্য কোথাও যেতে হলে বিটি রোডের রথতলা, না হলে দক্ষিণেশ্বর মোড়ে আসতে হয়। হাঁটা, নিজস্ব গাড়ি, রিকশা যাতায়াতের এই তিনটিই উপায়। অটো চলে রথতলা থেকে আড়িয়াদহ ঘাট পর্যন্ত। অভিযোগ, অটোর সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, আড়িয়াদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে চারটি রুটের বাস চলে। কিন্তু বাসের সংখ্যা খুব কম। আড়িয়াদহ-ধর্মতলা রুটের তিন-চারটি মিনিবাস রয়েছে। ধর্মতলা ও চেতলা রুটের দু’টি সরকারি বাস থাকলেও সকালে এক বার ছাড়ার পরে সারা দিনে আর আসে না। রয়েছে একটি চার্টার্ড বাস। সেটিও প্রায় মেলে না। ভরসা বলতে সেই রিকশা।
ফিডার রোডের বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, “তিরিশ বছরেও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি হল না। প্রতি দিন দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে যাতায়াত করতে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হয়।” অভিযোগ, রিকশার ভাড়াও ঠিক থাকে না। রিকশাচালকেরা যেমন খুশি ভাড়া চান। তা ছাড়া অধিকাংশ দিনই রাতে রথতলা কিংবা দক্ষিণেশ্বর মোড়ে রিকশা মেলে না। রামগড়ের বাসিন্দা মৌসুমী সর্বাধিকারীর কথায়: “ছয় বছর ধরে ডানকুনিতে একটি স্কুলে চাকরি করতে যাচ্ছি। প্রতি দিন ৩০ টাকা করে ধরলে আমার প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা রিকশার পিছনে খরচ হয়ে গিয়েছে।” কামারহাটির বিধায়ক সিপিএমের তমাল দে-র বক্তব্য: “বাসিন্দারা নতুন অটো রুটের প্রস্তাব দিলে আলোচনা করে দেখা যেতে পারে।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.