|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
|
জমি-জটে দমকল |
বিলম্বিত লয় |
কৌশিক ঘোষ |
ঘোষণাই সার। এক বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি নিমতলা কাঠগোলার দমকলকেন্দ্রটির আধুনিকীকরণের কাজ। কারণ, প্রয়োজনমতো জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই জমির জন্য কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন করেছেন দমকল কর্তৃপক্ষ। জমি দিতে রাজিও হয়েছে পুরসভা।
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “আধুনিকীকরণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। তাঁরা যে জমি দেখিয়েছিলেন সেখানে এই আধুনিকীকরণের কাজ করা সম্ভব ছিল না। তাই জমি পেতে আমরা কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। তাঁরা আমাদের কয়েকটি জমি দেখিয়েছেন। আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
উত্তর কলকাতার নিমতলা স্ট্রিট সংলগ্ন স্ট্র্যান্ড রোড এবং মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডের দু’ধারে সার দিয়ে কাঠের গোলা। দু’টি গোলার মাঝে শুধু একটি কাঠের পাটাতন। কাঠ ছাড়াও কোনও কোনও গোলায় কাপড়ের বস্তাও ডাঁই করা থাকে। কোথাও চলে ফ্লেক্সের কাজ। বেশির ভাগ কাঠগোলাতেই বা কাপড়ের গুদামে অগ্নিনির্বাপক কোনও রকম ব্যবস্থাই নেই বলে দমকল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এখানে আগুনও লেগেছে। ১৯৪৯-এর আগুন সাত দিন ধরে জ্বলেছিল। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর অজয় সাহা অভিযোগ করে বলেন, “নিমতলার কাঠগোলায় অনেক বারই আগুন লেগেছে। তাই দমকলকেন্দ্রটির আধুনিকীকরণ ছাড়াও অগ্নিনির্বাপণের জন্য দমকল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বার বার দমকল দফতরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।” |
|
বন্দরের জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়েছিল?
দমকলমন্ত্রী জানান, কাঠগোলার এক দিকে স্ট্র্যান্ড রোড। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানে তাঁদের একটি জমি দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু জায়গাটি ছোট। দমকলের গাড়ি ঢোকার ক্ষেত্রেই সমস্যা হবে। তাই ওই জমি এই প্রকল্পের জন্য নেওয়া হয়নি। এর বিপরীত দিকে পুরসভার একটি অপেক্ষাকৃত বড় জমি আছে। এই জমিটি দমকলকেন্দ্রের উপযুক্ত। আধুনিকীকরণ ছাড়াও বড়বাজার অঞ্চলে একটি নতুন দমকলকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই ব্যাপারে পুরসভার কয়েকটি জমি সমীক্ষা করা হয়েছে বলে দমকলমন্ত্রী জানান।
নিমতলার কাঠগোলার দমকলকেন্দ্রটি পুরনো। সেখানে একটি মাত্র ইঞ্জিন থাকে। আগুন লাগলে একটি ইঞ্জিন দিয়ে তা নেভানো কার্যত দুষ্কর বলে দমকল সূত্রের খবর। রাজ্য দমকল দফতরের ডিরেক্টর (প্রিভেনশন অফ ফায়ার) তপন ঘোষ বলেন, “এখানে একটি মাত্র ইঞ্জিন রয়েছে। আরও দু’টি ইঞ্জিন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। অফিস এবং কর্মচারীদের আবাসনও হবে। পুরসভার সঙ্গে জমি পাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক কথা হয়েছে। আগুন নেভানোর জন্য জলের সংযোগের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।” তপনবাবু জানান, দমকল দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কলকাতা এবং শহরতলিতে ২৫টি নতুন দমকলকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কলকাতায় হবে ৯টি নতুন কেন্দ্র।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। নিমতলা কাঠগোলার দমকলকেন্দ্রের আধুনিকীকরণের জন্য আমাদের থেকে জমি চেয়েছেন। আমরা রাজি। নিমতলা ছাড়াও আশপাশে পুরসভার কয়েকটি ফাঁকা জায়গা তাঁদের দেখানো হয়েছে। তবে জমি দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
জাভেদ খান বলেন, “আমাদের কর্মীর অভাব রয়েছে। তাই নজরদারিরও অভাব রয়েছে। তবে দমকলের নিয়ম মেনে ব্যবসা চলছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কাঠগোলার লাইসেন্স নবীকরণের ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা নিয়ম মানছেন কি না তা দেখেই লাইসেন্স নবীকরণ করা হচ্ছে। এই ব্যাপারেও কলকাতা পুরসভার সাহায্য চেয়েছি।” |
|
দমকল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই অঞ্চলে আগুন নেভানোর জন্য জলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ছাড়াও, কাঠগোলার দেওয়াল কাঠের পরিবর্তে ইটের করতে হবে। রাখতে হবে অগ্নিনির্বাপক। পুরনো বৈদ্যুতিক তারের পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি। অভিযোগ, বেশির ভাগ কাঠগোলাতেই এই ব্যবস্থা নেই। নিমতলা টিম্বার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমল সরকার বলেন, “কাঠগোলা অঞ্চল এখনও জতুগৃহ। বার বার বলা সত্ত্বেও দমকল এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দমকলকেন্দ্রের আধুনিকীকরণ ছাড়াও আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
শোভনবাবু বলেন, “যে কোনও ধরনের দাহ্য পদার্থের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে দমকলের ছাড়পত্র আবশ্যিক।
দমকলের ছাড়পত্র না থাকলে পুরসভা কাউকে ট্রেড লাইসেন্স দেয় না।
ইদানীং লাইসেন্স নবীকরণের ক্ষেত্রেও পুরসভা দমকলের ছাড়পত্রের উপর গুরুত্ব দেয়।
শহরের অনেক জায়গাতেই লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
|
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী |
|
|
|
|
|