শীতের ব্যথা ব্যায়ামে কাত
খুশিতে বাঁচুন
জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। লেপ-কম্বলের মধ্যে গুটিয়ে থাকছেন। সোফা, চেয়ার বা বিছানায় কেটে যাচ্ছে সময়। এতে পসচার নষ্ট হচ্ছে। চাগিয়ে উঠছে মেরুদণ্ডের পুরনো ব্যথা। অনেকের আবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোমর বা ঘাড়ে ব্যথা হয়। এর কারণও, এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ শুয়ে বা বসে থাকা। এ থেকে অবসাদও আসতে পারে।


মাঝে মাঝেই পসচার ঠিক আছে কি না দেখুন। মেরুদণ্ড টানটান রাখুন। কুঁকড়ে শুয়ে থাকলে বা গুটিয়ে বসে থাকলে মেরুদণ্ড গোলাকার হয়ে যায়। ডিস্কে চাপ পড়ে।
১৫-২০ মিনিট অন্তর উঠে একটু হাঁটাচলা করুন। এতে নিতম্বের অংশের পেশিতে রক্তের সঞ্চালন ঠিক থাকবে। পেশি বেশি সঙ্কুচিত হবে না। ৭-৮ ঘণ্টার বেশি একটানা ঘুমোবেন না। টানা শুয়ে থাকলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
মেরুদণ্ড-সংলগ্ন পেশির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলে ব্যথা হবে না। পসচারের ভুলে এখানকার পেশি সঙ্কুচিত হয়ে যায়। স্ট্রেচিং করলে পেশিগুলি স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যে ফিরে আসে।

নাইন্টি-নাইন্টি স্ট্রেচ: ছবির মতো দুই হাঁটু ভাঁজ করে ফিমার বোন আর টিবিয়ার মধ্যে ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি করুন। ধরুন বাঁ-পা সামনে আছে। তা হলে বাঁ হাতে ভর করে প্রথমে নিজের মালাইচাকির দিকে ঝুঁকে বুকের হাড় স্টারনামকে যতটা সম্ভব কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ওই অবস্থানে মনে মনে পাঁচ গুনুন। এর পরে নিঃশ্বাস ছেড়ে মেরুদণ্ডকে টান টান রেখে আরও একটু ঝোঁকার চেষ্টা করুন। মনে মনে পাঁচ গুনুন। এর পরে ঘুরে প্রথমে সিন বোনের মাঝামাঝি পর্যন্ত আগের মতো বুক ঝোঁকান। চেষ্টা করুন পায়ের পাতার কাছেও একই ভাবে বুক ঝোঁকাতে। অনেকেই পায়ের পাতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন না। এই স্ট্রেচটা দু-পায়েই করবেন। মেরুদণ্ড যেন সব সময়ে টানটান থাকে। সাধ্যমতো ঝুঁকুন। তিন বার করে রিপিট করুন। এতে নিতম্বের গ্লুটিয়াস পেশি দীর্ঘায়িত হয়। স্ট্রেচের পরে কোমর হালকা লাগবে। আরাম বোধ করবেন।

হ্যামস্ট্রিং-এর এস এল আর: চিৎ হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাঁজ করে শূন্যে ধরে রাখুন। অন্য পা মাটিতে সোজা করে রাখুন। এ বার ভাঁজ করা পা হাতের সাহায্যে সোজা করার চেষ্টা করুন। অনেকেরই সোজা করতে কষ্ট হবে। সাধ্যমতো সোজা করুন। মনে মনে দশ গুনুন। দু-পায়েই তিন বার করে রিপিট করুন। হ্যামস্ট্রিং পেশি এই স্ট্রেচিং-এ দীর্ঘায়িত হয়। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকলে হ্যামস্ট্রিং-এর সঙ্কোচন হওয়ায় অনেকের কোমরে ব্যথা হয়।

হাঁটু গেড়ে শোল্ডার ফ্লেক্সন স্ট্রেচ: একটা বেঞ্চ বা বাড়ির বিছানায় হাঁটু গেড়ে বসে ছবির মতো করে দুই হাতে ভর দিন। এ বার হাঁটু থেকে হাতের একটা দূরত্ব তৈরি করে বেঞ্চে হাতের চাপ দিয়ে বুক নীচের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এই স্ট্রেচ তিন বার রিপিট করুন। পিঠের ল্যাটিসিমাস ডর্সি পেশি, কাঁধের সামনের পেশি এতে দীর্ঘায়িত হয়। যাদের ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে, এই স্ট্রেচটা করলে তাঁরা আরাম পাবেন।

পেশির জোর বাড়ান। মেরুদণ্ডের গভীরের পেশিকে সুদৃঢ় করুন। মেরুদণ্ড গোলাকার হওয়া থেকে বাঁচাতে কয়েকটি এক্সটেনশন ব্যায়াম করুন। যেমন:

বুকের উপর অল্টারনেট সুপারম্যান হোল্ড: মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে ছবির মতো বাঁ হাত আর ডান পা একই সঙ্গে মাটি থেকে শূন্যে তুলে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। মাথাও শূন্যে থাকবে। একই ভাবে ডান হাত আর বাঁ পা টানটান করে তুলে ধরে রাখুন। দু’দিকেই তিন বার রিপিট করুন। পিঠের উপরের অংশের এবং কোমরের নীচের অংশের পেশি এতে শক্তিশালী হয়।

বেঞ্চে ভর রেখে ব্রিজ: বেঞ্চের উপরে মাথা আর হাঁটু ভাঁজ করে বাকি শরীর ছবির মতো শূন্যে ধরে রাখাকেই বলে ব্রিজ। ১০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। কোমরের গভীরের পেশি, হিপের পেশি, হ্যামস্ট্রিং এতে শক্তিশালী হয়। তিন বার রিপিট করুন।

কোবরা রেইজ আর থাম্ব এক্সটার্নাল রোটেশন: উপুড় হয়ে শুয়ে বুক যথাসাধ্য মাটি থেকে উপরে তুলতে হবে। একই সঙ্গে বুড়ো আঙুল ঘুরিয়ে বাইরের দিকে করে দু’হাত শূন্যে তুলতে হবে। ২-৩ সেকেন্ড ধরে রাখুন। প্রথমে সপ্তাহে পাঁচ বার, পরে ১০ বার করে কোবরা রেইজ করুন। এতে পিঠের উপরের পেশির জোর বাড়ে। যাদের কাঁধ গোলাকার হয়ে সামনে ঝুঁকে যায় তাদের উপকার হয়।
ব্যায়ামগুলি সপ্তাহে ৫-৬ দিন করুন। স্ট্রেচগুলি রোজই করুন।

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.