বাঙালির হাতেই কি নাচছে বাংলার স্বপ্নভঙ্গ? না কি সাহেবিয়ানার রোয়াবি জেদে ফের আই লিগের ভাগ্যলক্ষ্মী কড়া নাড়তে শুরু করবে লাল-হলুদ তাঁবুতে?
আই লিগের শাহি-সওয়ারির নতুন ঠিকানা কলকাতা না গোয়া, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে শনিবার। যখন লিগ শীর্ষে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সের মুখোমুখি হবে ‘সেকেন্ড বয়’ ইস্টবেঙ্গল। যদিও দুই কোচই কিছুটা দার্শনিক ভঙ্গিতে বললেন, “এই ম্যাচ হারলেই লিগ শেষ হয়ে যাবে না। জল আরও অনেক দূর গড়াবে।”
জমজমাট যুদ্ধের অন্তরালে অবশ্য লুকিয়ে আছে বঙ্গসন্তান সুভাষ ভৌমিক বনাম ইংরেজ কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের মনস্তাত্ত্বিক কেরামতি। আর শুক্রবার সকাল থেকেই সেই ঝাঁঝে গরম ময়দান। সুভাষের মগজাস্ত্র কাজে লাগিয়ে গোপন অনুশীলন সারলেন মর্গ্যান। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ঘণ্টা আগে। ঠিক যে ভাবে মোহনবাগান কোচ থাকার সময় এক বার লুকোচুরি খেলেছিলেন সুভাষ। পুরনো অস্ত্র ব্যবহার না করলেও, কলকাতা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পৈলানে বসে ইস্টবেঙ্গলকে আটকানোর ছক কষলেন চার্চিল কোচ। একান্তে। গোপনে। বহিরঙ্গের চিত্রনাট্যে ধরা না পড়লেও অন্দরমহলের চোরা টেনশনটা কম্বল চাপা দিয়ে রাখতে পারলেন না মর্গ্যান। কেননা আই লিগের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে ইস্টবেঙ্গলকে জিততেই হবে। সেখানে সুভাষের দলের আপাতত ড্র করলেই চলবে। মর্গ্যান নিজেও স্বীকার করলেন, “তিন পয়েন্ট পেতেই হবে। না হলে চার্চিলের সঙ্গে দূরত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে। অসম্ভব না হলেও, আই লিগে জেতা খুব কঠিন হয়ে যাবে।” |
আজ মাঠেও কি স্টিয়ারিং তাঁর হাতেই থাকবে? শুক্রবার অনুশীলনের
পরে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর সামনে এডে চিডি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
চার্চিলের সামনে ইস্টবেঙ্গলের টিআরপি হল পরিসংখ্যান। ফেডারেশন কাপ এবং আই লিগ ধরলে এই মরসুমে মর্গ্যান বনাম সুভাষের স্কোর ২-০। দু’বারই জিতেছে লাল-হলুদ। সেখানে সুভাষ ভৌমিকের দলের বক্স অফিস চলতি আই লিগে তাঁদের ফর্ম। মজার ব্যাপার হল, শনিবারের ম্যাচ জিতলে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করে ফেলবেন প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার ও কোচ। প্রথমত ব্যবধান কমে দাঁড়াবে ১-২। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়নশিপের কক্ষপথ থেকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার আনন্দ। ভারতীয় ফুটবলে পোড়খাওয়া সুভাষ তা অক্ষরে অক্ষরে জানলেও শুক্রবার নিজেকে মুড়ে রাখলেন বিনয়ের চাদরে। বললেন, “আমরা ছোট দল। দেশের অন্যতম সেরা দলের বিরুদ্ধে কাল খেলতে হবে। যারা টেকনিকে আর ট্যাকটিক্সে সেরা।” লিগ টেবলে যারা এক নম্বরে তারা ছোট দল? প্রশ্ন শুনেই অভিমানী গলায় বললেন, “এই বাংলা থেকেই তো গলাধাক্কা খেয়ে গোয়ায় যেতে হয়েছে। আর কীসের এক নম্বর? লিগের এখনও অনেক বাকি।” সুভাষের দলে নেই কোনও কার্ড সমস্যা বা চোট-আঘাত। তাই মর্গ্যানের দলের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তি নিয়েই নামছে চার্চিল। |
আমরা ছোট দল। দেশের অন্যতম
সেরা দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে।
যারা টেকনিকে আর ট্যাকটিক্সে সেরা।
সুভাষ ভৌমিক |
তিন পয়েন্ট পেতেই হবে। না হলে
চার্চিলের সঙ্গে দূরত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে।
আই লিগ জেতা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
ট্রেভর জেমস মর্গ্যান |
|
শনিবারের ম্যাচেও লাল-হলুদের স্টিয়ারিং চিডির হাতে থাকলেও, চোট সারিয়ে মাঠে ফিরতেই নতুন দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হল হরমনজিৎ সিংহ খাবরার। বুদ্ধিদীপ্ত মিডফিল্ডার ও ‘গোল হান্টার’ তো ছিলেনই। এ বার যোগ্য ডিফেন্ডার হয়ে ওঠার পালা। লাল-হলুদ বক্সে বেটোদের ঘূর্ণি ঝড় ঠেকাতে নওবার বদলে রাইটব্যাকে খেলবেন খাবরা। কেন? নওবার ছিপছিপে চেহারা দিয়ে বেটোকে আটকানো যাবে না যে! আর খাবরার কাজ হল বেটোর পায়ে বল পড়লেই ঝাঁপিয়ে পড়া। বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হল না যে, রহিম নবির শূন্যতা ঢাকতে খাবরাকে সম্পূর্ণ নিংড়ে ফেলতে চাইছেন মর্গ্যান।
খাবরা ফিরলেও সঞ্জু প্রধান নেই। ছাড়পত্র না আসায় চতুর্থ বিদেশি বরিসিচকেও পাওয়া যাচ্ছে না শনিবারের ম্যাচে। ফলে ক্লান্তি নিয়েই গোলের খোঁজে নামতে হবে চিডিকে। চলতি আই লিগে এগারো গোলের মালিক নাইজিরিয়ান গোলমেশিন বাড়ি যাওয়ার আগে চিন্তিত স্বরে বলে গেলেন, “কাল গোল করতে হবে। না হলে এ বছরও আই লিগ জেতা যাবে না।” গোয়ার দলটির মাঝমাঠের প্রাণভোমরা ব্রাজিলীয় বেটো-ও জানেন সে কথা। তাই পৈলানের মাঠে অনুশীলন সেরে বাসে ওঠার আগে হয়তো নিজের টেনশন কাটাতেই তিনি বলে গেলেন, “আমরা নই। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে চাপে থাকবে চিডি-মেহতাবরাই।”
|
শনিবারে আই লিগ
• ইস্টবেঙ্গল-চার্চিল ব্রাদার্স (যুবভারতী, ২-০০)
• মুম্বই এফসি-ইউনাইটেড স্পোর্টস (পুণে, ৭-০০)
• ডেম্পো-সিকিম ইউনাইটেড (মাপুসা, ৩-৪৫) |