ঘর ভেঙে এক ঘুমন্ত বৃদ্ধকে শুঁড়ে তুলে টেনে ছিড়ে মারল বুনো দাঁতাল। শুক্রবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের (পূর্ব) পানবাড়ি জঙ্গল লাগোয়া উত্তর শিবকাটা গ্রামে। মৃত বৃদ্ধের নাম যামিনী মল্লিক (৮৫)। ওই ঘটনার জেরে উত্তেজিত বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন সকালে বন দফতরের পূর্ব রাজাভাতখাওয়ার রেঞ্জারের উপরে হামলা চালায়। ওই সময় রেঞ্জারকে বাঁচাতে গিয়ে এক প্রাথমিক শিক্ষক সহ স্থানীয় তিন জন বাসিন্দা জখম হন। মহম্মদ ইকবাল নামে ওই শিক্ষককে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের (পূর্ব) বিভাগের সহকারী ক্ষেত্র অধিকর্তা ভাস্কর জেভি বলেন, “মৃতের পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে হাতির হামলা বন্ধ করতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। তবে এ দিন রেঞ্জারের উপরে হামলার ঘটনায় জড়িত দুজনের নাম জানা গিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” গদাই মাহাতো ও জহরলাল সরকার নামে জখম দুই গ্রামবাসী জানান, এ দিন ভোর তিনটে নাগাদ একটি দাঁতাল হাতি পানবাড়ি জঙ্গল থেকে বের হয়ে গদাধর বস্তিতে ঢোকে। মিনু রাভার ঘর ভেঙে হাড়িয়া খায়। বনকর্মী ও গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে বুনোটি ভোর চারটে নাগাদ উত্তর শিবকাটা গ্রামে ঢোকে। সেখানে যামিনীবাবুর বাড়িতে হামলা চালায়। প্রথমে রান্না ঘর ভেঙে লবন ও আটা খায়। ওই সময় বৃদ্ধ ঘুমিয়ে ছিলেন। একই ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছিলেন ছোট ছেলে রবি। শব্দ পেয়ে রবিবাবু স্ত্রী সন্তান নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেও তাঁর বৃদ্ধ বাবা পালাতে পারেননি। ঘর ভেঙে শুঁড়ে পেচিয়ে তাঁকে বিছানা থেকে উঠোনে টেনে নামিয়ে প্রথমে পা দিয়ে পিষতে শুরু করে হাতি। পরে তাঁর শরীর টেনে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
বৃদ্ধের ছেলে রবি বলেন, “বাবা চোখে কম দেখতেন। আমরা বুঝতে পারিনি হাতি ওঁকে তুলে নিয়েছে। মশাল জ্বেলে দেখি সব শেষ।” গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ঘটনার সময় বন দফতরে খবর দেওয়া হলেও কেউ আসেননি। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত মনে করেন, পুরনো আক্রোশে হাতি বৃদ্ধকে এ ভাবে মেরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “বনকর্মীর উপরে হামলা কাম্য নয়।” এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ রেঞ্জার ভবেন বসুমাতা এলাকায় গেলে বাসিন্দারা প্রথমে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। পরে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। ওই সময় বাসিন্দাদের কয়েকজন রেঞ্জারকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেঞ্জারকে উদ্ধার করে। রেঞ্জার বলেন, “দুঃখজনক ঘটনা। এ ভাবে আক্রমণের মুখে পড়তে হবে ভাবিনি।” |