খোদ মুখ্যসচিবের পাড়ায় কুকুরের চিৎকারে অতিষ্ঠ জীবন। রাতে ঘুম নেই। অভিযোগ পেয়ে, কুকুরের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে যান পুরসভার কুকুর ধরার কর্মীরা। গোটা কয়েক কুকুর ধরে কাজ শুরুও করেছিলেন তাঁরা। পরে পাড়ারই কিছু বাসিন্দা পুরকর্মীদের পথ আটকে জানিয়ে দেন, কুকুর ধরা চলবে না। এমনকী, যে কয়েকটা কুকুর ধরেছিলেন ওই কর্মীরা, তাদেরও গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কুকুর ধরলে ওই কর্মীদের মারধর করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
শিয়াল-কুকুরের চিৎকারে রাতে অনেকেরই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যেমনটি হয়েছিল প্রয়াত জ্যোতি বসুর। সল্টলেকের ইন্দিরা ভবনে থাকাকালীন সেন্ট্রাল পার্কের শিয়ালের চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন তিনি। এক নাগাড়ে ওই পর্ব চলতে থাকায় পুলিশ শিয়াল ধরার জন্য অভিযান চালায়। অভিযোগ উঠেছিল শিয়াল মারারও।
এ বার কুকুরের উৎপাতে ‘দুর্বিষহ’ অবস্থা গল্ফ ক্লাব রোডে। ওই পাড়াতেই থাকেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানান, পুরসভায় আসা অভিযোগের ভিত্তিতেই কুকুর ধরার কর্মীরা গত সপ্তাহে গাড়ি নিয়ে ওই এলাকায় যান। কয়েকটি কুকুর ধরাও হয়। তার পরেই স্থানীয় বেশ কিছু বাসিন্দা পুরকর্মীদের কাজে বাধা দেন। ওই দলে পাড়ার মহিলারাও ছিলেন। পুরকর্মীদের বক্তব্য, স্থানীয় বরোর (১০ নম্বর বরো) একাধিক কাউন্সিলর ও আধিকারিকদের জানানো হয়েছিল। তাঁরা জানান, পরিকল্পনা করার আগে জানানো প্রয়োজন ছিল। |
যদিও গত সপ্তাহের ঘটনার পরে আজ, শনিবার ভোরে ফের ওই এলাকায় কুকুর ধরার অভিযান করার কথা ছিল। কিন্তু কুকুর ধরায় নিযুক্ত পুরকর্মীরা সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের কথায়, যে ভাবে সে দিন বাসিন্দারা তেড়ে এসেছিলেন, তাতে আর সেখানে যেতে সাহস হচ্ছে না। অফিসারদের সবই জানানো হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে সেই অভিযান আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
তা হলে কি কুকুর ধরা এখন বন্ধ থাকবে? পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে নির্বীজকরণ ও বন্ধ্যত্বকরণ হলে কুকুরের চিৎকার ও দৌরাত্ম্য কমে। আমরা জাতীয় পশু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মেনে রাস্তার কুকুরের স্টেরিলাইজেশন করি। প্রতিটি কুকুরকে যেখান থেকে তুলে আনা হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পরে সেখানেই আবার তাদের ছেড়ে আসা হয়।”
তিনি জানান, ছাড়ার আগে জলাতঙ্কের কথা ভেবে তাদের অ্যান্টি র্যাবিস সিরামও দেওয়া হয়। সব কিছু হয় শহরবাসীর কথা ভেবেই। তাঁর বক্তব্য, “এর পরেও কেউ যদি বাধা দেন, তা হলে কী আর করব? বাধা পেলে সেখানে কাজ করা যাবে না।” |