|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন... |
|
অঙ্ক আর শূন্য নয় |
গৌতম ঘোষের সঙ্গে চল্লিশ বছরের বন্ধুত্বের পর খাতায় প্রথম দাগ পড়ল।
এ বার
ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় তাঁর ছবি ‘শূন্য অঙ্ক’য়। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রকে ইন্টারভিউতে কী প্রশ্ন করা হয়েছিল?
‘আনন্দ প্লাস’ ক্যুইজে এমনই একটা প্রশ্ন ছিল। অঞ্জন দত্তের তৎক্ষণাৎ উত্তর ‘ভিয়েতনামের যুদ্ধ’।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে ঘটনাটার কথা বলা হলে, হাসলেন তিনি। “হ্যাঁ, শুনেছি। ট্যুইটারে দেখলাম, ক্যুইজে সৃজিত জিতেছে,’’ বললেন তিনি। তার পর চলে গেলেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র কথায়। আজও কী ভাবে অল্পবয়েসিদের কাছ থেকে ফিল্মটা নিয়ে প্রশংসা পান।
‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ১৯৭১ সালের ফিল্ম।
তার পর হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি মিলিয়ে চল্লিশটারও বেশি ছবি করেছেন তিনি। সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘ব্ল্যাক’, মণিরত্নমের ‘গুরু’, স্যাফ আলি খানের সঙ্গে ‘এজেন্ট বিনোদ’। আর কেট উইন্সলেটের সঙ্গে ‘হোলি স্মোক’য়ে অভিনয় করার পরে মজা করে বলেছিলেন, হলিউড-তারকার কপালে হাত দেওয়ার পরে নিজের হাতটাই ধুতে চাননি কিছু দিন!
শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে গৌতম ঘোষের ‘শূন্য অঙ্ক’। এক ডাক্তারের চরিত্রে ধৃতিমান। পরিচালকের সঙ্গে বন্ধুত্ব চল্লিশ বছরের ওপর। তবু এত দিন পরে তাঁর সঙ্গে কাজ! অভিমান হয়নি? “না, সে তো ‘সমাপ্তি’র পরে অপর্ণাও আর মানিকদার সঙ্গে কাজ করেননি। অভিমান তখনই হয়, যখন একটা রোল দেখে মনে হয় যে ওটা আমারই পাওয়ার ছিল। কিন্তু অন্য কাউকে দিয়ে করানো হয়েছে। সেই হিসেবে গৌতমের কোনও ছবি দেখে সেটা মনে হয়নি।”
এর আগে নাসিরউদ্দিন শাহ আর ধৃতিমানকে নিয়ে গৌতমের একটা হিন্দি ছবি বানানোর পরিকল্পনা ছিল। যে কোনও কারণে সেটা হয়নি। তবে ‘শূন্য অঙ্ক’য় ধৃতিমানের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটি নিয়ে অনেকের কৌতূহল থাকতে পারে। “যাঁর সূত্র ধরেই আমার চরিত্রটি লেখা তাঁর নাম বলব না। তাতে হয়তো অনেক বাগবিতণ্ডা হতে পারে। আমার রেফারেন্সের চরিত্রটি ভারতবর্ষের মানবাধিকার নিয়ে অনেক কাজ করছেন। আমি ওঁর কাজ ফলো করি। চেন্নাইয়ের একটা কলেজে ভদ্রলোক বক্তৃতা দিয়েছিলেন অপুষ্টি আর দুর্ভিক্ষ নিয়ে। ছবি করার সময় গৌতমের নজরে এনেছিলাম বিষয়টি।”
অত্যন্ত সমসাময়িক একটি প্রসঙ্গ নিয়ে ‘শূন্য অঙ্ক’ বানানো। জনযুদ্ধ। কঠিন সমস্যার সমাধানের জন্য হিংসার আশ্রয় নেওয়া। প্রগতির নামে মানুষকে শোষণ। “ব্যক্তিগত ভাবে আমি হিংসায় বিশ্বাস করি না। সে রাজনৈতিক ভাবে হোক বা অন্য কিছু। হিংসা সব সময়ই নিন্দনীয়,” ধৃতিমান বলেন। |
|
‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ বানানোর পরে সত্যজিৎ রায় ধৃতিমানকে ‘স্টার’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। সে কারণেই কি আজও ধৃতিমান ‘থিংকিং উইমেন’স ড্রিম ম্যান’? নাকি পড়াশোনা আর বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তায় নজর কাড়েন? “জানি না, আজও কার নজর কাড়ি! তবে মৃণালদার কাছে শিখেছি, মনের বয়েসটাকে না বাড়তে দিতে।”
কথা বলতে বলতে খুব স্বাভাবিক ভাবে সত্যজিৎ রায়ের কথা উঠে আসে। “মানিকদাকে বলেছিলাম এমন একটা ইন্টারভিউ নেব, যেখানে সিনেমা ছাড়া আর সব বিষয়ে আলোচনা হবে। উনি রাজি। রাজনীতি। আধ্যাত্মিকতা। পরিবেশ। কিংবা কোনও একটা সময় বা স্থানের প্রতি আনুগত্য মানে কী দাঁড়ায় এই সব নিয়েই আলোচনা হয়। মানিকদা খুবই সমকালীন ছিলেন। সমকালীন আর আধুনিক কিন্তু এক নয়। খুব ব্যালান্সড একটা দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ওঁর।” আরও উপলব্ধি হয়েছিল তাঁর। “মানিকদা রাগী ছিলেন না। যদিও ওঁর ‘সদ্গতি’, ‘জনঅরণ্য’ আর শেষের দিকের ছবিগুলোর মধ্যে রাগটা প্রকাশ পেয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কী করে সম্ভব? উনি বলেছিলেন, “দেখো ভীষণ ভাবে রেগে যাওয়ার মতো চারদিকে হয়তো অনেক কিছু হচ্ছে। তবে আমি যদি সব সময় রেগেই থাকি তা হলে ছবিটা করব কখন?”
ধৃতিমান নিজেও রাগী নন। তবে মাঝে মাঝে অসহায় লাগে। “রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা মাথায় তুলি। ইদানীং দেখুন কেমন, যেন একটা ঝগড়ার পরিবেশ। এই যেমন কৃষি বনাম শিল্প। স্পর্শকাতর বিষয়কে ঝগড়া না করে বোঝার চেষ্টা করা সম্ভব।”
আর আজকের বাংলা ছবি? “বেশ এনার্জি আছে। আর একটু সাহসী হলে ভাল লাগত।” অভিনেতা হিসেবে ধৃতিমান আজকে অনেক বেশি ঝুঁকি নেন। নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে মজা পান। একটা মালয়ালাম ছবি করবেন। তা ছাড়া আছে একটি ইংরেজি ছবি ও কিছু বাংলা।
তার আগে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে একটি বই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক উল্টো দিকে ন্যাশনাল ইন্সট্রুমেন্টের বাড়িটা অনেক দিন পড়ে আছে। শু্যটিঁংয়ের সূত্রে ওখানে গিয়েছিলেন। “ভেতরটা অদ্ভুত লেগেছিল। হঠাৎ ভূমিকম্প বা সুনামি আসার সঙ্কেত পেয়ে সবাই কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছে। মেশিনগুলো ঠিক ওই অবস্থাতেই রয়ে গেছে। আমি ওখানে গিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে ছবি তুলেছিলাম,” বলছিলেন ধৃতিমান।
আর সেই ছবিগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে বইটাতে। নাম “স্মৃতিলেখা”। কৌরব গোষ্ঠীর আর্যনীল মুখোপাধ্যায়ের কবিতার সঙ্গে। মানুষের ছবি তোলেন? “না, মুখের দিকে ক্যামেরা তাক করতে কুণ্ঠা বোধ করি,” বললেন তিনি। নিজের বাড়ি আছে গোয়াতে। গোয়ার ছবি তুলেছেন? আলোকচিত্রী প্রবুদ্ধ দাশগুপ্তের মতো? “আমি প্রবুদ্ধর মতো করে ছবি তুলতে পারব না। কিন্তু গোয়ার ছবি তুলতে চাই। বর্ষাকালে গোয়া ভারী সুন্দর লাগে...”
কলকাতাতে আবার বাসা বাঁধতে ইচ্ছে করে না? “কলকাতা ছেড়ে যাইনি। চেন্নাইয়ের বাড়িটা আমার অফিশিয়াল ঠিকানা। তবে ওই বাড়িটার থেকে আমার অনেক বেশি সময় কাটে কলকাতার বাড়িতে। আর সত্যি কথা বলতে কী, মনের ঠিকানার আরেক নাম হল আমার বাড়ির অ্যাড্রেস। হোম ইজ হোয়্যার আই ফিল অ্যাট হোম।” |
|
|
|
|
|