|
|
|
|
নতুন ভারতকে চিনুন, সনিয়ার নয়া পাঠ দলকে |
শঙ্খদীপ দাস • জয়পুর |
চোদ্দ মাস বাদে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দুর্নীতি ও সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া যখন ক্রমশ গতি পাচ্ছে, তখন ‘নতুন ভারতের পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জ’ আজ দলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইলেন সনিয়া গাঁধী। মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে সময়োপযোগী হয়ে ওঠার জন্য সতর্ক করে দিলেন কংগ্রেসকে।
কী ধরনের চ্যালেঞ্জ?
রাজস্থানে চিন্তন শিবিরের উদ্বোধনী বক্তৃতায় কংগ্রেস সভানেত্রী বললেন, “নতুন, পরিবর্তিত ভারতকে চিনতে হবে। যে ভারতে নবীন প্রজন্মের সংখ্যা বাড়ছে। তুলনায় যাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি শিক্ষিত। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য তাঁদের আকাঙ্ক্ষা, অসহিষ্ণুতা এবং চাহিদাও তাই বেশি।”
দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কেন্দ্রের গৃহীত নীতির কারণেই দেশ ও সমাজের এই পরিবর্তন এসেছে বলে সনিয়া কৃতিত্ব নিতে চান ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে এও বুঝিয়ে দেন, “টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল ও ইন্টারনেটের যুগে আজকের প্রজন্ম এখন অনেক সচেতন ও আধুনিক। যথার্থ কারণেই তারা দৈনন্দিন জীবনে দুর্নীতির ছায়াপাত নিয়ে অসন্তুষ্ট। শিক্ষিত এই মধ্যবিত্ত সমাজ আর অন্ধকারে না থেকে বরং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারও অংশীদার হয়ে উঠতে চায়। তাই তাদের আবেগ-আন্দোলনের সঙ্গেও এ বার জুড়তে হবে কংগ্রেসকে।”
কেন্দ্রে গত ৯ বছরের ইউপিএ শাসনে একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা ও তার পটভূমিতে অণ্ণা হজারে-অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের আন্দোলনের প্রসঙ্গেই যে সনিয়া এ কথা বলেছেন, সংশয় নেই। দিল্লিতে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় গণবিক্ষোভও দেখিয়ে দিয়েছে, শিক্ষিত সমাজের অসহিষ্ণুতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সনিয়া এ দিন জানিয়েছেন, জল, জঙ্গল, জমি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে সারা দেশেই মানুষ পথে নেমেছেন। এই সব বিষয় নিয়ে কংগ্রেসকে সক্রিয় হওয়ারই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সভানেত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিটাই আগামী লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের সামনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। দশ বছর আগে-পরে ভারতের এই বদলটা বুঝতে পারলেই দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, সামাজিক বৈষম্য, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক বিচারের মতো চ্যালেঞ্জগুলি ধরতে পারবে দল।” ওই নেতা জানান, এ সব মাথায় রেখেই চিন্তন শিবির থেকে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে কংগ্রসকে।
সেই কৌশল নির্ধারণের জন্য সনিয়া চিন্তন শিবিরে খোলাখুলি আলোচনা চেয়েছেন ঠিকই। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেও আজ কিছু দাওয়াই দিয়েছেন। তিনি যেমন দুর্নীতি নিয়ে সতর্ক করেছেন দলকে, তেমনই জানিয়েছেন, জীবনধারনেও পরিবর্তন আনা জরুরি। তাঁর কথায়, “বিয়ে, উৎসব, অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা একটা দিক। কিন্তু তার মধ্যে দিয়ে অর্থ, ক্ষমতা ও দম্ভের বহিঃপ্রকাশকে কী বলা যেতে পারে! কেন না স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এত সম্পদের উৎস কী?” একই ভাবে কেন্দ্রে ও রাজ্যস্তরে দলের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ রচনারও নির্দেশ দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, রাজনৈতিক শ্রেণির যে সব নেতিবাচক আচরণ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে, চিন্তন শিবিরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেগুলিকেই চিহ্নিত করে দলকে দেখিয়ে দিয়েছেন সভানেত্রী।
|
|
কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের উদ্বোধনে মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী। শুক্রবার জয়পুরে। ছবি: পি টি আই |
এর আগে দু’টি চিন্তন শিবির হয়েছিল কংগ্রেসের। ১৯৯৮ সালে পঁচমড়ী চিন্তন শিবির দলের ‘একলা চলো’র অবস্থানে অনড় থাকার সিদ্ধান্তের জন্য উল্লেখযোগ্য। ২০০৩-এ শিমলার চিন্তন শিবিরের সিদ্ধান্ত ছিল, বিজেপি-কে হারাতে বৃহত্তর ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়া। সে দিক থেকে দলের তৃতীয় চিন্তন শিবির একেবারেই অন্য রকম। এবং তা মূলত দু’টি কারণে। এক, অতীতে দু’টি চিন্তন শিবিরের সময়ই কংগ্রেস ছিল কেন্দ্রে বিরোধী আসনে। এখন ক্ষমতায় থেকে তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখোমুখি। তা ছাড়া, অতীতে যে সব রাজ্য কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত ছিল, এখন তার অনেকগুলিতেই তারা ক্ষমতাচ্যুত। আগের দু’বারের সঙ্গে এ বারের চিন্তনের এই ফারাকটাও আজ তুলে ধরেন সনিয়া। সেই সঙ্গে জানান, এ বারের বৈঠকটি আরও একটি কারণে আলাদা। এই প্রথম কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ বৈঠকে গুরুত্ব পেতে চলেছেন নবীন প্রজন্মের নেতারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে দলকে সময়োপযোগী করে তোলার ব্যাপারে সনিয়া যখন বার্তা দিচ্ছেন, তখন চিন্তনের মঞ্চে উপস্থিত রাহুল গাঁধী। মঞ্চের পিছনের পর্দাতেও তাঁর ছবি। আসনে কংগ্রেসের বর্ষীয়ানদের সঙ্গেই বসেছিলেন নবীন প্রজন্মের নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত সাড়ে তিনশো নেতার মধ্যে এ বার নবীনদের সংখ্যা ১৩০ জনেরও বেশি। কারও বয়স কুড়ি তো কারও আঠাশ। কেউ ছাত্র নেতা তো কেউ যুব। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, বিপুল সংখ্যায় নবীনদের এই উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে নতুন ভারতকেও বার্তা দিতে চেয়েছেন সনিয়া-রাহুল। বোঝাতে চেয়েছেন, বৃদ্ধতন্ত্র কবলিত কংগ্রেস নয়, নতুন প্রজন্মের মানুষের আকাঙ্খাপূরণ করবেন কংগ্রেসের এই নবীনরাই।
দলের নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ করে সনিয়ার আর একটি বার্তাও আজ গুরুত্বপূর্ণ। ডিজেলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণের জন্য দেশজুড়ে যখন বিক্ষোভ হচ্ছে, তখন আজ সংস্কার ও আর্থিক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও এঁদের সামনেই তুলে ধরলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বললেন, “এক দিকে আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়ন অন্য দিকে সামাজিক বিচার ও সুরক্ষা। এরা হল একই মুদ্রার দুই দিক। এই দুই বিষয়কে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে দলকে।” |
|
|
|
|
|