|
|
|
|
আর মমতার শর্তে জোট নয়, বোঝালেন সনিয়া |
জয়ন্ত ঘোষাল • জয়পুর |
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ফেরার আগ্রহ থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শর্তে যে তিনি সমঝোতা করবেন না, নাম না-করে সেটা বুঝিয়ে দিলেন সনিয়া গাঁধী। আজ দলের চিন্তন শিবিরের প্রারম্ভিক ভাষণে কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, “যে রাজ্যগুলিতে আমাদের জোট রয়েছে, সেখানে শরিক দলগুলির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন যেমন জরুরি, তেমনই দেখতে হবে শরিক দলের চাপে আমাদের দলের পুনরুজ্জীবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল ছাড়াও সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের আসাউদ্দিন ওয়াইসি-র এমআইএম, ঝাড়খণ্ডের বাবুলাল মরান্ডির ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা ইউপিএ ছেড়ে চলে গিয়েছে। একের পর এক শরিকদের এই বিদায় খুব সুখকর বলে মনে করছেন না সনিয়া। কারণ, একার শক্তিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারে, এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই।
১৯৯৮ সালে পঁচমড়ী অধিবেশনে একলা চলার নীতি নিয়েছিল কংগ্রেস। তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়। তার পর ৯ বছর আগে শিমলা অধিবেশনে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, এই মুহূর্তে জোট ছাড়া গতি নেই। লোকসভার মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশো আসন রয়েছে যে ৯টি রাজ্যে, সেখানে কংগ্রেস নির্ণায়ক শক্তি নয়। আঞ্চলিক দলগুলির মেরুকরণই ওই রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য। ফলে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে আঞ্চলিক দলগুলির উপরেই কংগ্রেসকে নির্ভর করতে হবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। সুতরাং লোকসভা ভোটের আগে স্বাভাবিক ভাবেই শরিক বাড়াতে তৎপর হবেন কংগ্রেস সভানেত্রী। |
|
চিন্তন বৈঠকে কংগ্রেস সভানেত্রী। জয়পুরে। ছবি: পি টি আই |
সনিয়া বলেন, “কিছু রাজ্যে বহু দিন ধরে আমরা ক্ষমতার বাইরে। আমরা বিশ্বাস করি ক্ষমতায় থাকাটাই আমাদের রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এটাও ঠিক যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না-থাকলে সাংগঠনিক সামর্থ্য ও মানসিক শক্তির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।” এই মন্তব্য করে সনিয়া বুঝিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে আগ্রহী। সে জন্য তারা যে জোট বাঁধার বিরুদ্ধে এমনও নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে দল কতটা এগোবে, তার লক্ষ্মণরেখাও আজ বেঁধে দিলেন সনিয়া।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, জোট গড়ার ক্ষেত্রে যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন সভানেত্রী। তাঁর কথায়, “আমরা জোট করে কোন রাজ্যে কতটা আসন বাড়াতে পেরেছি? উত্তরপ্রদেশে দল ব্যর্থ হয়েছে। জোট-শরিকরা আসন বাড়তে পারলেও আমরা পারিনি। তবে এটাও ঠিক যে কোনও রাজ্যে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকলে দলে হতাশা তৈরি হয়। তাই জোটের প্রয়োজন। কিন্তু সনিয়া গাঁধী বোঝাতে চেয়েছেন সে ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা দরকার।”
তৃণমূলের অবশ্য অভিযোগ, জোট রাজনীতির ভারসাম্য কংগ্রেসই রক্ষা করে না। এর প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেন, “জোট রাজনীতি করতে গেলে বাধ্যবাধকতা মানতে হয়। তা না-মেনে, রাজনৈতিক সৌজন্য না-দেখিয়ে জোটের বড় দল নিজের মতামত শরিকদের উপরে চাপানোর চেষ্টা করলে প্রতিবাদ করতেই হয়।”
জয়পুরের বিড়লা সভাগৃহে বসেছে কংগ্রেসের চিন্তন বৈঠক। পাঁচটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে তৈরি হয়েছে পাঁচটি পৃথক গোষ্ঠী। তারা পাঁচটি আলাদা আলাদা ঘরে আলোচনা শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিয়ে জোট প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “জোট সংস্কৃতির নামে রাজ্যে কংগ্রেসের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করে ছিলেন। যা সাংগঠনিক বৃদ্ধির অন্তরায়। একা এগোলে প্রথমে সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে।” একই মত মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের। এই তিন রাজ্যে এখনও জোট রয়েছে কংগ্রেসের তৃণমূল ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার আগে থেকেই দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরীরা হাইকম্যান্ডের কাছে মমতার অঙ্গুলিহেলনে না-চলার জন্য আর্জি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, আসন সমঝোতা থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সব ব্যাপারেই তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল সরে যাওয়ার পরে হাইকম্যান্ড অবশ্য কৌশল বদলেছে। তৃণমূলকে চাপে রাখতে দীপা, অধীর, আবু নাসের খান চৌধুরীকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারকেও কিছু ক্ষেত্রে চাপে ফেলছে কেন্দ্র। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ জঙ্গলমহলে সমাবেশ করে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। জয়রামের এই তোপের পিছনে রাহুল গাঁধীর ভূমিকা রয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। রাহুল চান জোট-নির্ভরতা কমিয়ে কংগ্রেস নিজের পায়ে দাঁড়াক। এই প্রেক্ষাপটে সনিয়া বুঝিয়ে দিলেন, মমতার সঙ্গে জোট বাঁধার বিরুদ্ধে নয় কংগ্রেস। কিন্তু মমতার শর্তে জোট করার বদলে নিজের শর্ত প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী তিনি। |
|
|
|
|
|