মাদকপাচারকারীদের জেরা করতে গিয়ে ফের লালবাজারের সামনে উঠে এল রেভ পার্টির বিষয়টি। শুধু তাই নয়, কোকেন-কাণ্ডে এ বার শহরের কয়েক জন ব্যবসায়ীপুত্র ও খেলোয়াড়ের নামও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। গত জুলাইয়ে শহরজুড়ে রেভ পার্টির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সত্ত্বেও যে তা বন্ধ করা যায়নি, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন গোয়েন্দারা।
বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাস থেকে প্রাক্তন বিমানসেবিকা সোনম গুরনানি-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের নার্কোটিক্স শাখা। উদ্ধার হয় কোটি টাকা মূল্যের কোকেন। তদন্তকারীরা জানান, সোনম-সহ বেশ কয়েক জন দীর্ঘ দিন কোকেন পাচারের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ই দক্ষিণ কলকাতায় রেভ পার্টির কথা জানা যায়। তার পর থেকেই ফের শহরজুড়ে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “কোকেন-কাণ্ডে অন্য জড়িতদের খোঁজ চলছে।”
গত জুলাই মাসে কলকাতা জুড়ে অভিযান চালায় নার্কোটিক্স শাখা। পাকড়াও করা হয় ডোনাল্ড উইসলে মেটল্যান্ড, অ্যাং সেরিং ইউবাথেনিন-সহ মাদকপাচার চক্রের একাধিক চাঁইকে। ধরা পড়েন এক সময়ের নামী গল্ফার রাজীব মোহতাও। পুলিশ বলছে, সেই ঘটনার পর সোনম, প্রসূনেরা গা-ঢাকা দেয়। সম্প্রতি তল্লাশি অভিযান আলগা হতেই ফের শুরু হয় রেভ পার্টি। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ডোনাল্ডের খদ্দেরদের নিয়েই রেভ পার্টি চালাত সোনম-প্রসূনেরা। তাঁদের হাত ধরেই ফের জাঁকিয়ে বসেছে মাদক চক্র।
পুলিশ জানায়, গোয়া, পুণে বা মুম্বই থেকে ট্রেনে হাওড়ায় আনা হত মাদক। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ত শহরে। এই কাজে আরও কয়েক জন (ক্যারিয়ার) যুক্ত ছিল। সোনমের সঙ্গী প্রসূনকুমার সাহা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্তা। তিনিই এই চক্রের পাণ্ডা বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, মাস কয়েক আগে শহরের মাদকপাচারের চাঁইরা গ্রেফতারের পর প্রসূন ও সোনমই কোকেন সরবরাহের মূল চক্রী হয়ে উঠেছিল।
জেরায় ধৃতেরা পুলিশকে জানান, বিভিন্ন পানশালা ও নাইটক্লাবে সোনম ও তাঁর সঙ্গীদের যাতায়াত ছিল। তদন্তকারীরা জানান, ওই পানশালাগুলিতে প্রসূন তাঁর পরিচিতদের নিয়ে যেত। সেখানে সোনম আলাপ জমাত প্রসূনের পরিচিতদের সঙ্গে। এর পর সোনমই দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি ডেরায় নিয়ে যেত ওই লোকেদের। লালবাজারের এক কর্তা জানান, আপাতত পাঁচটিরও বেশি ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। সেগুলিতে প্রায় রাতেই এমন আসর বসত। আরও কিছু ডেরার হদিস মিলতে পারে বলে পুলিশের আশা। বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছেন নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরের (এনসিবি) কর্তারাও। শুক্রবার তাঁদের দুই অফিসার লালবাজারে এসে সোনমদের বিষয়ে খোঁজখবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ছ’জনকে এ দিন আলিপুর আদালত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেয়। |