দোহা থেকে কলকাতায় আসছিল একটি বিমান। অনুমতি পেয়ে ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে সেটি নামতে শুরু করে। সেই সময়েই হংকং থেকে একটি বিমান যাচ্ছিল দুবাইয়ের দিকে। ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় মাঝ আকাশে সেটি মুখোমুখি পড়ে কলকাতামুখী ওই বিমানটির। ঠিক সময়ে বিপদ-সঙ্কেত না পেলে এ ভাবেই সাম্প্রতিক কালের সব চেয়ে সাংঘাতিক এই ঘটনাটি ঘটতে চলেছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে। অথচ, এমনটা হওয়ার কথা নয়। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী বিমান নামা এবং আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া অন্য বিমানের পথ সম্পূর্ণ আলাদা।
সম্প্রতি পরপর কয়েকটি ঘটনায় আকাশে মুখোমুখি চলে এসেছে দুই বিমান। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারদের এই বিমানগুলির উপরে নজর রাখার কথা। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পাইলটেরা এটিসি-র নির্দেশ মানছেন না বলে যেমন অভিযোগ এসেছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতির আঙুল উঠেছে এটিসি অফিসারদের উপরেও। কলকাতায় এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ)।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দোহা থেকে কলকাতায় আসছিল কাতার এয়ারওয়েজের বিমান। ৩৫ হাজার ফুট উপর থেকে পাইলট নামার অনুমতি চান কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে। বিমানটি তখন শহর থেকে প্রায় ৮৫ নটিক্যাল মাইল পশ্চিম আকাশে। এক এটিসি অফিসারের কথায়, “নামার জন্য আলাদা রুটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিমানকে। তা হলে বিমানটি নিরাপদে সেই রুটে নেমে আসবে বিমানবন্দরে। আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া অন্য বিমানের ধারেকাছেও তার কোনও মতে আসার কথা নয়।” |
নির্দেশ পেয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে নামতে শুরু করে কাতার। উল্টো দিক থেকে বেলজিয়ামের টিএনটি সংস্থার বিমান হংকং থেকে যাচ্ছিল দুবাইয়ের দিকে। সেটি ৩০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ছিল। দুপুর বারোটা দশ মিনিট নাগাদ কলকাতার ৮০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে, মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে দু’টি বিমান একেবারে মুখোমুখি হয় বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে। আকাশে অন্য বিমান কাছাকাছি চলে এলে এখন ককপিটে বিপদ-সঙ্কেত ও তৎসংক্রান্ত নির্দেশ পান পাইলটেরা। প্রতিটি বিমানেই এখন এই ব্যবস্থা রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরেও সেই সঙ্কেত আসে দু’টি বিমানেরই ককপিটে। কাতারকে বলা হয়, উপরে উঠে যেতে। টিএনটি নেমে আসে নীচে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, কাতার বিমান সংস্থার পাইলটকে যে রুটে নামতে বলা হয়েছিল, তার বদলে তিনি অন্য একটি রুট দিয়ে নামতে শুরু করেন। সেই রুট ধরে নিয়ম মেনেই টিএনটি যাচ্ছিল পূর্ব থেকে পশ্চিমে। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, “কাতারের পাইলটের ভুল হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যে এটিসি অফিসার বিমানকে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁরও দেখার কথা ছিল সেই বিমানটি নির্দেশ মতো নামছে কি না। বিমান নিরাপদ দূরত্বে নামা পর্যন্ত তার উপরে নজর রাখার কথা।” ফলে, দু’পক্ষেরই গাফিলতির দিক খতিয়ে দেখছে ডিজিসিএ। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গত ১১ জানুয়ারিও শহরের আকাশে একটি বড়সড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে চলেছিল দু’টি বিমান। জানা গিয়েছে, সে দিন সকালে কাজের ফাঁকেই এটিসি-তে প্রশিক্ষণের কাজ চলছিল। নিয়ম মতো, যে অফিসার প্রশিক্ষণ দেন, তিনি সব সময়ে শিক্ষানবিশদের উপরে নজরও রাখেন। এক এটিসি অফিসারের কথায়, “সে দিন প্রশিক্ষণের সময়ে এক শিক্ষানবিশের উপর থেকে এক মিনিটেরও কম সময়ের জন্য নজর ঘোরাতেই ওই শিক্ষানবিশ এটিসি অফিসার তাঁর সিনিয়রের অনুমতি ছাড়াই একটি বিমানকে ৩০ হাজার ফুট থেকে ৩৩ হাজার ফুট উপরে ওঠার অনুমতি দিয়ে দেন। সেটি উপরে উঠে অন্য একটি বিমানের কাছে চলে আসে। সে ক্ষেত্রেও দু’টি বিমানেই বিপদ-সঙ্কেত এসেছিল। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর মনোহরলাল লাকড়া জানান, কলকাতার এটিসি-তে অফিসারের সংখ্যা তুলনায় কম। এক-এক জনের উপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাচ্ছে।”
ডিজিসিএ সূত্রের খবর, প্রতিটি ঘটনারই আলাদা করে তদন্ত হচ্ছে। |