|
|
|
|
নয়া ভূমিকায় মাঠে ফিরছেন বনি পাল |
সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
ডজ্, ড্রিবলিং, ট্যাকেল করতে এখনও কোনও অসুবিধা হবে না! মাঠে সবুজ গালিচায় বলে পা দিলই শরীরের জং ঝরে যাবে! যদিও সামনে ১৯৯৬ সালের সন্তোষ ট্রফির মণিপুর দলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে লড়াইটা এ বার আরও কঠিন। ফুটবলার বন্দনা পাল থেকে কোচ বন্দনা ওরফে বনি পাল। অন্তত এমনটাই মনে করছেন তিনি।
সে বার তাঁর গোলে মণিপুরকে হারিয়ে বাংলার মহিলা ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এ বার চ্যালেঞ্জটা চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার তৈরির ভার নেওয়া। এ কথাই জানালেন, দীর্ঘ একযুগ অজ্ঞাতবাসে থাকা বাংলার তথা ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের অন্যতম বন্দনা। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃপক্ষ আইএফএ’র সহায়তায় তাদের কোচিং শিবিরের জন্য বনিকে কোচ হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। এক যুগ পর বল পায়ে মাঠে নামতে তাই অধীর হয়ে রয়েছেন বনি-ও। আর সেই প্রতীক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৫ জানুয়ারি তাঁকে সেই দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা। অন্য ভূমিকায় হলেও বল পায়ে তাঁকে ফের মাঠে দেখা যাবে ওই দিন থেকেই। ইতিমধ্যেই তার জীবনের এই লড়াইকে ফ্রেমবন্দি করতে শুরু করে দিয়েছেন একটি সংস্থা।
বাস্তব লড়াইটা কিন্তু অনেক কঠিন বন্দনার কাছে। ১৯৯৮ সালে এশিয়া কাপ ভারতীয় দলের অন্যতম ফুটবলার হিসাবে বাছা হয়েছিল বন্দনাকে। তবে তিনি মেয়ে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ডাক্তারি পরীক্ষায় তাঁর শরীরের মহিলাদের ন্যায় ক্রমোজমের গঠন মেলায় এশিয়া কাপে তাঁর খেলা আটকতে পড়ে। অভিমানে ফুটবল থেকে এক প্রকার সরে দাঁড়ান বন্দনা। ২০০০ সাল থেকেই কলকাতার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোরডাঙার বাড়ি ছেড়েছেন। অজ্ঞাতবাসে কিছু দিন কৃষ্ণনগর এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন গত কয়েক বছর ধরে। ২০০৬ সালে লিঙ্গ পরির্তন করে বন্দনা থেকে হয়েছেন বনি পাল। এর তিন বছর পর বিয়েও করেন কৃষ্ণনগরের মেয়ে স্বাতীকে। মেয়ে পাচারকারী সন্দেহে এক সময় পুলিশ ধরেছিল বন্দনাকে। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার পেতে সাহায্য করেছিলেন স্বাতী-ই। তবে এসব ডামাডোলের মধ্যে বল পায়ে মাঠে নামা আর হয়ে ওঠেনি। ফুটবলের প্রতি অভিমানে চাইতেনও না। তবে কাউকে খেলতে দেখলেই যন্ত্রণাটা তাঁকে কুঁড়ে খেত। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ যখন তাঁকে ফুটবলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেন তা ফেলতে পারেননি। জীবন চালাতে অবশ্য ইতিমধ্যেই তিনি বেছে নিয়েছেন প্রতিমা তৈরির কাজ। সেটা এখনও তার সঙ্গী। মাটিগাড়াতেই তাঁর প্রতিমা তৈরির কারখানা বানিয়েছেন। সেখানে থেকেই গত বছর আত্মপ্রকাশ করেন। এ বার পুজোয় মাটিগাড়ার মায়াদেবী ক্লাবের মণ্ডপ এবং প্রতিমা তৈনিই বানিয়েছেন। এ বার নতুন দায়িত্ব নিয়ে প্রতিমা গড়ার পাশাপাশি ফুটবলার গড়ার কাজও পুরো দস্তুর শুরু করতে চান। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপ রতন ঘোষ জানান, বন্দনা শিলিগুড়িতে রয়েছে জেনেই মনে হয়েছে ওর প্রতিভাকে তাঁরা কাজে লাগাতে পারেন। ওকে সে ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছিলাম। তবে ক্রীড়া পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সব কিছু ঠিক করতে কিছু সময় লাগল। তিনি বলেন, “এ বার আর দেরি নয়। আমাদের ক্রীড়া পরিষদ এবং আইএফএ’র উদ্যোগে অনূর্ধ্ব ১৪ বছরের ছেলেদের যে কোচিং শিবির করা হয় তার দায়িত্ব ওঁর হাতে আমরা তুলে দিচ্ছি। ওকে আমরা সাম্মানিকও দেব।” খুশি বনিও। তিনি বলেন, “কী বলে যে ওঁদের ধন্যবাদ জানাব বুঝতে পারছি না। ঠিক যেন নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছি।” আগে লক্ষ ছিল দলকে জয়ী করার। এ বার? প্রশ্ন শুনে জবাব, “যাদের প্রশিক্ষণ দেব তাদের নিয়ে ক্রীড়া পরিষদের দল তৈরি করব। এই দলকেও সব জায়গায় জয়ী করতে চাই।” |
|
|
|
|
|