|
|
|
|
হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য |
সংবিধানসম্মত নয় জিটিএ, বলল কেন্দ্র |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি তোলার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ধাক্কা খেল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। পাহাড়ে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) সংবিধান বহির্ভূত ভাবে প্রশাসন চালাচ্ছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে জানাল কেন্দ্রীয় সরকার।
এর ফলে জিটিএ এবং জিটিএ নির্বাচন এ সব কিছু নিয়েই সংশয় দেখা দিল। কারণ, সংবিধান সংশোধন করতে গেলে সংসদের দুই কক্ষের অনুমোদন লাগবে। এবং সেই প্রক্রিয়া যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
অতীতের দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের (ডিজিএইচসি) প্রাক্তন প্রধান সুবাস ঘিসিং জিটিএ-র বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানির সময় কেন্দ্রের আইনজীবী সোমনাথ বসু জানান, জিটিএ সংবিধান বহির্ভূত। ওই মামলার শুনানির
দিকে নজর রয়েছে পাহাড়ে সব রাজনৈতিক দলেরই। মেপে পা ফেলতে চাইছে রাজ্যও।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনড়ই থাকছেন মোর্চা নেতৃত্ব। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “ওই মামলার দিকে আমাদের নজর রয়েছে। আমরা বহুদিন থেকেই জিটিএ-র সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে অনুরোধ করছি। রাজ্যের তরফে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এখন স্বীকৃতির প্রক্রিয়া কোথায় থমকে জানি না। যাই-ই হোক, এখন আমাদের নজর তেলেঙ্গানার দিকে। তেলেঙ্গানা আলাদা রাজ্য হলে আমাদের গোর্খাল্যান্ডের দাবিও মানতে হবে।” |
|
বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবিতে পোস্টার। শিলিগুড়ির সুকনায়। —নিজস্ব চিত্র |
পক্ষান্তরে, মোর্চা বিরোধী দল জিএনএলএফ, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ বা সিপিআরএমের প্রশ্ন, সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছাড়াই জিটিএ নির্বাচন কী ভাবে হল? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। এ নিয়ে সরকারের আইনজীবীরাই যা বলার বলবেন। এটুকু বলতে পারি, বিধানসভায় আইন করেই জিটিএ গঠিত হয়েছে। কাজেই একটা আইনি বৈধতা রয়েছে। যাই হোক, পাহাড়ের মানুষের অগ্রগতি ও স্বশাসন নিশ্চিত করতে আমরা দায়বদ্ধ।”
ঘিসিংয়ের করা মামলার আগের শুনানিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত আবেদনকারীদের বক্তব্য শোনেন। সে দিনই তিনি কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চান। আইনজীবী জানান, তিনি কেন্দ্রের মতামত জেনে হাইকোর্টকে অবহিত করবেন। বৃহস্পতিবার সোমনাথবাবু শুনানির সময় জানান, রাজ্য সরকার জিটিএ আইন করলেও তা এখনও সাংবিধানিক ভাবে বৈধ নয়। কারণ, সংবিধানের ২৪৩ ধারায় বলা আছে, রাজ্যের সর্বত্র স্থানীয় প্রশাসন হিসাবে কাজ করবে পুরসভা বা পঞ্চায়েত। বিশেষ কোনও কারণে অন্য সংস্থাকে দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন চালাতে হলে তা সংবিধান সংশোধন করে করতে হবে। এর পরেই সোমনাথবাবু বলেন, “ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে জিটিএ তৈরি হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে তারা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু জিটিএ এখনও সাংবিধানিকভাবে বৈধ নয়।”
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জিজ্ঞাসা করেন, তা হলে কি জিটিএ সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতা ভোগ করছে? সোমনাথবাবু বলেন, “তাই করছে। সংবিধান এখনও সংশোধন হয়নি। পাহাড় নিয়ে এক বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। তখন ডিজিএইচসি স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব পাবে বলা হয়। এখনও তাই রয়েছে। এখন সংবিধান সংশোধন করে জিটিএ-র নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
বিচারপতি জানতে চান, কেন্দ্র তা করছে না কেন?
কেন্দ্রের আইনজীবীর বক্তব্য, “সংবিধান সংশোধন কেন্দ্র করতে পারে না। পারে লোকসভা। নির্বাচিত সাংসদেরা কেন্দ্রের প্রস্তাব সমর্থন করলে তবেই জিটিএ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।” তিনি জানান, রাজ্য সরকারকে খসড়া প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। রাজ্য খসড়া পাঠালে কেন্দ্র খতিয়ে দেখে লোকসভায় পেশ করবে। এর পরে কেন্দ্রের আর কোনও দায়িত্ব নেই। ঘিসিংয়ের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “জিটিএ সংবিধানগত ভাবে অবৈধ, তা আমরা আগে বলেছি। এখন কেন্দ্রও তা বলেছে।” আগামী সপ্তাহে ফের মামলার শুনানি হবে।
বস্তুত, মোর্চার গোড়া থেকেই দ্রুত সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য রাজ্যকে অনুরোধ করেছিল। নানা কারণে কিছুটা দেরি হয় বলে রাজ্য সরকারের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রের খবর, পার্বত্য পরিষদের জায়গায় জিটিএ-র নাম শুধু নয়, আরও বেশ কিছু বিষয় সংশোধন করে প্রস্তাব আকারে রাজ্য পাঠানোর পরে তা পেশ হবে লোকসভায়।
বুধবারই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ২০ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনের কথা ঘোষণা করে মোর্চা। এ বার জিটিএ-র সাংবিধানিক বৈধতা না-থাকার বিষয়টিকে সামনে রেখে পাহাড়ে বিরোধীরা আসরে নামলে কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা ঠিক করতে আজ, শুক্রবার মোর্চা নেতৃত্বের ফের বৈঠকে বসার কথা। মোর্চা পাহাড়ে আন্দোলনে নামলে তরাই-ডুয়ার্সে পাল্টা পথে নামার হুমকি দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। মোদ্দা কথায়, শুধু সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্নে নয়, রাজ্যের মাথাব্যথার আরও কারণ থাকছে। |
|
|
|
|
|