ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনার আঁচ গিয়ে পড়ল কলেজের বাইরেও। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় সিপিএমের দলীয় কর্যালয়ে ভাঙচুর চলল। দলের নিতুড়িয়া জোনাল সম্পাদক গণেশ উপাধ্যায়, কমিটির সদস্য রাজকুমার বাউরি নিগৃহীত হলেন। গুরুতর জখম হলেন এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি গৌরব সিংহ।
গৌরবকে প্রথমে নিতুড়িয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। তাঁর পিঠে চারটি সেলাই পড়েছে। বুকে ব্যথা থাকায় ও কয়েক বার বমি করায় স্ক্যান করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বিকেলে তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সিপিএমের অভিযোগ, স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির নেতৃত্বে মিছিল করে লাঠি, রড নিয়ে হামলা চালান তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। যদিও এ দিন বিকেলে পুলিশের কাছে চার তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও তাতে নাম নেই বিধায়কের। জেলার এক সিপিএম নেতার ব্যাখ্যা, “বিধায়ক হামলার নেতৃত্বে থাকলেও তিনি পার্টি অফিস ভাঙচুর বা মারধর করেননি বলেই তাঁর নাম অভিযোগে রাখা হয়নি।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “পঞ্চকোট কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এসএফআইয়ের কিছু প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করার ঘটনায় হতাশ হয়ে সিপিএম নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এ দিন পথসভা করে। সেখানে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করছিল। পথসভাকে ব্যক্তিগত কুৎসা রটানোর মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করায় আমাদের কর্মীরা প্রতিবাদ করেন। তবে, কাউকে মারধর করা হয়নি।” সিপিএমই নিজেদের কার্যালয় ভাঙচুর করে তাঁদের নাম নিচ্ছে বলে বিধায়কের দাবি। |
আজ, শুক্রবার পুরুলিয়ার সব কলেজেই ছাত্রসংসদ নির্বাচন হবে। নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট কলেজেও প্রার্থী দিয়েছিল এসএফআই। গৌরবের অভিযোগ, “গত বার আমরা এই কলেজে সব আসনে প্রার্থী দিতে না পারায় ছাত্র সংসদ দখল করেছিল টিএমসিপি। এ বার ২৪টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিলাম। কিন্তু, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা গেল, আটটি আসনে আমাদের প্রার্থী নেই। অথচ আমাদের ওই প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, প্রার্থীরাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচন বয়কট করছি।”
এ দিন কলেজের অদূরে সড়বড়ি মোড়ে পথসভা করেছিল এসএফআই। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক কিছুক্ষণের জন্য অবরোধও করে তারা। দুপুরে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সড়বড়ি মোড়েই জোনাল অফিসে বসেছিলেন এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি গৌরব-সহ কয়েক জন। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়কের নেতৃত্বে সেই সময় মিছিল করে এসে তৃণমূলের শতাধিক কর্মী হামলা চালায় জোনাল অফিসে। মাটিতে ফেলে লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয় গৌরবকে। মার খান এসএফআইয়ের নিতুড়িয়া জোনাল সম্পাদক দোলন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে নিগৃহীত হন সিপিএম নেতা গণেশবাবু ও রাজকুমারবাবু। এর পরে তাদের জোনাল অফিসে তৃণমূল ভাঙচুর চালায় বলেও অভিযোগ করেছে সিপিএম। ভাঙচুর করা হয়েছে সিপিএমের এক কর্মীর মোটরবাইকও।
গণেশবাবুর অভিযোগ, “পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে তৃণমূল।” আর গৌরবের দাবি, “ওই আট প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে এ দিন অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনাই করতে চাননি। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়কের চাপে কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্বাচনে আমদের হারানোর ষড়যন্ত্র করছেন। এর প্রতিবাদ করাতেই বিধায়ক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হামলা করিয়েছেন।” কলেজের অধ্যক্ষ সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ওই আট জন প্রার্থী কলেজে এসে নথি দেখিয়ে নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এ দিন এসএফআইয়ের নেতা-কর্মীদের আমরা বলি, ওই আট জনকে নিয়ে এসে অভিযোগ জানাতে। কিন্তু ওঁরা কাউকেই শেষ পর্যন্ত আনতে পারেনি।” বিধি মেনেই নির্বাচন পরিচালনা হচ্ছে বলে দাবি অধ্যক্ষের। ঘটনার কিছু পরেই নিতুড়িয়া তো বটেই রঘুনাথপুর, সাঁতুড়ি থানা থেকেও বাড়তি পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আরও পুলিশ নিয়ে পরে যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পরে এসএফআইয়ের কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ করে টিএমসিপি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন “নিতুড়িয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। আমরা দু’টি মামলা রুজু করেছি। কাউকেই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। তদন্ত চলছে।” |