|
|
|
|
ফাঁকা চেয়ারেই সাঙ্গ আলোচনা |
‘এক্সপোজ’ করা গিয়েছে
হলদিয়াকে, মত শুভেন্দুর
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
|
|
অধিকাংশ ফাঁকা চেয়ার। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসা দর্শক। আর সেই বন্দর, পেট্রোকেম, মিৎসুবিশি, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ)। এই আবর্তে বাঁধা পড়েছে হলদিয়ার শিল্প সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার, বেঙ্গল লিডসের শেষ দিন। ঘটা করেই আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল এইচডিএ। শিরোনাম ‘হলদিয়ার সম্ভাবনা’। প্রেজেন্টশন দিতে হাজির বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান মণীশ জৈন, হলদিয়া পেট্রোকেমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুমন্ত্র চৌধুরী, মিৎসুবিশির এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান ডি পি পাত্র, মার্কেটিং হেড অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং অবশ্যই এইচডিএ-র সিইও পি উলগানাথন।
কী সম্ভাবনার কথা শোনালেন তাঁরা? মণীশ জৈন এবিজি-বিতাড়ন প্রসঙ্গ এড়িয়ে জানান, শালুকখালিতে দ্বিতীয় বন্দর অত্যাধুনিক ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন হলদিয়ায় বছরে ৪০ মিলিয়ন টন পণ্য খালাস করা যায়। নতুন বন্দরে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০ মিলিয়ন টন। কিন্তু কবে চালু হবে ওই বন্দর? মণীশের জবাব, “আশা করছি ২০১৯-২০ সাল নাগাদ।”
হলদিয়া পেট্রোকেমের কর্তা সুমন্ত্রবাবু অবশ্য সংস্থার বিপুল লোকসানের প্রসঙ্গ এড়াতে পারলেন না। বলেই ফেললেন, “রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর থেকেই এইচপিএলকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে রাজ্যের। দরকারে সেটিও বিক্রি করে লভ্যাংশের দিকে যাবে সংস্থা।” হিসেব বলছে, এইচপিএলের বর্তমান লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা। এমন একটি সংস্থার কর্ণধার কী সম্ভাবনার কথা শোনাবেন? সুমন্ত্রবাবু অবশ্য তারই মাঝে প্রস্তাব দিলেন, তাঁদের হাতে থাকা ৬০০ একর জমিতে গড়ে তোলা যেতে পারে অনুসারী শিল্প। কোনও শিল্পগোষ্ঠী চাইলে বিনিয়োগ করতে পারেন।
কিন্তু সে কথা শোনার লোক কোথায়? দর্শকাসনে ছিলেন না কোনও শিল্পপতিই। হলদিয়ার অন্যতম জাপানি শিল্প সংস্থা মিৎসুবিশির এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ডি পি পাত্রও জোর দিলেন অনুসারী শিল্পের উপরেই। জানালেন, তাঁদের সংস্থা হলদিয়ার দু’টি প্রকল্পে ৪০০০ কোটি টাকা লগ্নি করলেও সমস্যা রয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, “দুনিয়া জুড়েই পিটিএ (পিউরিফায়েড টেরিপথ্যালিক অ্যাসিড)-র বাজার নিম্নমুখী। তাই অনুসারী শিল্পে লগ্নিকারীরা আগ্রহী হলে সাহায্য করব।” সংস্থার মার্কেটিং হেড অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, “এইচডিএ এবং বন্দর নিশ্চয়ই অনুসারী শিল্পে সাহায্য করবে।”
শুনে উলগানাথন মুখে বললেন, “আপনাদের সব রকম সাহায্য করব আমরা।” কিন্তু কী ভাবে, স্পষ্ট হল না। কারণ, উলগানাথন তাঁর প্রেজেন্টেশনে তুলে ধরলেন সেই সবেধন নীলমণি ট্রেড সেন্টারের ছবি। রানিচকের গাঁধীনগরে এই সেন্টারের শিলান্যাস হয়েছে মাত্র। ২৫ কোটির প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের শেষে। সেই প্রস্তাবিত প্রকল্পের ছবিই দেখালেন তিনি।
এ সবে আগ্রহ দেখানোর জন্যও বিশেষ কেউ ছিলেন না। ছিলেন শুধু সিঙ্গুরের সেই আগরবাতি সংস্থার মালিক। তিনিও কোনও প্রশ্ন করেননি। শুধু খাম ধরিয়েছেন বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে। আর যাঁরা টাই এঁটে চেয়ার ভরিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় কলকারখানার প্রতিনিধি। কেউ কেউ সঙ্গে আনেন স্ত্রীকেও। তাঁদের অবশ্য মনোযোগ ছিল এসএমএস চালাচালিতে।
এর পরেও হলদিয়ার শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী সাংসদ তথা এইচডিএ-র চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই এখানে আসতে আগ্রহী। এখানে যে শ্রমিক নিয়ে সমস্যা নেই সেটা বোঝানো গিয়েছে।” শুভেন্দুর মতে, “এই মঞ্চ থেকে ‘এক্সপোজ’ করা গিয়েছে হলদিয়াকে।” শুনে সিপিএমের রাজ্য স্তরের এক নেতার টিপ্পনী, “এক্সপোজের আর বাকি আছে কী? হলদিয়া ভাল ‘এক্সপোজার’ পেলে না হয় হত! সত্যি যে চাপা থাকে না।” |
|
|
|
|
|