নিয়ন্ত্রণ কমলো ডিজেলে,
ভর্তুকির সিলিন্ডার বেড়ে ৯
নমোহিনী মিষ্টির মোড়কে অর্থনীতির কড়া দাওয়াই।
সেই পথে হেঁটেই আজ ভর্তুকিতে দেওয়া রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ৯টি করার সিদ্ধান্ত নিল মনমোহন সিংহের সরকার। একই সঙ্গে সংস্কারের পথে হেঁটে তেল সংস্থাগুলিকে ‘অল্প পরিমাণে’ ডিজেলের দাম বাড়ানোর স্বাধীনতাও দেওয়া হল। যা ডিজেলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দেওয়ার পথে কার্যত প্রথম পদক্ষেপ। পেট্রোলের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ডিজেলের দাম অবিলম্বে বাড়তে চলেছে। সরকার চায়, ডিজেলের দাম এক ধাক্কায় বেশি না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে অল্প পরিমাণে বাড়ানো হোক। আজ সন্ধ্যায় তেল কোম্পানিগুলির সঙ্গে বৈঠকে সরকারের তরফে মাসে ৫০ পয়সা করে দাম বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়। সরকারের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই দাম বাড়ল ডিজেলের। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই ডিজেলের দাম লিটারপিছু ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল। ভর্তুকিহীন রান্নার গ্যাসের দামও সিলিন্ডারপিছু ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা হারে বেড়েছে। তবে একই সঙ্গে পেট্রোলের দাম লিটার পিছু ২৫ পয়সা কমিয়েছে তারা। সংস্থার পক্ষ থেকে রাতে এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
রান্নার গ্যাস নিয়ে আজকের সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের ঘাড়ে বাড়তি ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বোঝা চাপবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি জানান, আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু অর্থবর্ষে ছ’টির বদলে ন’টি সিলিন্ডার ভর্তুকি মূল্যে (কলকাতায় ৪১২.৫০ টাকা) পাওয়া যাবে। বর্তমান অর্থবর্ষের শেষ ছয় মাসে (অক্টোবর ২০১২ থেকে মার্চ ২০১৩) পূর্বঘোষিত তিনটির বদলে পাঁচটি সিলিন্ডার ভর্তুকি মূল্যে মিলবে। এর পরে প্রতিটি সিলিন্ডার কিনতে হবে ৯২৫ টাকা দিয়ে।
আগামিকাল থেকে রাজস্থানে শুরু হচ্ছে কংগ্রেসের চিন্তন বৈঠক। তার ঠিক আগের দিন এই সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ভর্তুকিতে দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বছরে ছ’টিতে বেঁধে দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যেই প্রবল আপত্তি উঠেছিল। আজই সিদ্ধান্ত না হলে চিন্তন বৈঠকেও তার ছাপ পড়ত। তবে একই সঙ্গে ডিজেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্তা দেওয়া হল, ইউপিএ সরকার আর্থিক সংস্কারের পথ থেকে সরছে না।
প্রত্যাশিত ভাবেই ডিজেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, ঘুরপথে সরকার ডিজেলের দাম কার্যত নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দিল। সরকারের অবশ্য যুক্তি, একে আংশিক সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্তি বলা যেতে পারে। কারণ ‘অল্প পরিমাণে’ দাম বাড়ানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে সংস্থাগুলিকে। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য ‘অল্প পরিমাণ’ মানে কতটা, তা খোলসা করেননি। যদিও মইলির জবাব, “অল্প মানে অল্পই।”
বিরোধীদের অভিযোগ, ডিজেলের দাম বাড়লেই যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের খরচ বাড়বে। ফলে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে সব জিনিসেরই মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। গরিব চাষিরাও সমস্যায় পড়বেন। সিপিএম সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নামবে বলে জানিয়েছে। দলের পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়েনি। তেল সংস্থাগুলিকে মোটা টাকা লাভ পাইয়ে দিতেই কেন্দ্রীয় সরকার এই পথে হাঁটল।” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “সাধারণ মানুষের উপরে এ ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার বোঝা চাপাচ্ছে।”
গ্যাস-সিলিন্ডার নিয়েও সরকারকে বিঁধেছে বিরোধীরা। ইয়েচুরি বলেন, “যে ভাবে সিলিন্ডারের সংখ্যা কমিয়ে মাত্র তিনটি বাড়ানো হল, তাতে মানুষের সঙ্গে কার্যত প্রতারণা করা হল।” ডিজেলের ক্ষোভ কমাতে সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোকে ‘মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে বিজেপি। তৃণমূলের বক্তব্য, পাঁচ সদস্যের একটি সাধারণ পরিবারে বছরে ১৮ থেকে ২৪টি সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয়। ৯টি সিলিন্ডারে কোনও কাজই হবে না।
সরকারের পাল্টা যুক্তি, ভর্তুকি মূল্যে সিলিন্ডারের দাম ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলেও সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই তা করেনি কেন্দ্র।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তরফে বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে ডিজেলের দাম বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। তেল সংস্থাগুলির ডিজেল প্রতি লিটারে ৯ টাকা ৬০ পয়সা করে ক্ষতি হচ্ছে। ডিজেল-কেরোসিন-রান্নার গ্যাসে দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক ৩৮৪ কোটি টাকা বলে জানিয়ে সরকারের দাবি, শুধু ডিজেলেই বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। মইলির যুক্তি, “এত ক্ষতি মাথায় নিয়ে কোনও সংস্থা টিকে থাকতে পারে না। তেল সংস্থাগুলির অস্তিত্বের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।” সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তার থেকেও বড় কথা হল, অর্থ মন্ত্রক ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির বোঝা বইতে নারাজ। চিদম্বরম এ বারের বাজেটে ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর। কারণ লাগামছাড়া রাজকোষ ঘাটতি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নিচ্ছে মূল্যায়ন সংস্থাগুলি। ডিজেলের দাম ধাপে ধাপে বাড়লে ভর্তুকির বোঝা অনেকটাই কমবে। তবে সে হিসেব না করেই তিনি বাজেটের অঙ্ক কষছেন বলে জানিয়েছেন চিদম্বরম। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের বক্তব্য, পেট্রোল ও ডিজেলের মধ্যে দামের ফারাক বেশি হওয়ায় অনেকেই ডিজেল-চালিত গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকছিলেন। ডিজেল গাড়ির দাম বেশি হলেও জ্বালানিতে সাশ্রয় বেশি। এসইউভি-র মতো বড় আকারের, বেশি দামের গাড়িতেও ডিজেল ব্যবহৃত হয়। ফলে ডিজেলে দেওয়া ভর্তুকি আদতে উচ্চবিত্তদের পকেটে যাচ্ছে। তা ছাড়া ডিজেল গাড়িতে দূষণের মাত্রাও বেশি।
ডিজেল নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। বাজারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন না যে, সরকার লোকসভা নির্বাচনের আগে ডিজেলের দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দেওয়ার সাহস দেখাবে। কেলকর কমিটি অবশ্য তেমনটাই সুপারিশ করেছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.